দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপজেলার আট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা বর্জন করেছেন। বৃহস্প্রতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় উপজেলার পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের সভাপতিত্বে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবিরের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা শুরু হয়। একপর্যায়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম তার নিজের ভ্রমণ ভাতা বিল অনুমোদনের প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদ মিয়া।
এসময় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ মিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘ দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদে বা অন্য কোন পরিষদে কোনদিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে পরিদর্শন করিতে দেখি নাই। কিন্তু তিনি ভুয়া বিল তৈরী করে ভ্রমন ভাতার নামে টাকা উত্তোলন করছেন। এটা অনিয়ম, এটাই দুর্নীতি। এসময় সভায় উপস্থিত অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, এডিপির বরাদ্দ থেকে নিজের বাড়ীর রাস্তা নির্মাণ, নিজ বাগান বাড়ীতে পর পর দুই বার এডিপির বরাদ্দের টাকা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ, ঢেউটিন ক্রয় সংক্রান্তে দুর্নীতি ও ঢেউটিন বিতরণে স্বজনপ্রীতি, একক সিদ্ধান্তে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করাসহ সরকারের উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদানের বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন।
সমন্বয় সভায় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হক তার বক্তব্যে বলেন, ‘ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঢেউটিন ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত না করে একক সিদ্ধান্তে ঢেউটিন ক্রয় করছেন। কোন দিন সিদ্ধান্ত পাশ হয়, কোথায় বিতরণ করেছেন, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানি না। আমাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করে বিল পাশ করবেন, এটা কি মানা যায় ? এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হককে উদ্দেশ্যে করে উচ্চ স্বরে কথা বললে প্রতিউত্তরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে আঙ্গুল নামিয়ে কথা বলার অনুরোধ করেন চেয়ারম্যান নুরুল হক। কথা কাটাকাটির জের ধরে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
চেয়ারম্যান নুরুল হক তার বক্তব্যে আরও বলেন,‘পাগলা এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম তার বাগান বাড়ীতে এডিপির বরাদ্দ থেকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে আবারও বাগান বাড়ীর রাস্তা নির্মাণের জন্য এডিবির বরাদ্দ নেয়ার চেষ্টা করলে আমি বাধা দেই। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনেন নি। তারপরও ২ লক্ষ টাকা নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এডিপির বরাদ্দ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান তার নিজের বাড়ীর রাস্তার জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। সরকারি টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করেছেন।’
জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদ মিয়া তার বক্তব্যে বলেন,‘ আমরা জনগণের সেবা করতে এসেছি। উপজেলা পরিষদে প্রকল্পের বস্তবায়ন নিয়ে বিগত দিনে যে সকল সভা বা সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা এ সম্পর্কে কোন কিছু জানি না। আমরা চেয়ারম্যানবৃন্দ উপজেলা পরিষদের সদস্য, আমাদের ভোটাধিকার রয়েছে। উপজেলা পরিষদের যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামতের ভিত্তিতে পাশ হয়। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হয়েও আমরা বঞ্চিত। আলোচনা না করেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম নিজের একক সিদ্ধান্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। যা বিধি এবং আইন বহির্ভূত।
শিমুলবাঁক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জিতু বলেন,‘ উপজেলা পরিষদের সদস্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। এখন আমাদের মনে হয় না আমরা উপজেলা পরিষদের সদস্য। প্রত্যেক মাসে সমন্বয় সভায় আমরা স্বাক্ষর করি। কি সিদ্ধান্ত হয় তা আমরা জানি না। আমাদের জানানো হয় না। উপজেলা পরিষদ থেকে ঢেউটিন, টিউবওয়েল বিতরণ করার জন্য আমাদের কাছে নাম চাওয়া হয়। কিন্তু বিতরণকালে দেখা যায় আমাদের দেওয়া নাম তালিকায় নাই। উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের সাথে সমন্বয় ছাড়াই একতরফাভাবে একাই উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। আমরা জনগণের সেবা করতে এসেছি। কিন্তু বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কারণে সে সেবা করতে পারছি না।’
এসময় পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন, পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ আমিন, পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর কালাম তাদের নিজ নিজ বক্তব্য মাসিক সমন্বয় সভায় তুলে ধরেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা বর্জন করেন।
মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবির বলেন,‘ উপজেলা পরিষদের আইন অনুযায়ী রেজুলেশন পাশ করার পূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেখানোর কথা রয়েছে। কিন্তু এই উপজেলায় এসে দেখলাম এসব নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।’ ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ মাসিক সমন্বয় সভা বর্জনের বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ আমার কোন অনিয়ম-দুর্নীতি নাই। ইউপি চেয়ারম্যানরা অহেতুক এসব কথাবার্তা বলছেন। তারা নিজেরাই নষ্ট হবে।’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাসিক সমন্বয় সভা বয়কট করার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবির সাংবাদিদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘ এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। পুরো বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’