সানাউল হক নীরু। আশির দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা। ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে ’৯০ সালে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে তার সখ্যের অভিযোগ আনা হয়। এরপর ২০০৬ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজার বিকল্পধারায় যোগ দেন নীরু। নরসিংদী থেকে এমপি প্রার্থীও হন। অবশ্য এর পর থেকে আবার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও দেখা যায় তাকে। দলের হাইকমান্ডও এখন তার প্রতি অনেকটাই ‘ইতিবাচক’। সেই নীরুর ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা চলছে বিএনপিতে। কেউ কেউ বলছেন, নীরুর কথার পেছনে যুক্তি যতটা আছে তার চেয়েও বেশি বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতির কান্ডারি কে হতে পারেন সে জানার আগ্রহ থেকে আলোচনা জমে উঠেছে। আবার কেউ কেউ ভবিষ্যৎ বিএনপিতে গৃহদাহের গন্ধও খুঁজতে শুরু করেছেন।
পাঠকদের জন্য নীরুর আলোচিত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পুরোপুরি তুলে ধরা হলো-
‘‘হাচা নাকি তিতা কথা..??? বিএনপিতে শহীদ জিয়ার উত্তরাধিকারের রাজনীতি কি ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেলো? কর্মচারী বিএনপি বড় নাকি জনাব তারেক রহমান বড়?!! শিমূল কিংবা ফালু এবং কর্মচারী বিএনপি আগামীতে এই দলটির হাল ধরতে শর্মিলাকে চায়, কিন্তু সারা বাংলাদেশের বিএনপির নেতাকর্মীরা জনাব তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানকে চান!! আমিও দ্বিতীয় অপশনটাকে বিএনপির লাস্ট হোপ হিসেবে বিবেচনা করি। জনাব তারেক রহমানের কাছেও আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে- আপনি কি পিতার পদাঙ্ক অনুসরণের রাজনীতি নাকি মায়ের মতো কর্মচারী বিএনপি, কোনটাকে বেছে নিতে চান? তাও দয়া কইরা জানালে অনেক বেশী খুশী হবো!! কেননা আমার মত লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী আজও বিএনপিকে নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও কর্মপরিকল্পনার ছক আঁকছে। অপু, রুম্মন কিংবা বেলায়েত মার্কা বিএনপি করতে চাইলে তাও জানাইয়েন। মাঝে মাঝে আপনার রহস্যজনক আচরণে আমার ভয় হয়, আপনি যাদের সাথে চলছেন এতে বড় জোর মাফিয়া ডন কিংবা দাউদ ইব্রাহিম হতে পারবেন কিন্তু বাংলাদেশের ভবিষ্যত কান্ডারী কিংবা রাজনীতির আইকন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। আমরা আমাদের জীবনের অনেকগুলো দিন, শ্রেষ্ঠ সময় অতিক্রান্ত কিংবা পিছনে ফেলে এসেছি, যেহেতু মানুষ হয়ে জন্মেছি, দেশ কিংবা প্রিয়নেতার সাথে তো বেইমানি করতে পারি না। আমি আপনাদের দুই ভাইকে খুব ভালোবাসি, অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য কোকো আজ আর বেঁচে নেই। আপনার সবকিছু বিবেচনার এখনো সুযোগ আছে, একটু সতর্কভাবে খেয়াল করুন- পার্শ্ববর্তী ভারতের নেহেরু পরিবারের বিদ্বান ও আয়রন লেডি খ্যাত অসম্ভব ডমিনেটিং ক্যারেকটার, বুদ্ধিদীপ্ত নেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব ও সঞ্জয় গান্ধী একজনও আজ বেঁচে নেই। আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। এই পৃথিবীতে কেউ অনিবার্য নয়, তারপরও মানুষের কর্মটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহ তাআলা প্রতিটি উত্তম কাজের জন্য উত্তম প্রতিদান দিবেন। আল্লাহ্ পাক সবচেয়ে বড় এবং হেকমত ওয়ালা। আই মিন গ্র্যান্ড ডিজাইনার। কায়েদে আলী মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের পর পাকিস্তানের আরেক ঐতিহ্যবাহী ও বনেদী পরিবার, সিন্ধুর লারকানার বিখ্যাত জমিদার, প্রভাবশালী নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ভুট্টুর ফাঁসি এবং পর্যায়ক্রমে অক্সফোর্ড পডুয়া নেত্রী যিনি Daughter of the East খ্যাত নেত্রী ও পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও এক গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পর্যবসিত হন। শেষ পর্যন্ত ভুট্টু পরিবারের বাকী দুই সন্তান- ছেলেকে একজন প্যারিসের হোটেলে ও অন্যজনকে নিজদেশে জীবন দিতে হলো এবং সর্বশেষ বেনজীর ভুট্টুর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও শাহাদতের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভুট্টু পরিবার অনেকাংশে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেলো। সুতরাং ভাগ্যে খুব প্রসন্ন হলে, হয় তো আপনি জীবনে আরও একটি সুযোগ পেতে পারেন। একমাত্র জনগণের ভালোবাসাও দোয়ার বরকতে হয়তো আজও টিকে আছেন। বাংলাদেশের জনগণ কেউ জিয়া পরিবারের কর্মচারী নয়, তারা প্রয়াত নেতা ও স্বাধীনতার ঘোষক এক মহান বীর ও রাষ্ট্রনায়ক এবং দেশপ্রেমিক নেতাকে ভালোবাসেন। উনার অসময়ে চলে যাওয়া এক নির্মম হত্যা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে এ দেশের জনগণ মেনে নেয়নি এবং তারা বারবার ভোট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছেন। অথচ বিএনপি রাজনীতির সবচেয়ে সুবিধাভোগী হচ্ছে উড়ে এসে জুড়ে বসা কর্মচারী বিএনপি। এই দেশের জিয়া ও বিএনপির দেশপ্রেমিক জনতার মাহাত্ম জানতে চায়!!! বন্ধুরা সবার মতামত জানতে চাই এবং কর্মচারী বিএনপির পক্ষে দল, দেশ ও রাজনীতি দাঁড়াবে নাকি জনাব তারেক রহমানের পক্ষে? দয়া করে যদি ব্যাপারটা একটু খোলাসা করতেন তাহলে বড়ই কৃতার্থ হতাম। দুঃখের মাঝেও দুটো গানের কলি মনে পড়ে গেলো- হতাম যদি তোতা পাখী তোমায় গান শোনাতাম, হতাম যদি মন ময়ূরী তোমায় নাচ দেখাতাম।
’’ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে রোববার রাতে সানাউল হক নীরুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে তার কাছে যে তথ্য রয়েছে সে তথ্যই তিনি মঙ্গল চেয়ে সবার জন্য মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির সামনে আপাতত কোনো রাজনীতি নেই। খালেদা জিয়াও তার ভবিষ্যৎ কোনো উত্তরাধিকার তৈরি করেননি, কাউকে রাখেননি। নীরু মনে করেন, তারেক রহমান দেশে আসলে জেলে যাবেন। তাছাড়া তার বয়স ৫৩ পেরিয়েছে। তাই জোবাইদা রহমানের উপর সবার আশা আছে বলে মনে করেন নীরু। তিনি বলেন, জোবাইদা রহমানের নেতৃত্বে আসা কোনো আনফেয়ার  না। সে (জোবাইদা রহমান) সেরকম নেগেটিভ কোনো মেজারমেন্ট নাই। ইনফেক্ট, জোবাইদা ছাড়া দেখি না। সাবেক এই ছাত্রনেতার মতে, অনেকেরই জোবাইদাকে ঠেক দিতে চাচ্ছে। যেন অতীতের মতো শুধু কারও নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়া যায় তাই। অবশ্য ফেসবুকে নীরুর স্ট্যাটাসকে কোনো গুরুত্ব দিতে চান না বিএনপির নীতিনির্ধারক অনেকেই। তাদের মতে, ‘এটি একটি ইম্যাচিউরড, ইগনুরেন্ট রাজনীতিবিদের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া। ফেসবুকে যে যেভাবে পারে ফুটবল খেলে।’
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn