নাছির চৌধুরী,আমার কৈশোরের নায়ক,যৌবনের আর্দশ
জুনায়েদ মিয়া-
সময়টা ১৯৯৬ সাল। বাংলাদেশে তখন ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশের ন্যায় দিরাই-শাল্লায়ও নির্বাচনী আমেজ তুঙ্গে। রাত দুপুরে হঠাৎ ঘুম ভাঙতো মিছিলের শ্লোগানের আওয়াজে। বয়স তখন ৮/৯ বছর। ঘুম হতে সকাল বেলা আমরা বই খাতা হাতে নিয়ে রাতে বয়দের মিছিলে শোনা শ্লোগানের বুলি ‘নাছির চৌধুরীর সালাম নিন,লাঙ্গলে ভোট দিন’এসব বুলি আওরাাতে আওরাাতে স্কুলে যেতাম। কিসের মিছিল? কার মিছিল? নাছির চৌধুরীই বা কে? এতটুকু বোঝার বয়স তখন হয়ে উঠেনি আমার। হঠাৎ একদিন মায়ের বারণ অমান্য করে ছোট চাচার হাত ধরে বড়দের সাথে মিছিল সহকারে দিরাই নির্বাচনী সমাবেশে আসলাম। যতুটুকু মনে পড়ে দিরাই ষ্টেডিয়ামে সেদিন নির্বাচনী সমাবেশ ছিল। হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল সেদিন। মঞ্চে তখন তুমুল বক্তব্য চলছে। আমি মানুষের ভীড়ে মঞ্চ দেখতে পারছিলাম। চাচাকে জিঞ্জাসা করলাম,নাছির চৌধুরী কে? চাচা আমাকে উনার কাঁধে তুলে মঞ্চের দিকে আগুল দিয়ে নাছির চৌধুরীকে দেখালেন। প্রথম দেখাতেই আমি উনার আদর্শের প্রেমে পড়েছিলাম,ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছিলাম। এরপর বছর কয়েক ব্যবধানে আমাদের বাড়িতে এক দুই বার বেড়াতেও এসেছিলেন। আমারও সুভাগ্য হলো উনাকে কাছ থেকে দেখার।
২০০৪ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ ছুটিয়ে যখন দিরাই কলেজে ভর্তি হলাম। ছাত্রদলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের আহবানে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়লাম। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে মিছিল,মিটিং বড় ভাইদের সাথে নেতার বাসায় যাতায়াত,চা সিংগাড়া খাওয়া নিত্য দিনের সঙ্গী। সুযোগ হল নেতাকে কাছ থেকে দেখার,কথা বলার। সেই ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত নেতা সান্নিধ্য থেকে সাধ আর সাধ্য অনুযায়ী রাজনীতি করছি। রাজনীতি কিংবা পড়াশোনার ব্যস্ততার ফাকে অবসর সময়টুকু নেতার সাথে কাটাকেই উপভোগ করি। তাই সময় পেলে চলে যাই নেতার বাসায়। শুনি নেতার বাল্যকাল,শৈশব, শিক্ষাজীবন,ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস,উপজেলা পরিষদ,বিএনপিতে যোগদান,সাংসদ থাকাকালীন জানা অজানা অনেক গল্প। সত্যি খুব ভাল লাগতো এসব গল্প শুনতে। সত্যি যদি বলি নাছির চৌধুরী শুধু একটি নাম নয়,ইতিহাসের একটি উজ্জল অধ্যায়। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে আজকের দিন পর্যন্ত সংসার নামক শব্দটাকে ষোলআনাই ফাকি দিয়েছেন মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। যার জীবনে পরতে পরতে রয়েছে সাফল্যের সিড়ি গাঁতা ইতিহাস। রয়েছ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের উজ্জল অধ্যায়। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভি.পি,জি.এস হওয়ার উজ্জল অধ্যায়।
এখানেই শেষ যৌবনের বাহুবলে দেশপ্রেমের টানে অংশগ্রহণ করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দেশকে স্বাধীন করতে তুলে নিয়েছিলেন নিজ হাতে অস্ত্র। দেশ স্বাধীনের পর সময়ের ডাকে,নাড়ীর টানে ফিরে আসলেন নিজ এলাকায়। হয়ে উঠলেন নিপীড়িত নির্যাযিত মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। সমালোচকদের পিছনে ফেলে সাফল্যের সিড়ি বেয়ে হয়ে উঠলেন বিজয়ী। নির্বাচিত হলে দু’দুবারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। যা এখনও দিরাইয়ের শাসনামলে সোনালী অধ্যায় হিসাবে পরিচিত।
সেই ১৯৯৬ সাল দিরাই-শাল্লার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন সংসদ সদস্য। আজও লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালবাসার সিক্ত নাম নাছির উদ্দিন চৌধুরী। সুষ্ঠ রাজনীতির ধারক,যার হাতে সৃষ্টি হয়েছে অনেক ত্যাগী নেতৃবৃন্দের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার,সৃষ্টি করেছেন অনেক জনপ্রতিনিধি। কুশিয়ারা নদীতে ঝাঁপাঝাঁপি করে যার বাল্যকাল কেটেছে, ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে যার কৈশর,যৌবন কেটেছে,যুদ্ধের মাঠে যার সোনালী অতীত হারিয়েছেন,কালের পরিক্রমায় সেই নাছির উদ্দিন চৌধুরী গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে নিজ শহর সুনামগঞ্জে। আপন করে নিয়েছেন পিছঢালা রাজপথকে। মিছিল,মিটিং পুলিশের হয়রানী নিত্যদিনের সঙ্গী। নাছির উদ্দিন চৌধুরী একজন পুরোধা রাজনীতিবিদ। রাজনীতিতে চাওয়া পাওয়ার হিসাব খুব কমই করেছেন। পদ পদবীর প্রতি লোভ কখনই ছিলনা। নিরবে নিভৃতে মানুষের সেবা করতেই ভালবাসেন।
প্রিয় নেতা জানি,আপনি সারা জীবন দিয়েছেন,কখনো কিছু গ্রহন করতে শিখেননি।যা পাননি সেটা ছিল অবিচার,আপনার দাবী ছিলনা কখনো।ততটাই নেতা আপনি মহান,যতটা জনগন আপনাকে ভালবাসে।প্রিয় নেতা,জানি আমাদের আবার সুদিন আসবে। আপনি হবেন বিজয়ী, আমরা হবো বিজয়ে সারথী। স্যালুট প্রিয় নেতা আপনার রাজনৈতিক আদর্শকে,রাজনৈতিক উজ্জল অধ্যায়ক।