নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন : উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় বাদী ও আইনজীবীরা
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আলেচিত সাত খুনের মামলা পরিচালনা করা বাদী ও তাঁর পক্ষের আইনজীবীসহ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও মনে করছেন তারা বিশেষ কারো টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাত খুন মামলার একটি গ্রহণযোগ্য রায় পেতে এসব আইনজীবীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সঠিক ট্র্যাকে থাকাটাই এ টার্গেটের কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা। আর সে কারণে রয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। আগস্ট মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় নিম্ন আদালত প্রদত্ত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে ১১জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডপ্রাপ্ত অপর ৯জনের সাজা আগেরটিই বহাল আছে। এর আগে গত ১৬ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২৬জনের মৃত্যুদন্ড ও ৯জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি ছিলেন ওয়াজেদ আলী খোকন। পরিচালনা করতে গিয়ে কখনো আসামী পক্ষের চোখ রাঙানি, আসামী পক্ষের আইনজীবীদের রোষানলে পড়লেও শেষতক কড়াভাবেই আইনী লড়াই চালান ওয়াজেদ আলী খোকন।
এদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খানকেও নানাভাবে হুমকির শিকার হতে হয়েছিল। আর বাদী নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটিও রয়েছেন শংকার মধ্যে। কারণ এর আগেও তাকে দেওয়া হয়েছে হুমকি।সাখাওয়াত সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আইনজীবীরাই যে শুধু টার্গেট না। ভিকটিমের পরিবার, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষও টার্গেট। এজন্য তিনি সকালের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি রাখতে হবে যাতে তাদের যেন কোন ক্ষতি না করতে পারে। ইতোমধ্যে পিপির মেয়ের উপরের হামলার ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন। পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন এবং ভীত। কারণ আজ তার উপরে হয়েছে আবার কার উপরে হয় এ নিয়ে ভীত। প্রশাসন এ ব্যাপারে শক্ত ভূমিকা পালন করবে। কারণ এটা সঙ্গে সারা দেশের ন্যায় বিচার জড়িত। আজকে আসামীদের লোকজন দ্বারা যারা বিচারটা পাওয়ার জন্য কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে কোন কিছু করে সফল হতে পারে তাহলে সারা বাংলাদেশে এ ধরনের আর বিচার চাওয়ার যাওয়ার ক্ষেত্রে ভাটা পড়বে।
তিনি বলেন, এ মামলার আসামী ৫টি বাহিনীর সদস্য। সেটা হলো মিলিটারী,র্ ুহিল;্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার। এ ৫টি বাহিনীর অনেকের সাজা হয়েছে এবং পলিটিক্যাল ব্যক্তিদের সাজা হয়েছে। যাদের সাজা হয়েছে তারা অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ রায়টি সারা বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিচার হওয়ার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আইনজীবীদের ছিল, আদালতের ছিল, মিডিয়া কর্মীদের ছিল এবং সাধারণ মানুষের ছিল। সকলের সমন্বয়ে এ বিচার হয়েছে। এক ভাবে মনে করা যেতে পারে বিচারটা কেউ করে দিয়ে যায় নাই বরং এ বিচার আদায় করে নেওয়া হয়েছে। আসামীরা প্রথম থেকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। যাতে করে তারা এ জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে রেহায় পেয়ে যায়। যার জন্য সকল ধরনের ক্ষমতা তারা প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার করণে সেক্ষেত্রে তারা সফল হতে পারে নাই। সবশেষ মহামান্য হাই কোর্টের ডেথ রেফারেন্সেও রিজেক্ট হয়েছে। ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড, ১১ জনের যাবজ্জীবন ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এর কারণে আমরা যারা ন্যায় বিচারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি এবং আমরা আইনজীবীরাই যে শুধু টার্গেট তা না, এটা ভিকটিম পরিবারের সদস্যরাও টার্গেট তাদের, সাংবাদিক যারা বেশি লেখালেখি করেছে তারাও টার্গেট এবং আমরা যারা আইনজীবীরা লড়াই করেছি তারাও টার্গেট।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনের মেয়ে মাঈশা ওয়াজেদ প্রাপ্তি গত ২৩ আগস্ট আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি সাত খুনের মামলায় একাই কাজ করেছি আমার সাথে কাউকে নেইনি কারণ কেউ বায়াস্ট হয়ে মামলার বিচারকে প্রভাবিত করতে পারে। ৯১ জন এপিপি থাকা সত্ত্বেও আমি কাউকে আমার সাথে রাখিনি। সাখাওয়াত হোসেন সহ অন্যরা মামলার বাদীপক্ষের সাথে এবং বিচারের দাবিতে আন্দোলনে ছিলেন কিন্তু মামলার কাজ আমি সম্পূর্ণ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছি। হয়তো এতেই আমার উপর কোন ক্ষোভ থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি এর আগে অনেকবার অভিযোগ করেছেন, তাকে ও তার পরিবারের লোকজনদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এসব ঘটনায় তিনি অনেক ভীত। কারণ অনেক রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি শেষ পর্যন্ত বিচারের জন্য লড়েছেন। সে কারণে প্রভাবশালীদের ভয় তো থাকবেই।