ড. মোমেনের সাথে প্রতারণা, চট্টগ্রাম ধরা হলো প্রতারককে
সিলেট:: ঘটনাটি গত জুলাই মাসের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. এ কে আব্দুল মোমেনের ফোনে একটি কল এলো। ওপাশ থেকে চট্টগ্রামের এক সাংসদের পরিচয় দিয়ে বলা হলো, তার এক আত্মীয় সিলেটে হাসপাতালে ভর্তি, জরুরি ভিত্তিতে তার টাকা প্রয়োজন। সাহায্যের আহবানে সাড়া দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ফোন করে টাকার ব্যবস্থা করতে বলেন। ওই নেতা বিকাশের মাধ্যমে দেন ৫৩ হাজার টাকা। এরপর থেকে বন্ধ মিলে চট্টগ্রামের সাংসদ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির নম্বর। হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও মিলেনি এরকম কারো সন্ধান। পরে হয় প্রতারণার মামলা। সেই মামলায় গেল শনিবার চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় আবু তৈয়ব (২৪) নামের এক যুবককে। তাকে সিলেটে এনে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আবু তৈয়ব চট্টগ্রামের বোয়ালখালি থানার উত্তর কনুজুরীর আব্দুল আলিমের ছেলে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই রাত ৯টার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের ফোনে একটি কল আসে। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচয় দিয়ে মোমেনকে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তার (মোস্তাফিজ) এক আত্মীয় সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে তার কিছু টাকার প্রয়োজন। এজন্য আবু তৈয়ব নামের একজনের কাছে টাকা পাঠাতে মোমেনকে অনুরোধ করেন ফোনের ওপাশের ব্যক্তি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই ‘সাংসদকে’ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। মন্ত্রী কামরানকে ফোন করে আবু তৈয়ব নামের একজন যোগাযোগ করবে বলে জানিয়ে রাখেন। পরে আবু তৈয়ব কামরানের কাছে ফোন করে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে কামরানসহ চার আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করা মোট ৫৩ হাজার টাকা পাঠানো হয় বিকাশে।
এর পরে চট্টগ্রামের ‘সাংসদের’ আত্মীয়কে দেখতে হাসপাতালে যান কামরানসহ কয়েকজন। কিন্তু হাসপাতালে এরকম কোন রোগী কিংবা আবু তৈয়বকে পাননি তারা। এমনকি যে নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল, সেটিতে কল দিয়ে বন্ধ পান। পরে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও জানান, তাকে চট্টগ্রামের ওই সাংসদ ফোন করেননি, বিষয়টি প্রতারকচক্রের কাজ। এ ঘটনায় ওসমানী হাসপাতালের নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন গত ১ আগস্ট। পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন জানান, পিবিআই মামলাটির তদন্তভার পায়। প্রযুক্তির সহায়তায় আবু তৈয়বের অবস্থান সনাক্ত করে গত শনিবার চট্টগ্রামের নিউমার্কেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। সিলেটে এনে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতারণায় তার সহযোগী ছিলেন এহসানুল হক হাসান (২৬) নামের আরেকজন। বিকাশের নম্বরটি ছিল তার। তবে গেল আগস্টে তিনি মাদকের একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তাকে প্রতারণায় মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখাতে আবেদন করা হয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তৈয়ব জানিয়েছেন, বিকাশে হাতিয়ে নেওয়া টাকা তিনি আর হাসান মিলে ভাগ করে নেন।’