এম.এ রাজ্জাক :: তাহিরপুরে মুক্তিযুদ্ধে ৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থলে নেই কোন সমাধি ফলক। অযত্ন অবহেলায় স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও সমাধিগুলো সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে ।  সাইনবোর্ড আর স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে ৮ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল।   স্বাধীনতাযুদ্ধে সুনামগঞ্জ জেলা (তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমা) ছিল সেক্টর-৫ এর অন্তর্গত। এ সেক্টরের অন্তর্গত সাব-সেক্টর ট্যাকেরঘাটের অধীনে যুদ্ধাবস্থায় নাম না জানা অনেক মুক্তিসেনা শহীদ হন।  শহীদ হওয়া এসব মুক্তিসেনার তথ্য কৌশলগত কারনেই গোপন রাখা হতো যেন সহযোদ্ধারা এ খবর জেনে যুদ্ধক্ষেত্রে মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া নাম না জানা এমন ৮জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বড়ছড়ায়। বড়ছড়া কবরস্থানে সমাহিত এ ৮জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি ছাড়া সাধারণেরও কবর রয়েছে এখানে।

জানা যায়, স্থানীয়দের তথ্যানুসারে সাবেক জেলা প্রশাসক মো. জাফর সিদ্দিক (২০০৩-০৬) বড়ছড়ায় সমাহিত স্বাধীনতা যুদ্ধে নাম না জানা ৮জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি পরিদর্শন করে রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারাও বিভিন্ন সময়ে এ সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন। এর ধারাবাহিকতায় বড়ছড়া কবরস্থানে সমাহিত এ সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল নির্বাচনে ৮টি সিমেন্টের খুটি দিয়ে বেষ্টনী করে দেয়া হয়। একটি সাইনবোর্ডও টানানো হয়। সম্প্রতি এ ৮জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বড়ছড়া কবরস্থানের ভেতরে ৮জন নাম না জানা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি ৮টি সিমেন্টর খুটি দিয়ে যে বেষ্টনী দিয়ে রাখা হয়েছিল এর মধ্যে ৫টি খুটি চোখে পড়েছে। আর সমাধিস্থলে ৮জন শহীদের একটি সমাধি নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে বাকি ৭টি সমাধি সমতল ভূমি আর গর্তে পরিণত হওয়ায় নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। স্মৃতিফলক না থাকায় দেখে বুঝার উপায় নেই এখানে ৮জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি আছে।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়ছড়া বাজারের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এ কবরস্থানে নাম না জানা ৮জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার যে সমাধি রয়েছে এ কেবল সাইনবোর্ড দেখে বুঝা যায় কিন্তু সমাধিস্থলে সমাধি ফলক না থাকায় দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের পক্ষেও বুঝা কঠিন হয়ে পড়বে।

সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রৌজ আলী বলেন, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমালে সাবেক জেলা প্রশাসক মো. জাফর সিদ্দিক, তৎকালীন মূখ্য সচিবসহ আরো অনেকে এ সমাধিস্থল পরিদর্শন করে গেছেন। একটি সাইনবোর্ড আর স্মৃতিস্তম্ভের ছাড়া নাম না জানা ৮জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের যে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে তা একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের অনেক ব্যথিত করে তোলে। জরুরি ভিত্তিতে সমাধি নির্বাচন ও সমাধি ফলক স্থাপন করে শহীদের সমাধিগুলো বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বড়ছড়া কবরস্থানে নাম না জানা ৮জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থলে সাইনবোর্ড টানানো আছে এবং তাঁদের স্মৃতি স্মরণার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভও নির্মাণ করা হয়েছে। সমাধি নির্বাচন ও ফলক স্থাপনের কাজটি করা জরুরি। দ্রুতই সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn