নুসরাতের গায়ের আগুন নেভাতে গিয়ে আমার হাত পুড়ে যায়
বার্তা ডেস্ক :: ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যা মামলায় তিন পুলিশ সদস্যসহ আরও পাঁচজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে তাদের সাক্ষ্য ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় আরও পাঁচজনের সাক্ষ্য ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদালতে পুলিশ কনস্টেবল মো. রাসেল হোসেন, সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের এসআই ডিএইচ এম জহির রায়হান, এএসআই মো. আরিফুর রহমান, নুসরাতের জেঠাতো ভাই ওমর ফারুক ও চাচা আজহারুল হক এমরানের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ পর্যন্ত আদালতে ৩৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। মঙ্গলবার মো. ফজলুল করিম, রাবেয়া আক্তার, মোয়াজ্জেম হোসেন ও মো. জাফর ইকবাল আদালতে সাক্ষ্য দেবেন।
আদালত সূত্র জানায়, বিচারকের কাছে সাক্ষ্য দেয়ার সময় পুলিশ কনস্টেবল মো. রাসেল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন সকালে আমি ওই মাদরাসার গেটে দায়িত্ব পালন করছিলাম। সকাল আনুমানিক পৌনে ১০টার দিকে ‘আগুন-আগুন’ চিৎকার শুনতে পাই। ওই সময় একটি মেয়েকে গায়ে আগুন নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতে দেখি। তার চিৎকারে শেল্টারের সামনে অনেকেই জড়ো হন। তখন আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে নামিয়ে আনি। এ সময় তার গায়ে আগুন জ্বলছিল। আগুন নেভাতে গিয়ে আমার হাতের একাংশ পুড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে সিএনজিতে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। পরে ওই ভবনের ছাদ থেকে বেশকিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। জবানবন্দিতে নুসরাতের জেঠাতো ভাই ওমর ফারুক ও চাচা আজহারুল হক এমরান বলেন, ৬ এপ্রিলের ঘটনার পর নুসরাতের পড়ার ঘর থেকে যে খাতা উদ্ধার করা হয়েছে- তাতে সে অনেক কিছুই লিখে রেখে গেছে। কিভাবে অধ্যক্ষ সিরাজ তাকে যৌন হয়রানি করেছে তারও উল্লেখ ছিল সেই লেখায়।
মামলার আরেক সাক্ষী সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের এএসআই মো. আরিফুর রহমান আদালতে বলেন, গত ৯ এপ্রিল বিকেলে আমি নুসরাতের বাড়িতে যাই এবং তার কক্ষের পড়ার টেবিল থেকে ৩৮ পৃষ্ঠার একটি খাতা স্বজনদের উপস্থিতিতে উদ্ধার করি। ওই খাতার ১ থেকে ৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নুসরাত ২৭ মার্চের ঘটনার বিষয়ে বেশকিছু কথা লিখে রেখে গেছেন। বিশেষ করে ৭ ও ৮নং পৃষ্ঠায় অধ্যক্ষের যৌন হয়রানি বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী পিবিআইয়ের ওসি মো. শাহ আলম বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামি উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা তাদের জেরা করেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বেচ্চ শাস্তি দাবি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪