বার্তা ডেস্ক:: স্কুল-কলেজ খোলার দাবি করে ছেলে-মেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন কি না, সংসদ সদস্যদের তা বিবেচনা করার আহবান জানিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখবে, কিন্তু এটার জন্য জেনেশুনে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। টিকা দেওয়ার পরে আমরা সব স্কুল খুলে দেব।’ করোনার টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যত লাগে টিকা কিনব। তার জন্য বাজেটে আলাদা টাকা রাখা আছে। বেশি দামে টিকা কিনে তা বিনা মূল্যে জনগণকে দেওয়া হচ্ছে।’

গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় চলমান লকডাউনে দেশবাসীকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানানোর পাশাপাশি সংসদে বিএনপি ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাব দেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে সংসদ অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্পিকার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “উর্দি পরে ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমানের শখ হলো রাজনীতিবিদ হওয়ার। উর্দি পরে ক্ষমতায় এসে রাজনীতিতে নামলেন, সেই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার পকেট থেকে জন্ম নেওয়া দলই হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির অর্থ হলো—বি মানে ‘বাংলাদেশ’, এন মানে ‘না’, পি মানে ‘পাকিস্তান হ্যাঁ’। অর্থাৎ বাংলাদেশ না, পাকিস্তান হ্যাঁ। এই হলো তাদের রাজনীতি, এই হলো বিএনপির গণতন্ত্র। তার পরে এরশাদ সাহেবের আমলে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফল আটকে রেখে আওয়ামী লীগকে হারানো হলো। আসলে জিয়া-খালেদা-এরশাদ সব একই বৃত্তের কয়েকটি ফুল।”

যাদের ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় না, তারাই বেশি কথা বলে : সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে যায়, তাঁরাই কিন্তু তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চান না। তবে যাঁদের ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে না, ইদানীং সবচেয়ে বেশি সোচ্চার তাঁরা! পড়ানোর মতো ছেলে-মেয়ে নেই, তাঁরাই বেশি কথা বলেন। কিন্তু যাঁদের সন্তান যায় তাঁরা তো চাচ্ছেন না।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখবে, কিন্তু এর জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। টিকা দেওয়ার পরে আমরা সব স্কুল খুলে দেব। এর আগে আমরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম তখনই সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ল যে, তার ধাক্কা এসে পড়ল আমাদের ওপর। এখন তো শিশুদেরও করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। লেখাপড়া শিখবে কিন্তু এটার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কি না তা সংসদ উপনেতাকে একটু বিবেচনা করতে বলব।’

দেশের সবাইকে বিনা মূল্যে টিকা দেব : বিশ্বের যে দেশেই করোনার টিকা আবিষ্কার হচ্ছে সেই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত লাগে টিকা কিনব। টিকা আসতে শুরু হয়েছে, কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছি দেশের ৮০ শতাংশ লোককে টিকার আওতায় নিয়ে আসব। বেশি দামে টিকা কিনে তা বিনা মূল্যে জনগণকে দেওয়া হচ্ছে।’

সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, ‘জনগণকে গত ঈদুল ফিতরে বারবার অনুরোধ করলাম আপনারা আপনাদের জায়গা ছেড়ে যাবেন না, কিন্তু অনেকেই তো সে কথা শোনেন নাই, সকলেই ছুটে চলে গেছেন। আর তার ফল কী হলো? সকলে যদি আমাদের কথা শুনতেন তাহলে হয়তো আজ এমনভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ত না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে।’

প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন তাঁদের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। বাজেটেও প্রচুর টাকা রেখেছি। ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে, আরো ১০ হাজার কোটি টাকা আলাদা রাখা আছে রিজার্ভে।’

সংক্রমণ এড়াতে মহামারিকালে সবাইকে এ ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মহামারি প্রতিরোধে সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো মেনে চললে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনার মূল শক্তি ছিল জিয়া : গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যে পরিকল্পনা হয় তার মূল শক্তি ছিল এই জিয়াউর রহমান। জিয়াই ষড়যন্ত্র করে খুনি মোশতাক, কর্নেল, রশিদ ও ফারুককে নিয়ে।’

ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী : ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পবিত্র কোরআনে নাকি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা নেই, এটি সঠিক নয়। আমি বলব অবশ্যই আছে। আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল হতে। তিনি এই শিক্ষা দিয়েছেন। আর ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম, ইসলাম সব ধর্মের মর্যাদা দেয়।’

বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগের যা উন্নয়ন হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। তিনি বলেন, এনেক্স ভবন নির্মাণ করে বিচারক বৃদ্ধি সেটা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। প্রতিটি জেলায় এ পর্যন্ত যত উন্নয়ন সেটা কিন্তু বর্তমান সরকারই করেছে। আমরা করে যাচ্ছি, আর কেউ করে নাই।’

আওয়ামী লীগকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষ থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল। জনগণের অধিকার, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মানুষের বাঁচার অধিকার এবং এই দেশকে স্বাধীন করার পুরো পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠিত। আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক শক্তিশালী ও গভীরে। আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে বলে টিকে থাকতে পারে। আর টিকে থাকতে পারে বলেই দেশের উন্নয়ন হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn