তাহিরপুরের মাহারাম নদীতে উড়াল সেতু নির্মানের যাচাই বাচাই কার্যক্রম চললে
দেশের উত্তর-পূর্ব দিগন্তের হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলায় রয়েছে প্রাচীন বাংলার রাজধানী লাউড়,রূপের নদী যাদুকাটা, সবুজের সমারোহেসিক্ত আর উচু-নিচু পাহাড়ে চোখজুরানো বারেক টিলা,হাজী জয়নাল আবেদীনের গড়া দৃষ্টিনন্দন শিমুল বাগান, রয়েছে টেকেরঘাট মুক্তিযোদ্ধা উপত্যকা,শহীদ সিরাজ লেক,সীমান্ত জির পয়েন্ট এবং টাংগুয়ার হাওর। এসবকে কেন্দ্র করে মাহরাম নদীতে উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে) নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষা শুরু করেছে এবং সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্প গ্রহণ ও প্রাক্কলন করে পাঠাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। স্থানীয় সূত্রে জানাযায়,মাহরাম নদীতে সেতু বা সড়ক যাতায়াত ব্যবস্থা না হলে সীমান্তের সৌন্দর্য্য বিকাশ বা পর্যটন শিল্পের কোনো উন্নতি হবে না। যাদুকাটা নদী উপর বিন্নাকুলি এলাকায় নির্মিত সেতুটি পুরো সীমান্তকে যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনতে ব্যর্থ হবে বলে মনে করেন স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগন। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল আহমেদ স¤প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে মাহরাম নদীতে ৩০০মিটার এলাকায় উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গত বুধবার(১৭জুলাই) থেকে কাজ শুরু করেছে সমীক্ষা দল। চলতি বছরই মাহরাম নদীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন লাভ করবে। এটি বাস্থবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হবে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ লাভ করবে এবং দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে আকর্ষণ বাড়বে। সেই সাথে যাদুকাটা নদীতে নির্মিতব্য শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মহাপ্রভু সেতুর সুফল ভোগ করতে পারবে পুরো সীমান্তবাসী। বিশেষ করে টাংগুয়ার হাওর ও ট্যাকেরঘাট খনি প্রকল্পের সৌন্দর্য্য ভোগান্তি ছাড়াই সড়কপথে সহজে উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,২০১০সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাহিরপুরে কৃষক সমাবেশে টাংগুয়ার হাওর,যাদুকাটা নদী,বড়গোপটিলা,লাউড়েরগড়,শাহ আরেফিন মাজার,টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্দেশনার পর কিছুদিন চিঠি চালাচালি হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ঢিমেতালে চলছিল কাজটি। তবে তিন বছর আগে পর্যটন করপোরেশন টাংগুয়ার হাওর ও বড়গোপ টিলায় ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করেছে। পর্যটন শিল্প বিকাশ ও সীমান্তে সড়ক যোগাযোগ বিস্তৃতির লক্ষ্যেই চলতি বছর যাদুকাটা নদীতে প্রায় ৮০কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগের ৭৫০মিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ কাজ উদ্বোধন হয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুটির একটি পিলারের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। আরো ১৪টি পিলারের কাজ পানি কমলে শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। আগামী ২বছরের মধ্যেই সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। উত্তর বড়দল ইউনিয়নের আ,লীগ নেতা মাসুক মিয়া,জুমুর কৃষ্ণ তালুকদার,বাদাঘাট ইউনিয়নের আ,লীগ নেতা সেলিম হায়দার,ব্যবসায়ী রাশিদ ভূঁইয়া,সুমন হায়দার,রাহাদ হায়দারসহ ও স্থানীয় সচেতন এলাকাবাসী জানান,পর্যটন স্পটগুলোও পড়েছে সীমান্তে। এই এলাকার পর্যটন সম্ভাবনা ও যোগাযোগ সুগমের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মাহরাম নদীতে এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন শুনে ভাল লাগছে। এছাড়াও বিন্নাকুলি এলাকায় যাদুকাটা নদীতে সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য মহা আনন্দের। মাহরাম নদীতে সড়ক বা সেতু না হলে যাদুকাটা নদীর সুফল ভোগ করতে পারবে না তাহিরপুর সীমান্তের লোকজন। মাহরাম নদীতে যোগাযোগের জন্য কোন স্থাপনা না থাকলে পুরো সীমান্তের মানুষ সরাসরি যোগাযোগের আওতায় আসবে না। যে কারণে ওই অঞ্চলের পর্যটনের বিকাশও ঘটবে না। তাই মাহরাম নদীতে উড়াল সড়ক নির্মাণ অবশ্যই জরুরী।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন,তাহিরপুর উপজেলা জেলার ১১টি উপজেলার সকল পর্যটনকে একাই ব্র্যান্ডিং করে। বিন্নাকুলিতে যে সেতু হচ্ছে তা একটি দিকে হওয়ায় অন্য দিক মাহারাম নদী পারাপারে কোন ব্যবস্থা নেই। সবাই কে নদী পারাপারে কষ্ট করতে হবে। যার ফলে সীমান্ত এলাকা গুলোকে সরাসরি যোগাযোগের আওতায় আনতে হলে মাহরাম নদীতে এলিভেটেড সড়ক নির্মিত হলে যোগাযোগ সহজ হবে এবং দৃষ্টিনন্দন পর্যটন অবকাঠামো হিসেবে আকর্ষণ বাড়াবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল আহমেদ বলেন,শীঘ্রই ওই এলাকার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি প্রকল্প হিসেবে পর্যটন শিল্প বিকাশের কথা মাথায় রেখে এখানে বিশেষ সড়ক তৈরী করা হবে। সে অনুযায়ী মাহরাম নদীতে ৩০০মিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ চলছে। তাছাড়া যাদুকাটা নদীর উপর বিন্নাকুলিতে সেতুর কাজও এগিয়ে চলছে। এই সেতুর সম্পূন হলে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তের সকল পর্যটন স্পটগুলো সহজলভ্য যোগাযোগের কারণে পর্যটকদের মধ্যে আকর্ষণ তৈরি করবে।