সিদ্দিক আলম দয়াল : পরকীয়ায় মাতাল এক সুন্দরী নারীর কারণে স্ত্রীকে বিয়ের পর থেকেই আটকে রাখতেন ঘরে। নির্জন ঘরে আটকে রেখে অন্য নারীকে নিয়ে দিন-রাত আনন্দ ফুর্তি করতেন। নাইট ডিউটির কথা বলে পরকীয়ায় মত্ত থাকতেন। এসব সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেন সুন্দরী লাবণী। এধরনের ঘটনার বর্ণনা করেন নিহতের পিতা গোবিন্দ চন্দ্র সাহা। ঘটনার পর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করলেও বিচার দাবিতে তোলপাড় শুরু হয় গাইবান্ধায়। মানববন্ধন, বিক্ষোভ, পোস্টারিং সহ বিভিন্ন আন্দোলন অব্যাহত থাকে।কুড়িগ্রাম জেলার বৈরাগীপাড়ার বাসিন্দা দেবাশীষ সাহা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে পাত্রী দেখতে শুরু করেন। বেকার দেবাশীষ সাহা চাকরির জন্য ৩০ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেন ভুরুঙ্গামারী উপজেলার গোবিন্দ সাহার মেয়ে লাবণী সাহাকে।বিয়ের পর পুলিশের এসআই পদে চাকরিতে নিয়োগ পান। এ জন্য শ্বশুরের টাকা ও তদবির কাজে আসে মেয়ে জামাইয়ের চাকরির জন্য। বিয়ের চার মাসের মাথায় এসআই দেবাশীষ স্ত্রী লাবণীকে নিয়ে গাইবান্ধায় আসেন।

গাইবান্ধা থানায় যোগ দেন এসআই হিসেবে। দেবাশীষ থানায় চাকরির সুবাদে গাইবান্ধা শহরের মাস্টারপাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নেন। সেখানে তার স্ত্রী লাবণীকে নিয়ে বাস করেন। ইতিমধ্যে দেবাশীষের পুরাতন প্রেমিকা সুইটি রানী বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয় দেবাশীষের। সুইটি রানী গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়ায় থেকে পড়ালেখা করতেন।সে কারণেই ঘরে সুন্দরী স্ত্রী লাবণী থাকতেও পুরাতন প্রেমিকা সুইটি রানীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্ত্রীকে রেখে থানায় নাইট ডিউটির দোহাই দিয়ে সুইটির বাড়িতে রাত কাটাতেন। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতে থাকেন। বিয়ের মাত্র ৪ মাসের মাথায় লাবণী স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ বুঝতে পারেন।বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। পরকীয়া প্রেম কাহিনী ক্ষান্ত দিতে শ্বশুরের কাছে ৫ লাখ টাকাও নেন। এ নিয়ে মেয়ের সুখের জন্য জামাইকে ৩৫ লাখ টাকা নগদ দিয়েছেন। তারপরও মেয়ের সুখ হয়নি। জামাইকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। স্ত্রীকে ঘরে রেখে পাশের ঘরে প্রেমিকা নিয়ে রাত কাটানোর ঘটনা জানার পর কয়েকবার আত্মহননের চেষ্টা করেন।অল্প সময়ের মধ্যে দেবাশীষের প্রকাশ্যে প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম কাহিনী অনেকের চোখে ধরা পড়ে। পুলিশের এসআই দেবাশীষের  পরকীয়া প্রেমের কাহিনী গাইবান্ধা শহরে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়। লোকের মুখে ও প্রশাসনিক মহলে তার প্রেম কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। লাবণী এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে লাবণীকে বলা হয়- ‘তালাক দে, না হয় তোকে হত্যা করে আমি সুইটিকে বিয়ে করবো।’

স্বামীর এমন ধরনের কথায় আকাশ ভেঙে পড়ে নববধূর মাথায়। সে পুলিশের বড় কর্তা ও আত্মীয়স্বজনদের কাছে স্বামী দেবাশীষের অপকর্মের কথা বলেন। তারা বিষয়টি ম্যানেজ করতে দেবাশীষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে আরো ক্ষুব্ধ হয় দেবাশীষ। দেবাশীষ তার প্রেমিকাকে সহজে কাছে পেতে নিজের স্ত্রীকে এক ঘরে আটকে রেখে সুইটিকে নিয়ে রাত কাটান।রাত-দিন প্রেমিকাকে নিয়ে পাশের ঘরে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকে। প্রতিবাদ করে লাবণী অনেকবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিন চারদিন পর্যন্ত বাজার না করায় লাবণীকে অনাহারে থাকতে হয় ঘরে বন্দি অবস্থায়। তারপর বাড়িতে ফিরে ঘরের তালা খুলে লাবণীর উপর স্বামীর নির্যাতন ও মারপিট ছিল নিয়মিত।এসব ঘটনার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে স্বামীর নির্যাতন ও প্রেমিকার পথ পরিষ্কার করে দিতে লাবণী সাহা গত ১০ই আগস্ট ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। ঘটনার পর দেবাশীষ কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। এব্যাপারে নিহত লাবণী সাহার পিতা গোবিন্দ চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে বোনারপাড়া রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ এসআই দেবাশীষ সহ তার তিন স্বজনকে গ্রেপ্তার করে। বোনারপাড়া রেলওয়ে থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, গাইবান্ধা সদর থানার এসআই দেবাশীষ চন্দ্র তার স্ত্রী লাবণী সাহার আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নির্মল চন্দ্র সাহা, আলো রানী সাহা, প্রীতিলতা সাহা, তপন কুমার সাহা সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গাইবান্ধা মহিলা পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ও শহরে পোস্টার লাগায়। এমজমিন

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn