ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে-প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার কখনো তেলের মাথায় তেল দেয় না, ধনীকে আরো ধনী করে না। দেশের সকল অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেশের প্রান্তিক অর্থাৎ মাঠপর্যায়ে হৃতদরিদ্র্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি বলেই সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্যই হচ্ছে আমরা দেশে বৈষম্য হ্রাস করতে পেরেছি, ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবোই। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন করে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ ও শান্তিময় দেশ হিসেবে গড়ে তুলবোই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। বাজেট থেকে ভ্যাট আইন প্রত্যাহার করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিরোধী দল ও সরকারি দলেরও অনেক সদস্যের দাবির প্রেক্ষিতে ভ্যাট আইন প্রত্যাহারের ফলে ২০ হাজার টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে। এই ঘাটতি পূরণে হয় আমাদের ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে, নতুবা উন্নয়ন কর্মসূচিতে কিছুটা কাটছাঁট করতে হবে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাজেটটি বাস্তবায়িত হলে সবদিক থেকে দেশ এগিয়ে যাবে, উন্নতি হবে এবং স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলতি জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনি বক্তব্যে অংশ নিয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন-সফলতা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি চলমান বন্যা মোকাবিলায় তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে স্পিকার প্রেসিডেন্টের আদেশ পাঠের মাধ্যমে রাত ৮টা ৫২ মিনিটে অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করেন। উন্নয়ন বাজেট ৯০ ভাগেরও ওপরে বাস্তবায়ন করে বর্তমান সরকার দেশে সত্যিই একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বড় বাজেট বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কেউ দিতে পারেনি। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের উন্নয়ন বাজেট ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করে উন্নয়নের ওই পরিমাণ বাজেটের মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই প্রমাণ করেছে, তারা বিশাল বাজেট দিতে পারে এবং তা বাস্তবায়নও করতে পারে। এবারের বাজেটও আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো, এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে সত্যিকার উন্নয়নের ছোঁয়া প্রথম ১৯৯৬ সাল থেকে পায় এদেশের মানুষ। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেন, ভুল ব্যাখ্যাও দেন। কিন্তু তারা যদি এবারের বাজেট অধিবেশনের আলোচনা শুনতেন তবে বুঝতে পারতেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যে সবারই রয়েছে তা প্রমাণিত। তিনি বলেন, বাজেট সম্পর্কে শুধু বিরোধী দল নয়, আমাদের সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরাও অর্থমন্ত্রীকে সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছেন। সরকার ও বিরোধী দলের সবাই স্বাধীনভাবে বক্তব্য রেখেছেন, কাউকেই হুইপিং করে বন্ধ করা হয়নি। সংসদে যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে এটা প্রমাণিত সত্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট নিয়ে অনেক পত্রিকা বড় বড় হেডিং করে। এক লাখ কোটি টাকার উপরে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন অতীতে কোনো সরকার করতে পারে নাই। একমাত্র আওয়ামী লীগ করেছে। একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। এবারও ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এটাও পূরণ করতে পারব। সেই বিশ্বাস আমাদের আছে। তবে সকল মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি আমার অনুরোধ- নিজ নিজ এলাকায় যেসব প্রকল্প আছে সেগুলোতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়। যথেচ্ছভাবে যেন খরচ না হয়। উন্নয়নের সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে আমরা আয় বৈষম্য হ্রাস করতে পেরেছি। মাঠপর্যায়ে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। দেশবাসীকে ট্যাক্স দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্য একটু ট্যাক্স দিলেই বাজেট ঘাটতিও পূরণ হবে, দেশটাও উন্নতি হবে। আমরা শুধু মুখের উন্নয়ন নয়, সারা দেশেই প্রকৃত উন্নয়ন করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। খাদ্য মজুদ থাকলেও অকাল বন্যা হলে বিপদ এড়াতে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করে আমরা মজুদ করে রেখেছি। যেন মানুষগুলো কষ্ট না পায়। যেখানে যেখানে বন্যা হয়েছে আওয়ামী লীগের টিম প্রত্যেক এলাকায় দিচ্ছি। পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও আছে। দুর্যোগ এলে কার কি করণীয় কি করতে হবে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর জলাশয়গুলো ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি সরানোর পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিগত সরকারগুলো এটা করেছে। পান্থপথের খালটি এখন রাস্তা। তাহলে পানি সরবে কীভাবে? খাল-জলাশয় ভরাট করার কারণেই এখন ধানমন্ডি নদীর সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এই পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করছে বলে তিনি জানিয়েছেন।