দক্ষিণ সুনামগঞ্জ: প্রতিমন্ত্রী মান্নানের নির্দেশে টি.আর প্রকল্পের তালিকা প্রকাশ
রবিবার দুপুর দুইটা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের সামনের দেওয়ালে বেশ কয়েকজন লোক মনযোগ সহকারে কি যেন দেখছেন। কেউ সামনে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ পেছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন। উৎসুক মন নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে দেখা যায়, তিন জন বয়স্ক ও দুইজন মধ্য বয়স্ক লোক পিআইও অফিসের সামনের দেওয়ালে সাঁটানো কাগজে গ্রামীণ অবকাঠানো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর প্রকল্পের তালিকা) প্রকল্পে নিজেদের গ্রামের কোন প্রকল্প আছে কিনা তা দেখছেন। ইতোমধ্যে আরো কয়েকজন দেওয়ালের দিকে উঁকি দিয়ে কি যেন দেখে গেছেন। জটলাবাঁধা লোকজনের সামনে গিয়ে জানা গেল রবিবার নিজেদের মসজিদের রাস্তা নির্মাণের প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে কিনা তা দেখতে এসেছেন উপজেলার জয়কলস ইউনিয়ন আসামপুর গ্রামের জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার আলকাছ আলী (৭২)।
তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন গ্রামের মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাবেক ক্যাশিয়ার নায়েব আলী (৬৫)। প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় আলকাছ আলী ও নায়েব আলী খুশি। এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই এলাকার সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা। একইভাবে জয়কলস ইউনিয়নের নোয়াখালী দেবগ্রামের মতিলাল দেব (৬৫) ও রিপন দেব (৪৫) এসেছিলেন তাদের সৌর বিদ্যুতের প্রকল্পটি তালিকাভ‚ক্ত বা অনুমোদন হয়েছে কিনা। টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ সকল উন্নয়নমূলক প্রকল্পের তালিকা ও বরাদ্দ নোটিশ বোর্ডে প্রকাশের নিয়ম থাকলেও সঠিক সময়ে তা প্রকাশ না করার অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ জায়গায়।
বিভিন্ন এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীরা উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন। ঠিক তখনই নিজের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রকল্প (টিআর) জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ্যে দেখার ব্যবস্থা করলেন ক্লিন ইমেজধারী রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ পিআইও অফিসের দেওয়ালে টিআর প্রকল্পের সকল তালিকা টানিয়ে রাখার ব্যবস্থা করছেন তিনি।
রবিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়- ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষাবেক্ষণ (টি আর-২য় পর্যায়) কর্মসূচির আওতায় নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক সংসদ সদস্যগণের অনুক‚লে বরাদ্দকৃত টাকা দ্বারা বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত প্রকল্প তালিকা পিআইও অফিসের সামনের দেওয়ালে টানানো হয়েছে। প্রকাশ্যে দেখার ব্যবস্থা থাকায় বিভিন্ন এলাকার প্রকল্প নিজে দেখতে পারছেন। কোন গ্রামের উন্নয়নে কোন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে নিজেরা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন এলাকার সবাই। টিআর ২য় পর্যায়ের সকল প্রকল্পের তালিকা ৯টি কাগজে দেওয়ালে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। যা উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ দেখতে পাচ্ছেন।
জানা গেছে, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর-২য় পর্যায়) কর্মসূচির আওতায় ৩৬ টি প্যাকেজের মধ্যে ৬টি প্যাকেজে ১২ হাজার ৮৮০ টাকা করে ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৬৪০ টাকা ব্যয়ে ১৫৩টি সোলার প্যানেল প্রদান। অন্য ৩০ টি প্যাকেজে ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৩৬০ টাকা আরও অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে মোট ৩৯ লাখ ১৪ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়েছে। ওই বরাদ্দ দিয়ে এলাকার রাস্তা-ঘাট, পুকুর, মন্দির-মসজিদ সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে। টিআর প্রকল্পের তালিকা দেখতে আসা আসামপুর গ্রামের জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার আলকাছ আলী বলেন, আমাদের মসজিদের প্রকল্পটি মন্ত্রী সাব দিয়েছেন। ওইতো এটা আমরার প্রকল্প। অফিসের
বাইরে টানিয়ে দেয়ায় আমরা খুব সহজেই দেখতে পেয়েছি।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাবেক ক্যাশিয়ার নায়েব আলী বলেন,‘ এই কাজটা খুব ভাল হয়েছে। সব প্রকল্পের তালিকা অফিসের বারান্দায় দেওয়ালে টানানোর ফলে সব মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। প্রকল্প নিয়ে আর লুকোচুরি করতে পারবেনা কেউ। দেবগ্রামের মতিলাল দেব ও রিপন দেব জানালেন, তাঁরা এসেছেন তাদের সৌর বিদ্যুৎ (সোলার প্যানেল) অনুমোদন হয়েছে কিনা তা দেখতে। তাঁরা মন্ত্রী সাহেবের কাছে সোলার প্যানেলের তালিকা জমা দিয়েছেন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহাদাৎ হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সকল উন্নয়নমূলক প্রকল্পের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে প্রকাশের নির্দেশ রয়েছে। আমাদের নোটিশ বোর্ড নেই।
গত ১৯ জুন প্রকল্পগুলো অনুমোদন হওয়ার পর পরই মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে আমরা টিআর প্রকল্পের সকল তালিকা অফিসের দেওয়ালেই টানিয়ে দিয়েছি। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের বলেছেন উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা দেখতে এসে কেউ যেন হয়রানীর শিকার না হয়। যাতে এলাকার যে কেউ খুব সহজে প্রকল্পের তালিকা দেখতে পারেন সেই ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাই আমরা দেওয়ালে টানিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও যে কেউ আমাদের কাছে তালিকা চাইলে আমরা তা প্রদান করছি।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাড. বুরহান উদ্দিন দুলন বলেন,‘ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম. এ মান্নান একজন ক্লিন ইমেজধারী রাজনীতিবিদ। তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নিজের নির্বাচনী এলাকাসহ পুরো সুনামগঞ্জের উন্নয়নের জন্য।
উনার প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে অনেক বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু বাস্তবায়নাধীন এবং কিছু অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি সবসময় স্বচ্ছতা পছন্দ করেন। তাই এলাকার সকল উন্নয়নমূলক প্রকল্পের তালিকা অফিসের দেওয়ালে টানানোর ব্যবস্থা করেছেন। এতে করে কোন গ্রামের কোন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, বরাদ্দ কত সবকিছু জানা ও দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।