তাহিরপুর সীমান্তে কোটি টাকার চুনাপাথর পাচাঁর নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি
ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের চুনাপাথর পাচাঁরের টার্গেট নিয়ে চোরাচালানীরা দিনরাত বৃষ্ঠিতে ভিজে কাজ করছে। গত দুই সপ্তাহ যাবত চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত সীমানার ১১৯৪এর ৪এস পিলার সংলগ্ন জঙ্গলবাড়ি গ্রামের পূর্বপাড়া হতে ১১৯৫নং মেইন পিলার হয়ে মাইজহাটি,কলাগাঁওসহ চারাগাঁও এলসি পয়েন্টের পশ্চিম দিকে অবস্থিত ১১৯৫এর ২এস পিলার পর্যন্ত প্রায় ১কিলোমিটার জায়গা দিয়ে চোরাচালানীরা শতশত শ্রমিকদেরকে নিয়ে ওপেন ভারতের ভিতরে প্রবেশ করে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হেমার,শাফলসহ দেশীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে ও ককটেল ফাঠিয়ে অবাধে চুনাপাথর ভেঙ্গে বাংলাদেশের সীমানার জিরো পয়েন্টে নিয়ে মজুদ করছে। আর দুই-তিন দিনের মধ্যে সেই চুনাপাথর ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নদীপথে দেশে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হবে বলে জানাগেছে। সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে হাজার হাজার মেঃটন চুনাপাথর পাচাঁর করলেও এব্যাপারে কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিজিবি।
এলাকাবাসী জানায়,উপজেলার উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে আইনাল মিয়া,একই গ্রামের মৃত আছাদ্দর মিয়ার ছেলে তোতা মিয়া ও বালিয়াঘাট গ্রামের রাশিদ মিয়ার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক এলাকার অসহায় দিনমজুর ও শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভারত থেকে হাজার হাজার মেঃটন চুনাপাথর ভেঙে ট্রলি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এনে মজুদ করে রাখে। পরবর্তীতে সেই চুনাপাথর চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন সমসার হাওরের পাড়ে নিয়ে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে পাটলাই ও রক্তি নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠায়। পাচাঁরকৃত প্রতিট্রলি চুনাপাথর থেকে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের ম্যাচ(খাওয়া-দাওয়া) খরছ বাবদ ১০০টাকা,ক্যাম্পে কর্মরত দুই কমান্ডার ও এফএস এর নামে ৫০টাকা,থানা-পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে ৭০টাকা,স্থানীয় দুই আওয়ামীলীগ নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে ১০০টাকা,স্থানীয় ইউপি মেম্মার হাছান আলীর নামে ৫০টাকা,জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সংবাদকর্মীদের নাম ভাঙ্গিয়ে ১০০টাকা,চোরাচালানীদের গডফাদার আব্দুর রাজ্জাকের নামে ৩০টাকা ও সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়কের নাম ভাঙ্গিয়ে ৫০টাকাসহ মোট ৫৫০টাকা চাঁদা উত্তোলন করে বিজিবি ও পুলিশে’র সোর্স পরিচয় দিয়ে আইনাল মিয়া ও তোতা মিয়া। চোরাচালান ও চাঁদাবাজির খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ থেকে ডিবি পুলিশ গিয়ে মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে চুনাপাথর ও ট্রলি আটক করলেও বিজিবি এব্যাপারে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে বিজিবি’র সোর্স পরিচয়ধারী তোতা মিয়া বলেন,আমি যা করি তা আইনাল মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকে নির্দেশে করি,এব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। ইউপি মেম্বার হাছান আলী বলেন,চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে আসা চুনাপাথরসহ অবৈধ মালামাল থেকে আমি চাঁদা নেই না,আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ চাঁদা নিয়ে আমার মান-সম্মান নষ্ট করলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন,আব্দুর রাজ্জাক ও আইনাল মিয়া বিজিবি,পুলিশ ও সাংবাদিকসহ আমাদের নেতাকর্মীদের নাম ভাঙ্গিয়ে পাচাঁরকৃত চুনাপাথর থেকে লক্ষলক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করে অথচ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদাল দুলাল বলেন,তোতা মিয়া আমাদের সোর্স না,তাছাড়া রাজনৈতিক চাপের কারণে সব কিছু বন্ধ আপাদত ভারত থেকে চুনাপাথর পাচাঁর করার সুযোগ নেই। সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মাহবুবুল আলম বলেন,চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে চুনাপাথর পাচাঁরের তথ্য পেয়েছি এবং আমার নাম ভাঙ্গিয়ে যারা চাঁদা নিচ্ছে তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।