ধান পাকছে,কৃষকের মনে আশা জাগছে
রাধানগর গ্রামের বড় কৃষক আবদুল আজিদ (৬৭)। প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয় শ মণ ধান পান। গতবার কোনো ধান পাননি। গত বছরের ৫ এপ্রিল বাড়ির আঙিনা থেকে হাওরের থইথই পানি দেখিয়ে কেঁদেছিলেন এই কৃষক। তখন সব ধান ছিল পানির নিচে। ঠিক এক বছর পর গত বৃহস্পতিবার আবার এই প্রতিবেদককে হাওর দেখান তিনি। হাওরে এখন পানি নেই, হাওরজুড়ে ফসলের সমারোহ। আবদুল আজিদ বলেন, ‘ফসল গেলে কী যে কষ্ট এইটা বইলা বোঝাইতাম পারতাম না। এখন হাওরের দিকে ছাইয়া ছাইয়া দুই হাত তুইলা দোয়া করি, ইবার যেন ধানের কোনো ক্ষতি না অয়।’এই আকাঙ্ক্ষা শুধু আবদুল আজিদের নয়, পুরো হাওরবাসীর। গত বুধবার পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সুনামগঞ্জে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘হাওরের ফসল রক্ষায় এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজও হয়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আমরা সবাই মিলে পরিশ্রম করেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের পরিশ্রমের ফল দেবেন।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের প্রধান ফসল বোরো। জেলায় ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সব হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। এ বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। এখন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হাওরে ধান কাটা হচ্ছে। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে আরও এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, জেলায় এবার হাওরের ফসল রক্ষায় ১ হাজার ৪৯০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাঁধ হয়েছে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। বাঁধের কাজ শেষ। এখন আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বললেন, ‘আমরা হাওরের ফসল রক্ষায় প্রয়োজনীয় বাঁধের কাজ করেছি। কৃষকেরা এবার হাসিমুখেই তাঁদের ধান গোলায় তুলতে পারবেন। আমরা কৃষকদের সেই হাসি দেখতে চাই।’