এম.এ রাজ্জাক, তাহিরপুর -করোনা আর সম্প্রতি বন্যার প্রভাবে তাহিরপুর সীমান্তবর্তী মানুষ সহ হাওর এলাকার লোকজনের মধ্যে অভাব দেখা দিয়েছে। এ উপজেলার বড়ছড়া, ছাড়াগাঁও, বাগলী কয়লা শুল্কস্টেশন, যাদুকাটা নদীতে বালি পাথর ও ভাসমান কয়লা উত্তোলন সহ শ্রমিকদের কাজের স্পটগুলো বিভিন্ন আইনি জটিলতায় মাসের পর মাস বন্ধ থাকায় এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাতের অভাব।  একদিকে ভাতের অভাব, অন্যদিকে সুদের চাপ। ফলে দিশেহারা হয়ে এলাকার অধিকাংশ মানুষ কাজের সন্ধানে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছেন শহরের দিকে। করোনার কারণে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও ছুটছেন তাদের সঙ্গে। এলাকায় কাজ নেই, করোনার কারণে শহরেও কাজ সীমিত। এমন তথ্য পাওয়া গেছে সদ্য শহরে যাওয়া ও ঢাকা ফেরত কয়েকজন খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে।

জানা গেছে, তাহিরপুর সীমান্তবর্তী সহ হাওর এলাকায় সরকারি ভাবে ওএমএস, ভিজিডি কার্ড করোনা কালীন সহায়তা কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। করোনা আর বন্যার প্রভাবে এ উপজেলায় দেখা দিয়েছে ভাতের অভাব। তার ওপর রয়েছে এনজিও আর মহাজনি সুদের চাপ। বিভিন্ন এনজিও ঋণ আর সুদের চাপে অনেক পরিবার এখন গ্রাম ছেড়ে শহরে। উপজেলার কয়েকটি গ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া সদস্যরা জানান, তাদের ওপর ঋণের চাপ। কাজ না করলে ঋণ পরিশোধ করবো কি ভাবে। কাজের সন্ধানে তারা বাধ্য হয়েই শহরে যাচ্ছেন।  শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বানিয়াগাঁও গ্রামের সুজন মিয়া নামে একজন জানান, প্রতিদিন মহনগঞ্জ ও কমলা কান্দার ট্রলার দিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকা শহরে যাচ্ছেন গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ। কেউ যাচ্ছেন গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন কল কারখানায় কাজ করতে, আবার কেউ যাচ্ছেন চাকুরির আশায়। কিন্তু বর্তমানে শহরে কাজের তুলনায় শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী।
ইসলাম উদ্দিন নামে এক যুবক জানান, সুনামগঞ্জ বা তাহিরপুরে যদি কোন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠতো তাহলে এখানকার শ্রমিক সহ মানুষজন ঢাকা শহরে কাজের জন্য যেত না।বালিয়াঘাট গ্রামের সুফিয়া নামে এক নারী জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে মরণ ছাড়া কোন পথ নাই। বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে এখন মহাবিপদে আছি। এনজিও লোন কোন ভাবেই সোধ করতে পারছিনা। তাই বাধ্য হয়েই স্বামী সন্তান নিয়ে ঢাকা শহরে কাজের জন্য গেছি। শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন, করোনা আর বিভিন্ন আইনি জটিলতায় তাহিরপুর সীমান্তের কয়লা শুল্কষ্টেশন গুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সীমান্ত এলাকাসহ উপজেলার নদী গুলোতে বালি, পাথর, ওপার থেকে ভেসে আসা মরা পাথর ও কয়লা খেটে খাওয়া মানুষজন উত্তোলন করতে না পারায় অনেকেই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে শহরের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, করোনার প্রভাবে কয়লা শুল্ক স্টেশনগুলো সহ যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। উপজেলায় বিকল্প কর্মসং¯’ান না থাকায় কাজের সন্ধানে নানান দিকে ছুটাছুটি করছে নিম্নআয়ের মানুষ। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, গত শনিবার সরেজমিন যাদুকাটা নদী এবং টেকেরঘাট এলাকায় পরিদর্শন করে এখানকার শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি। আমরা হাওর এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছি।  তিনি বলেন, সীমান্ত নদী যাদুকাটায় বালু পাথর উত্তোলনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নদীর পাড় কেটে, পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে, ইঞ্জিন চালিত মেশিন চালিয়ে বালু উত্তোল করা যাবে না। তবে নদী থেকে হাত বা ঠেলা জাল দিয়ে কয়লা, লাকড়ি সংগ্রহ করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn