টাকা না দিলে সেবা বন্ধ করে দিন : প্রধানমন্ত্রী
বার্তা ডেস্ক:: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে বিদ্যুতের বকেয়া বিল পেতে দিনের পর দিন ধরনা দিয়ে কাজ না হওয়ায় এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দারস্থ হলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতের বিল বাকি পড়ে আছে। বিল পরিশোধের কথা বলে এলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। অন্যদিকে বিমানের জন্য জ্বালানি তেল কিনে সে টাকা পরিশোধ করছে না বলেও অভিযোগ করেন বিপু। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস থেকে তেল বিক্রি বাবদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা পাবে। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বকেয়া টাকা শোধ করছে না। জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধে গড়িমসি করছে বিমান। এমন বাস্তবতায় কি করণীয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বকেয়া টাকা পেতে আবার নোটিশ দেওয়ার জন্য। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, লাইন না কাটলে বিল দেবে না। ঈদের পরেই সরকারি সংস্থাগুলোকে বিলের জন্য নোটিশ দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। নোটিশ পাওয়ার পর টাকা না দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের লাইন কেটে দিতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক এসব তথ্য জানান।
সভা শেষে গতকাল বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে বিদ্যুতের বিল বাবদ অনেক টাকা আটকে আছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছি। তিনি বলেছেন, বকেয়া টাকা না দিলে লাইন কেটে দিতে। বকেয়া টাকা পেতে এখন তাই করতে হবে। এ ছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখছি না। আমাদেরকে তো চলতে হবে।’ সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, গতকালের এনইসি সভায় বড় একটি আলোচনার অংশ ছিল সরকারের এক সংস্থা আরেক সংস্থার পাওনা টাকা পরিশোধ না করার বিষয়টি। প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে আরেক মন্ত্রণালয়কে পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। তার পরও টাকা দিতে গড়িমসি করে মন্ত্রণালয়গুলো।
গতকালের এনইসি সভায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অভিযোগ করেন, মন্ত্রণালয়গুলো ভূমি কর পরিশোধ করে না। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তিন গুণ ক্ষতিপূরণ পাবে এটা আইনে বলা আছে। আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রণালয়গুলো খাসজমির পরিবর্তে ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণের দিকে বেশি ঝুঁকছে। সভায় আলোচনা হয়, খাসজমি কিনলে সেখানে কমিশন বাণিজ্যের সুযোগ থাকে না। ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করলে সেখানে কমিশন বাণিজ্যের অপার সুযোগ তৈরি হয়। নিয়ম-কানুনের দোহাই দেখিয়ে নামের বানানে ভুল ধরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে নানাভাবে হয়রানি করে তার কাছ থেকে কমিশন খাওয়ার সুযোগ থাকে। এই অবৈধ সুবিধা খাসজমি থেকে মেলে না। তাই মন্ত্রণালয়গুলো এখন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খাসজমির পরিবর্তে ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, ফসলি জমি কিছুতেই নষ্ট করা যাবে না। একান্তই যদি প্রয়োজন না হয়, ফসলি জমি অধিগ্রহণ যাতে না করা হয়, গতকালের সভায় তিনি আবারও এ নির্দেশ দেন। ভূমি উন্নয়নে মন্ত্রণালয়গুলোকে কর দেওয়ার নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকালের সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে বকেয়া টাকা পেতে প্রধানমন্ত্রীর দারস্থ হন। কোন কোন সংস্থা থেকে কত টাকা এনবিআর পাবে, তার একটা হিসাব দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। গতকালের সভায় বকেয়া টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশনা দেন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অহেতুক কারো জমি নেওয়া যাবে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিবছর কত টাকা খরচ হয়, সে হিসাব বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজেটে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তার বাইরে আরো অনেক টাকা খরচ হয় সেখানে। যেটা অনেকে জানে না।
সংবাদ সম্মেলনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রিন হাউজিং প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এরই মধ্যে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। অন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তবে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প নজরদারি সংস্থা যেহেতু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), তাই সঠিক তথ্য বের করার জন্য সেখানে আইএমইডির প্রতিনিধিদল পাঠাব। তারা সেখান থেকে এসে আমাকে প্রতিবেদন দেবে। আমি সে প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীকে দেখাব। মন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন থেমে থাকবে না। দেশের উন্নয়ন চলবে। আমাদের দেশের সব উন্নয়ন ধরে রাখব।’
সুত্র: কালের কণ্ঠ।