থেরেসা মে’র প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা নিয়ে সংশয়
ছবি:থেরেসা মে
বড় রকমের বাজি ধরেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এই মুহূর্তে নির্বাচনের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির চেয়েও তার দল কনজারভেটিভ পার্টি স্পষ্ট ব্যবধানেই এগিয়ে ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বীর দুর্দিনে তাকে আরও মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার যে ‘চক্রান্ত’ থেরেসা মে করেছিলেন, সম্ভবত সে চক্রান্তে ফেঁসে যাচ্ছেন নিজেই! যদিও নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে নিজের ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ করাই এ নির্বাচনের উদ্দেশ্য। নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জিতবেন, সে আত্মবিশ্বাস ছিল তার। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই হাওয়া বদল হতে শুরু করে। কনজারভেটিভদের সাথে লেবার পার্টির ব্যবধান কমতে কমতে একসময় জরিপে উভয় দলের সম্ভাবনাই সমান হয়ে যায়। ভোটের ফলাফল ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ৬১৬টি আসনের ফল জানা গেছে। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ২৯৯ আসন। লেবার পার্টি পেয়েছে ২৫২ আসন। এসএনপি ৩৪ আসন। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা লিবডেম পেয়েছে ১০ আসন। অন্যান্য দল পেয়েছে ২১ আসন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমনসের মোট আসন ৬৫০টি। কোনো দল এককভাবে ৩২৬টি আসন পেলেই মিলবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তবে বিবিসি তাদের পূর্বাভাসে বলছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসন পাচ্ছে না কনজারভেটিভরা। বিবিসি বলছে, দলটি সর্বোচ্চ ৩২২টি আসন পেতে পারে। অর্থাৎ মাত্র ৪ আসনের জন্য সংসদে একক সংক্যাগরিষ্ঠতা হারাতে যাচ্ছে তারা। যদিও দল হিসেবে তারাই সংসদে সবচেয়ে বড় দলের স্বীকৃতি পাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী পদে থেরেসা মে’র ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। ফলাফল আসতে শুরু হওয়ার পর থেরেসা মে তার উপদেষ্টাদের নিয়ে কনজারভেটিভ সদর দপ্তরে আলোচনায় বসেছেন। সাবেক একজন মন্ত্রী অ্যানা সব্রি বলেছেন, ‘তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এখন ভাবা উচিত।’ রাজনীতির ভাষায় এটা পদত্যাগের আহবান। অরেকজন শীর্ষস্থানীয় এমপিকে উদ্বৃত করে বিবিসি বলেছে, ‘তিনি কীভাবে এরপরও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন, তা বুঝতে পারছি না।’ এমনকি অন্য আরেকজন মন্ত্রী বিবিসিকে জানিয়েছেন, ১০ জুন শনিবারের মধ্যে থেরেমা মে’র পদত্যাগের সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ।
বিবিসি লিখেছে, থেরেসা মে ভেবেছিলেন এখন মধ্যবর্তী নির্বাচন ডাকলে টোরিরা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরও বাড়াতে পারবে। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী কনজারভেটিভ পার্টি হয়ত অন্য দলের সাহায্য নিয়ে সরকার গঠন করতেও পারে কিন্তু থেরেসা নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার ‘শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল’ ভাবমূর্তি ধুলায় লুটিয়েছে। বিবিসির রাজনীতি বিষয়ক সম্পাদক বলছেন মেয়াদ শেষ হবার আগে এই নির্বাচন ডাকা ছিল বর্তমান সময়ের অন্যতম সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল।
এর আগে, থেরেসা মে’র পূর্বসুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকার প্রশ্নে গণভোট দিয়ে জুয়া খেলেছিলেন, যে গণভোট দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা তার ছিল না। ওই গণভোটের প্রেক্ষাপটে ক্যামেরনকে অকালে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করতে হয়েছিল। এবারও নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্বেও আগম নির্বাচন দিয়ে জুয়া খেললেন থেরেসা মে। এদিকে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে থেরেসা মে’র সাথে পতিদ্বন্দ্বিতাকারী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন নিজের আসনে জেতার পর বলেছেন জনগণ ব্যয়সঙ্কোচনের রাজনীতি প্রত্যাখান করেছে এবং থেরেসা মের পদত্যাগ করা উচিত। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমনসের মোট আসন ৬৫০টি। কোনো দল এককভাবে ৩২৬টি আসন পেলেই মিলবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তবে এর কম আসন পেলে তখন জোট সরকার গঠন করতে হবে। কনজারভেটিভদের যেহেতু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে, তাহলে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেরেসা মে’র ভবিষ্যতও সন্দিহান বলে মন্তব্য করেছে বিবিসি।