ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ৪১ মামলা
পাওনা পরিশোধ না করায় ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ও বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিদায়ী বছর (২০১৭ সালে) ৪১টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে ড. ইউনূসকে জবাব দাখিলের জন্য জারি করা হয়েছে সমন। সমনের জবাব দাখিলের জন্য ২০১৮ সালের শুরু দিকে দিন ধার্য রয়েছে। ৪১ মামলার মধ্যে ৪০ মামলাই ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ও বর্তমান কর্মীরা ঢাকার শ্রম আদালতে দায়ের করেন। পাওনা টাকার জন্য অপর মামলাটি করেন ঢাকার সাভারে মেসার্স তাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক ব্যবসায়ী মো. বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ।
যেসব অভিযোগে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ৪০ মামলা করেন
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণ টেলিফোনে এক-তৃতীয়াংশ শেয়ার রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের। এই প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কর্মীদের মাঝে বণ্টন করে দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমের মুনাফা হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু এই মুনাফার অংশ কর্মীদের পরিশোধ করা হয়নি। গত দশকে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ২১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে পাঁচ শতাংশ অর্থাৎ ১০৮ কোটি টাকা কর্মী ও সরকারকে দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই অর্থের ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান কর্মীদেরকে পরিশোধ ও ১০ শতাংশ সরকার এবং ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ ফান্ডে জমা দিতে হবে।
পাওনা টাকার জন্য ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা
প্রায় সাত কোটি টাকা পাওনা আদায়ের মামলায় গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গত ৩০ মার্চ ঢাকার সাভারে মেসার্স তাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক ব্যবসায়ী মো. বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ বাদী হয়ে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ মো. শাহাদাত হোসেনের আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত এ বিষয়ে জবাব দাখিলের জন্য সমন জারি করেন। মামলার তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জিরাবোতে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট ১৬২ বিঘা জায়গার ওপর ‘ঘোষবাগ’ প্রকল্পে আংশিক জায়গায় বালু ভরাটের জন্য বাদীর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিবাদীদের ৫০ লাখ সিএফটি বালু ভরাটের চুক্তি হয়। বাদীর প্রতিষ্ঠান চুক্তি অনুযায়ী চার কিলোমিটারজুড়ে পাইপ স্থাপন করে ২০১৫ সালের জুন থেকে নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু ভরাট করে। ওই টাকার মধ্যে বিবাদীরা বাদীকে এক কোটি সাত লাখ ৫১ হাজার ৭৮৪ টাকা বিল প্রদান করেন। অবশিষ্ট চার কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার ৪২৬ টাকা পাওনা হলে বাদী তা দেয়ার জন্য চারটি বিল সাবমিট করলেও বিবাদীরা তা দেননি। টাকা না দেয়ায় বালু ভরাট বন্ধ করে দেন তিনি। বাদী তার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য লিগ্যাল নোটিশ দিলেও বিবাদীরা তা দেননি। এতে বাদী চার কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার ৪২৬ টাকার সঙ্গে দুই কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা ডেমারেজ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হাসান, গ্রামীণ টেলিকমের সিএফও ও বোর্ড সেক্রেটারি, ডেপুটি ম্যানেজার মো. মাহমুদ, প্রতিষ্ঠানটির আইনসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এজিএম ও বিভাগীয় প্রধান, প্রতিষ্ঠানটির টেকনিক্যাল বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক, হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মো. আসাদ, বিশ্বজিৎ কুমার, প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভে অ্যান্ড ডিজাইনের মতিয়ার রহমান। উল্লেখ্য, দারিদ্র্য বিমোচনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক সফলতা অর্জন করায় ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পান এই বাংলাদেশি।