জয়া সেনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে দিরাই-শাল্লা আ’লীগ
ভাটিবাংলা খ্যাত সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই-শাল্লা) এখন সুরঞ্জিত পত্নী ড. জয়া সেনকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পর এবার তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তারা। যে কারণে দিরাই-শাল্লা উপ নির্বাচনে জয়া সেনকে দলের মনোনয়ন দেওয়ায় আনন্দে ভাসছে দিরাই-শাল্লা।
ড. জয়া সেন বিজয়ী হলে প্রিয় নেতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে- প্রত্যাশা জনগণের। ফলে উপ নির্বাচনে ড. জয়া সেনের পক্ষে মাঠে নামবেন এ দুই উপজেলার নেতারা।
দিরাই-শাল্লা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গত রোববার রাতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের উপ নির্বাচনে ড. জয়া সেনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
এ ঘোষণার পর থেকেই দিরাই-শাল্লা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। দলের সভানেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এদিন দিরাই পৌরশহরে তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দ মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, দিরাই-শাল্লার সাত বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রামের কন্যা। তাদের আদি নিবাস ছিলো কলকাতায়। প্রথম জীবনে অধ্যাপনাকে বেছে নিয়েছিলেন ড. জয়া।
তিনি ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ব্র্যাক’র শিক্ষাবিভাগের প্রধান ছিলেন। ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি মনসামঙ্গল (পদ্মপুরান) ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ফরিদপুরের কে এম ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ইসলামীয়া কলেজ, গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলেও শিক্ষকতা করেন।
ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে যোগদানের পরের বছর মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি পিতা-মাতার সঙ্গে ভারতের কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাথে পরিচয় হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতাতেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ড. জয়া সেন। সুরঞ্জিত সেন তখন টেকের ঘাটের সাব-সেক্টর কমান্ডার। মাত্র ৬ জন সহযাত্রীকে নিয়ে বর বেশে কলকাতায় যান সুরঞ্জিত। এরপর সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে ফেরেন নববধূ জয়াসেনকে নিয়ে।
এরপর দীর্ঘ ৪৬ বছর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সুখে-দুঃখের অংশীদার ছিলেন জয়া। সুরঞ্জিত সেনের রাজনৈতিক উত্থান, দিরাই-শাল্লায় বারবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সুরঞ্জিতের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতোপ্রোতভাবে তিনি জড়িত ছিলেন।
দীর্ঘ ৪৬ বছরের সংসার জীবনে কেবল দিরাই নয়, ঢাকার জিগাতলার বাসায় প্রতিদিন দিরাই-শাল্লার অসংখ্য মানুষের যাতায়াত ছিলো ড. জয়া সেনের কাছেই। সুরঞ্জিত বাসায় থাকুন বা না থাকুন, দাবি-দাওয়া শুনতে হতো তাকেই।
এ প্রসঙ্গে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দিরাই-শাল্লায় অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। তার প্রয়াণে অনেক উন্নয়ন কাজ থেমে গেছে। ড. জয়া সেনের নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে মারা যান দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এরপর আসন শূন্য হলে উপ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
উপ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে ড. জয়া সেন ছাড়াও মতিউর রহমান, শামসুল ইসলাম, আজিজুস সামাদ ডন, অবনিমোহন দাস, শামসুল হক চৌধুরী, দিপক চৌধুরী দলের মনোনয়ন ফরম কেনেন।
তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী ২ মার্চ, বাছাই ৫ মার্চ ও প্রত্যাহার ১৩ মার্চ। ৩০ মার্চ এ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ আসনের মোট ভোটার ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ২০২ জন