দোয়ারাবাজারের ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত অভিযোগ
সুনামগঞ্জ :: দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে, অনিয়ম, দুর্নীত, ক্ষমতার অপব্যবপহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে পৃথক দুটি দরখাস্ত দিয়েছেন পরিষদের পাঁচ সদস্য। রবিবার জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দুটি দিয়েছেন পরিষদের সদস্য মো. ওয়াব আলী, মো. আব্দুল গনি, আব্দুল মালিক, মো. শফিকুল ইসলাম ও রেজিয়া বেগম। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের বন্যায় দুই কিস্তিতে বনার্থদের মাঝে বিতরণের জন্য সাড়ে ৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত চাল বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিতরণ না কারে ভুয়া মাস্টারোল দাখিল করে সমুদয় চাল কালো বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ। এ থেকে তিনি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে লাভবান হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, গত ঈদুল ফিতরে দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য পান্ডারগাঁও ইউনিয়নে সাড়ে ১৭ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। সেখান থেকে ৮ মেট্রিকটন চাল অসহায় দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে বাদবাকি চালও কালো বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। দুর্নীত হয়েছে জানতে পেরে পরিষদের অধিকাংশ সদস্য ভিজিএফের চাল বিতরণের মাস্টাররোলে স্বাক্ষর করেননি। অভিযোগে বলা হয়, সাড়ে ৯ মেট্রিকটন চাল কালোবাজারে বিক্রি করে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাতৎ করেছেন।
একই ভাবে ঈদুল আজহায় বরাদ্দ দেয়া সাড়ে ১৭ মেট্রিকটন ভিজিএফের চাল থেকে মাত্র ৭ মেট্রিকটন চাল অসহায় দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে বাকি সাড়ে ১০ মেট্রিকটন চাল কালো বাজারে বিক্রি করে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ফারুক আহমদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও ইউনিয়ন পরিষদের আয়-ব্যয়ের হিসাব পরিষদের সভায় উপস্থপন কিংবা এ নিয়ে আলোচনা করেননি। পরিষদের ট্যাক্স, দোকানের ট্যাক্স , ট্রেড লাইসেন্স ও ভ্যাট, ওয়ারিশান সনদ ফি, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ফি, খোয়াড় ও খেয়াঘাট ফিসহ ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় ফি বাবদ প্রায় ৪০ লাখ টাকার অধিকাংশ টাকা ভুয়া রশিদের মাধ্যমে উত্তোলণ করেছেন। আর যা কলেকশন দেখিয়েছেন তার অধিকাংশ ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এবং নিজের বাড়িতে স্থাপিত অফিসের ভাড়া ও বিদুৎত বিল পরিশোধ দেখিয়ে আত্মসাৎ করে নিয়েছেন।
চেয়ারম্যান ফারুক এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, পরিষদের বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্পের কমিশন ও প্রকল্পের উপর প্রকল্প করে কাজ না করে এক কোটি টাকা লাভবান হয়েছেন চেয়ারম্যান। কাবিখা, কাবিটা, টিআর, জিআর, উপজেলা পরিষদ বরাদ্দ, এলজিএসপি বরাদ্দসহ সরকারি যাবতীয় বরাদ্দ নিজে অথবা অনুগত ইউপি সদস্যদের নাম ব্যবহার করে নিজে নামমাত্র কাজ করে টাকা আত্মসাৎ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান। উন্নয়ন কাজে ইউএনও, পিআইও, এলজিইডি অফিস ইত্যাদির নাম করে এবং নিজের জন্য বরাদ্দের ২৫ থেকে ৩৫ ভাগ টাকা কমিশন নেন চেয়ারম্যান ফারুক। যে সব সদস্য নিদিষ্ট পরিমাণ কমিশন দিতে রাজি হন না তাদের কোন প্রকল্প দেওয়া হয় না। চেয়ারম্যান ফারুক এভাবে পরিষদে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতির লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করে চলছেন। এদিকে, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের কাছে দেওয়া অপর এক দরখাস্থে ইউনিয়নের এলজিএসপি-৩ প্রকল্প দাখিলে পরিষদের পাঁচ সদস্য অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আনেন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুকের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের জন্য এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৮ লাখা টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিধি মোতাবেক পরিষদের বৈঠক করে ওয়ার্ড সভার অনুুমোদিত ও স্থায়ী কমিটির সুপারিশকৃত প্রকল্প হতে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু চেয়ারম্যান ফারুক কোন প্রকার সভা না করে, ওয়ার্ড সভা ও স্থায়ী কমিটিকে উপেক্ষা করে পরিষদের অবেহেলিত ও সবচেয়েবড় ৪টি ওয়ার্ডকে (২, ৩, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ড ) বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে মনগড়া প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।
২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা ফ্যাসিলিটেটর মাজহারুল কবির ইউনিয়ন পরিদর্শনে গেলে ইউপি সদস্যরা বিষয়টি মৌখিকভাবে তার কাছে উপস্থাপন করেন। এ সময় চেয়ারম্যান ৬ অক্টোবরের মধ্যে সকল সদস্যকে নিয়ে বিধি মোতাবেক নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করে জেলায় পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চেয়ারম্যান কোন পদক্ষেপ না করায় জেলা ফ্যাসিলিটেটরের পরামর্শে বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে লিখিতভাবে জানান পাঁচ ইউপি সদস্য। স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা ফ্যাসিলিটেটর মাজহারুল কবির বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত ভিজিটে গেলে পাঁচ ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আমার কাছে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেন। আমি বিষয়টি নিজেদের মাঝে আলোচনা করে নিষ্পত্তি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করতে তাদের বলে আসি। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।