দু’জনের দেখা ও কথা হবে?
রাত পোহালেই সশস্ত্র বাহিনী দিবস (২১ নভেম্বর)। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সম্মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণের সূচনা করেছিল। দিবসটিকে কেন্দ্র বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। এদিন বিকালে ক্যান্টনমেন্টের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। যোগ দেন বিভিন্ন পেশার আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও। এই অনুষ্ঠানেই একাধিকবার কথা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে।
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রধান দুটি দলের দুই নেত্রীর মধ্যে আবারও আলোচনা হয় কিনা বা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসন্ন সংকট সমাধানের কোনও আশা উন্মোচিত হয় কিনা, দেশবাসী নজর এখন সেদিকে। বিশেষ করে ১৯ নভেম্বর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দুই দলের সাধারণ সম্পাদকের কুশল বিনিময়ের পর দুই প্রধান নেত্রীর ভাব-বিনিময়ও যেন কাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে। আর সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার কোনও প্রতিফলন বুধবার সেনাকুঞ্জে দেখা গেলে সেটি হবে দেশবাসীর কাছে আনন্দের বার্তা। তবে এই দেখা ও কথা হওয়া-না হওয়ার পুরো বিষয়টিই এখনও অন্ধকারে। ২১ নভেম্বর বিকালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি বিএনপি।
খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নে সাবেক সেনাপ্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার না পাওয়ার কথা না। আমি পেয়েছি। একজন সাবেক সেনাপ্রধান হিসেবে তাদের আমন্ত্রণ পেয়ে গর্ববোধ করছি। তারা আমার বাসায় এসে দাওয়াত দিয়ে গেছেন। আমন্ত্রণপত্রও পেয়েছি।’ সাবেক এই সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্বামী সাবেক সেনাপ্রধান। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব আন্তরিক।’ এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুই নেত্রীর মধ্যে সাক্ষাৎ হবে কিনা, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া যাবেন কিনা, অনুমান করে তা বলা যাবে না।’
ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে যাবেন কিনা, এ ধরনের তথ্য নেই। তিনি যদি যান তাহলে দেখা হবে, কথা হবে। তখন তো সবাই দেখবেন।’ বুধবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আমন্ত্রণ পেয়েছেন কিনা, দায়িত্বশীল কোনও সূত্র এখনও তা জানাতে পারেনি। তবে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে যে, তিনি দাওয়াত পেয়েছেন।খালেদা জিয়া সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে অংশ নিতে ক্যান্টমেন্টে যাবেন কিনা, এ বিষয়ে এখনও দলের (সোমবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত) কোনও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘আমন্ত্রণপত্র পাওয়া বা দলীয় প্রধান যাবেন কিনা, এ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই।’ একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন। তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী ও একজন বীর উত্তমের স্ত্রী হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি এখনও চেয়ারপারসনের মঙ্গলবারের (২১ নভেম্বর) শিডিউল সম্পর্কে জানতে পারেননি।
এর আগে, ২০১০ সালে সর্বশেষ খালেদা জিয়া সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তার আগের দু’বছরও অংশগ্রহণ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ২০০৮ সালে সেনাকুঞ্জে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। ওই সময় তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে বলেছিলেন। আর খালেদা জিয়ার ভাষ্য ছিল, ‘কুশল বিনিময় হলো। জেলের মধ্যে কেমন ছিলাম, সে বিষয়ে কথা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জে. অব. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সেনাকুঞ্জে যায়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের কুশল বিনিময় হয়েছিল।