নানা অভিযোগে বন্ধ হচ্ছে সাড়ে তিনশ’ কলেজ
নূর মোহাম্মদ –চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় সাড়ে ৩শ’ কলেজ বন্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আজ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে। এসব কলেজের বিরুদ্ধে অনুমোদনের অন্যতম মানদণ্ড শিক্ষার্থী ভর্তির শর্ত মানা হচ্ছে না। গত বছর একাদশ শ্রেণিতে এসব কলেজে শূন্য থেকে ২০ জনের বেশি ভর্তি হয়নি। প্রাথমিকভাবে তাদের শোকজ করে পরবর্তীতে পুরোপুরি বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তঃবোর্ডের কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছর একাদশ শ্রেণিতে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীও ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয় ৩৫১টি কলেজ-মাদরাসা।শাস্তি হিসেবে আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করা হতে পারে। আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ডাকা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত’ করার সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ভুঁইফোড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তো কলেজ অনুমোদন দেয়া হয়। সেখানে যদি শিক্ষার্থী ভর্তি না হয় তাহলে এসব কলেজ থাকার প্রয়োজন কি সেসব কলেজ বোর্ডের নির্ধারিত শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বন্ধসহ আরো যা যা করার আছে করা হবে। মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর একেএম ছায়েফ উল্যাহ বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে ব্যর্থ মাদরাসা প্রধানদের শোকজ করা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলেও শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করা হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলো সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঢাকা বোর্ডের অধীন ১৬টি, চট্টগ্রাম বোর্ডের নয়টি, যশোর বোর্ডের সাতটি, কুমিল্লা বোর্ডের দুইটি, বরিশাল বোর্ডের তিনটি, রাজশাহী বোর্ডের ২৬টি ও দিনাজপুর বোর্ডের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি।
মাদরাসা বোর্ডের অধীনে ৭১টি মাদরাসায় আলিম শ্রেণিতে এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৫৪টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এর আগের বছর সারা দেশে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় সরকার ১৪৩টি কলেজের পাঠদান বন্ধ করেছে। গত বছর একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রথমে তাদের শোকজ করা হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলেই শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করা হবে। তবে সরকার কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়ায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসব কলেজের পাঠদানের অনুমতি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। ক্ষমতা ও অর্থের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের অলিগলিতে গড়ে উঠে এসব কলেজ। অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে শিক্ষার্থী সংকটে পড়ে ‘অখ্যাত’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা দেশে চার হাজারের বেশি কলেজ রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাঠদান করা হয় এসব কলেজে। সারা দেশে উচ্চমাধ্যমিক কলেজ রয়েছে প্রায় দুই হাজার ২০০টি। প্রতি বছরই এগুলোর বিভিন্ন শ্রেণিতে বিপুলসংখ্যক আসন খালি থাকছে। গত বছর কেবল একাদশ শ্রেণিতেই আসন খালি ছিল দেড় লাখের বেশি। সারা দেশে ৩৫৫টি সরকারি কলেজ রয়েছে। আর দুই হাজার ৩৬৫টি কলেজ এমপিওভুক্ত। এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকার পরিশোধ করে থাকে। এই কলেজগুলোতে ৬৫ হাজার ৬৩৪ জন শিক্ষক এবং ২১ হাজার ৫৯৯ জন কর্মচারী রয়েছেন। এই ৮৭ হাজার ২৩৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে সরকারের ব্যয় হয় ২০৬ কোটি সাত লাখ ২৩ হাজার ৯৬০ টাকা। সরকারিভাবে বিপুল অর্থব্যয় করলেও স্বল্প সংখ্যক কিছু কলেজ ছাড়া বাকিগুলোর শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভুঁইফোড় কলেজে-মাদরাসায় আগে জোর করে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নিজেদের পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করেন। আর এতেই বিপাকে পড়ে অখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অনুমোদন পাওয়া কলেজগুলো মানহীন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাদের বোর্ড পরীক্ষার ফল খারাপ হচ্ছে।