এম.এ রাজ্জাক:: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তবর্তী এলাকাসহ উপজেলায় এবার শীতকালীন সবজির ফলন ভাল হলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত। শীত মৌসুমে একদিকে যেমন বিভিন্ন ফুল ফোটে, অন্যদিকে সবজিতে ভরে উঠে কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনা সহ ফসলি ক্ষেত। বাড়ির আঙ্গিনা ও ফসলি ক্ষেতের মাচায় ঝুলে থাকতে দেখা গেছে লাউ, শিম, পটল, ঝিঙা, শসা ও করলা। জমিতে ফুটে উঠেছে টমেটো, বেগুন, কপি, লালশাকসহ নানা রকম সবজি। তবে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে সবজি চাষিরা নিজেদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ।
উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার চাষীরা বর্তমানে শীতকালীন সবজি স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাজারগুলোতেও দেখা মিলছে বিভিন্ন রকমের শীতকালীন সবজি। শীতের শুরুতে আগাম সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকলেও বর্তমানে দাম খুবই কম। অন্যান্য বছর শীতকালীন সবজির চাষ করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখলেও এবছর অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু কৃষক ক্ষতির মুখেও পড়েছেন। ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা এবং উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় এখানকার কৃষকরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাদের উৎপাদিত সবজির বাজার সম্প্রসারিত করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে নিজেদের উৎপাদিত সবজি নিকটস্থ হাট-বাজারই কম দামে বিক্রি করছেন ।
উপজেলার বালিয়াঘাট বাজারে সবজি কিনতে আসা বানিয়াগাঁ গ্রামের মো. সুজন মিয়া বলেন, সারা বছরের মধ্যে শীতকালে টাটকা সবজি মেলে। প্রথমদিকে সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকলেও এখন কম। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কৃষকদের অনেকেই এ হাটে না এসে স্থানীয়ভাবেই সবজি বিক্রি করে থাকে। যার কারণে চাহিদামতো সবসময় সবজি মেলেনা। তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের জামালগড় গ্রামের কৃষক আফসার উদ্দিন বলেন, অসময়ে বৃষ্টির কারনে প্রথমদিকে বীজতলার ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় ভাল ফলন হয়েছে। তবে জেলাসদর এবং উপজেলার অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা যদি ভাল থাকলে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারতো ।
বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলী গ্রামের কৃষক রমজান আলী জানান, শীতকালে মূলত তিনি লাউ আর বেগুন চাষ করেন। ২-৩ মাসের মধ্যে ফলন পান। স্থানীয় বাজারে এসব সবজি বিক্রি করেন। বড়দল উত্তর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের কৃষক রহিম সুবহান বলেন, কৃষি করে এর মাধ্যমে উপার্জিত টাকায়ই আমার সংসার চলে, ২ মেয়ে আর ১ ছেলের পড়ালেখার খরচও এটা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি। রাস্তাঘাট ভালো হলে ইচ্ছে মতো যেকোনো বাজারে গিয়ে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে পারতাম। রাস্তাঘাট ভাল না হওয়ায় দূরের বাজারগুলো সবজি নিয়ে বিক্রি করা সম্ভব হয়না।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এ মৌসুমে উপজেলায় শীতকালীন সবজি আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫২৬ হেক্টর জমিতে, আবাদ হয়েছে ১৫৮০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ হেক্টর বেশি। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসান-উদ-দৌলা বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শীতকালীন সবজির ফলন ভাল পেয়েছে। এ চাষ সফল করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ৩’শ কৃষককে ১২ জাতের বীজ এবং নগদ ১৯৩৮ টাকা এছাড়াও আরও ১’শ কৃষকের মধ্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৬৯ বার