বার্তা ডেস্ক: চার লেনে উন্নীত হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। এতে সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শকের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩২৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এ খাতের ব্যয় অত্যধিক হিসেবে উল্লেখ করে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। গত ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এই খাতে ব্যয় কমাতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো.নজরুল ইসলাম বলেন, পরামর্শক খাতে ব্যয় আরও বেশি ধরা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আলাপ-আলোচনা করে কিছুটা কমানো হয়েছে। প্রয়োজন আছে বলেই এত টাকা (প্রায় ৩২৫ কোটি) প্রস্তাব করা হয়েছে। এডিবিও অনুরোধ জানিয়েছে যাতে এ খাতে ব্যয় কমানো না হয়। তারপরও পরিকল্পনা কমিশন যদি মনে করে কমানো প্রয়োজন তাহলে কমিয়ে দিতে পারে। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারি কর্মকর্তা যারা অন্য বড় চারলেন প্রকল্পের কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তাদের খুঁজে এনে এসব বড় প্রকল্পে যুক্ত করা উচিত। তাহলে একদিকে তাদের অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগবে, অন্যদিকে এ খাতের ব্যয়ও কমবে। তাছাড়া প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে এত টাকা পরামর্শক ব্যয় কতটুকু কাজে আসবে সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ১৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৫৫০ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ১৩ হাজার ৬১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজ তদারকির জন্য ৩ হাজার ৮৪২ জনমাস পরামর্শক সেবা ক্রয় খাতে ২৭৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৮৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ১৯৪ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের নিরাপত্তা ও অন্যান্য কাজে ৫১৭ জনমাস পরামর্শক সেবার জন্য ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১০ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আইএনজিও সেবা ক্রয়ে ১ হাজার ৯২ জনমাস পরামর্শকের জন্য ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং এনজিও সেবা ক্রয়ের জন্য ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক সেবা ব্যয় অত্যধিক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। এই ধরনের পরামর্শক ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা, ব্যয় প্রাক্কলন ও কার্যপরিধির বিষয়ে পিইসি সভায় জানতে চাওয়া হয়। পিইসি সভায় আরও যেসব বিষয়ে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে, প্রকল্পের আওতায় থোক হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৫ কোটি টাকা, পুনর্বাসনের জন্য ৩৭৪ কোটি টাকা এবং ইউটিলিটি স্থানান্তরের জন্য ১০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু পুনর্বাসনের ব্যয়ের পরিকল্পনা ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাহিদাপত্র ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) যুক্ত করা হয়নি।
প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তিও ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প : সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উক্ত সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের সংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যয় প্রস্তাবের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া রাজস্ব খাতের বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় অত্যধিক বলে জানানো হয়েছে। এ খাতে ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে হ্রাস করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ২০৯ দশমিক ৩২ কিলোমিটার ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া মূল সড়কের উভয় পাশে ধীর গতির যান চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাঁক সরলীকরণসহ অধিক মাত্রায় ট্রাফিক বিবেচনায় ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে যান চলাচল নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, বিমসটেক করিডোর, সার্ক করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্তির মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যাবে।-সূত্র:যুগান্তর
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৬৭ বার