বার্তা ডেস্ক :: ডক্টর বা ব্যারিস্টার কারো নামের অংশ হতে পারে না বলে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আন্তর্জাতিক পাসপোর্টে কখনোই কোন ব্যক্তির নামের অংশ হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা/ডিগ্রি উল্লেখ থাকে না বা অন্যান্য পদবি যেমন প্রকৌশলী, ডাক্তার, কৃষিবিদ, আইনজীবী প্রভৃতি ব্যবহার করার সুযোগ নেই। এর আগে গত ৭ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। ২৫ জুলাই এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। রায়ে, ‘ডক্টর’ গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষার একটি ডিগ্রি এবং ‘ব্যারিস্টার’ পেশাগত বিশেষ একটি কোর্স। হাইকোর্ট বলেছেন, আদেশ বা রায়ে শুধু বিচারকের নাম এবং তিনি কোনো আদালতের বিচারক, তা উল্লেখ থাকাই সংগত এবং বাঞ্ছনীয়। নিম্ন আদালতের বিচারকের নামের আগে অর্জিত ডিগ্রি তার নামের অংশ হিসেবে আদেশ বা রায়ে ব্যবহার করা সমীচীন নয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে সংঘটিত এক হত্যা মামলার আসামি রাষ্ট্রপক্ষের পাঁচজন সাক্ষীকে পুনরায় জেরা করার জন্য আবেদন করেন। এর পর গত ১৩ জুন ওই আবেদন না মঞ্জুর করে (খারিজ) আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান। এই আদেশের বিরুদ্ধে আসামির করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

রায়ে বলা হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও ডিগ্রি লাভ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এ বিষয়টিতে সব মহলের উৎসাহ প্রদান ও ভবিষ্যতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের মধ্যে অধিক সংখ্যক বিচারক যাতে উচ্চতর শিক্ষা ও ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন, সে বিষয়ে সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। রায়ে বলা হয, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারপতির উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি এবং উচ্চ পেশাগত কোর্স সম্পন্নের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা রায় বা আদেশে তাদের নামের আগে ওই সব ডিগ্রি বা কোর্সের বিষয় কখনো উল্লেখ করেন না।

হাইকোর্ট বলেছেন, প্রত্যাশা করা ন্যায্য হবে যে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা স্বীয় বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞা দিয়ে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নামের অংশ হিসেবে উচ্চতর ডিগ্রির ব্যবহার থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন। আন্তর্জাতিক পাসপোর্টে কখনোই নামের অংশ হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা/ডিগ্রি বা অন্যান্য পদবি যেমন প্রকৌশলী, ডাক্তার, কৃষিবিদ, আইনজীবী প্রভৃতি ব্যবহারের সুযোগ নেই। রায়ে বলা হয়, প্রশ্ন উঠতে পারে যে প্রশাসন বা অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ অনেকেই নামের অংশ হিসেবে নামের আগে এসব ডিগ্রি উল্লেখ করে থাকেন, তাহলে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের উচ্চতর ডিগ্রি উল্লেখ ও ব্যবহারে বাধা কোথায়। এ বিষয়ে রায়ে বলা হয়, একজন বিচারককে কখনোই প্রশাসন বা অন্য কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। এতে বিচার বিভাগ ও বিচারকদের স্বকীয়তা ও মহিমাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘আপন শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে অতিরিক্ত প্রত্যয় ব্যক্ত করার’ মানসিকতা থেকেই কারও কারও মধ্যে অর্জিত ডিগ্রি নামের অংশ হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn