পদত্যাগ করছেন সৌদি বাদশাহ সালমান!
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আগামী সপ্তাহে পদত্যাগ করছেন। সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে ব্রিটেনের ডেইলি মেইল এই খবর দিয়েছে। বাবার পদত্যাগের পর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। বাদশাহ হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমান দায়িত্ব গ্রহণ করলেও ‘পবিত্র দুই মসজিদের জিম্মাদার’ হিসেবে থাকবেন সালমান বিন আব্দুল আজিজ। সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটির বাদশাহের হাতেই পবিত্র কাবা ও মসজিদে নববীর জিম্মাদারের দায়িত্ব থাকতো। বিন সালমানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই প্রথমবারের মতো বাদশাহের বাইরে কারো হাতে মসজিদ দুটির দায়িত্ব থাকবে। ডেইলি মেইলকে সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ট ওই সূত্র জানিয়েছে, ‘যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না ঘটে তাহলে আগামী সপ্তাহেই ছেলে এমবিএসের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বাদশাহ সালমান।’ মোহাম্মদ বিন সালমানের নামকে পশ্চিমা সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা সংক্ষেপে ‘এমবিএস’ হিসেবে লিখে থাকেন।
সূত্র মতে, ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই ইরানের বিরুদ্ধে নিজের পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করবেন বিন সালমান। বর্তমানে একাধিক ফ্রন্টে তেহরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া সৌদি আরব আরও কঠোর হবে দেশটির বিষয়ে। এমনকি ইসরায়েলের সহাতায় লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি। রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যদের পরামর্শ উপেক্ষা করে ইরান এবং হিজবুল্লাহকে টার্গেট করতে চান এমবিএস। নিজের ক্ষমতা সংহত করা ও বিরুদ্ধ মতকে দুর্বল করতে চলতি মাসের শুরুতে সৌদি রাজপরিবারে গ্রেফতার অভিযান চালান বর্তমান ক্রাউন্স প্রিন্স এমবিএস। দেড় ডজন প্রিন্স এবং তার চেয়েও বেশি সংখ্যক বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীকেও দুর্নীতির অভিযোগে আটক করে রিয়াদের একটি পাঁচতারকা হোটেলে বন্দী করে রেখেছেন তিনি। এদের মধ্যে কয়েকজন সৌদি আরবের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, যাদের ব্যাংক একাউন্টগুলো জব্দও করা হয়েছে।
সৌদিতে একদিনেই ৭,৫০০ ব্যাক্তি আটক
রিয়াদ: সৌদি আরবে বসবাস ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে একদিনেই সাড়ে ৭ হাজার ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল মানসুর আল তুর্কি এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। দেশটির শ্রম আইন ও বসবাসসংক্রান্ত আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থেকে অভিযান শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানের প্রথম দিনেই সাড়ে সাত হাজার ব্যক্তিকে আটক করে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আরব নিউজ। মানসুর আল তুর্কি বলেন, অভিযানে শুধু বসবাস সংক্রান্ত আইন ভঙ্গকারীদের আটক করা হয়নি, যাদের বসবাসসংক্রান্ত কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদেরও আটক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার থেকে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে। যেসব সৌদি প্রতিষ্ঠান অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ করেছে, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। তবে যাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের যতদ্রুত সম্ভব ফেরত পাঠানো হবে বলে জানান তিনিসৌদিতে চলতি বছরে ১০০ ব্যক্তির শিরশ্ছেদ, অ্যামনেস্টির নিন্দা-সৌদি আরবে শিরশ্ছেদ করে দেশটির আরেক নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ফলে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শিরশ্ছেদের শিকার ব্যক্তিদের সংখ্যা ১০০ জনে দাঁড়াল। সৌদি আরবের সরকারি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, একজন সৌদি নাগরিককে হত্যা করার অপরাধে ওই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নিন্দা জানিয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে মোট ১৫৩ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল সৌদি আরব। এরমধ্যে ওই বছরের ২ জানুয়ারি একদিনে দেশটির প্রখ্যাত শিয়া আলেম শেখ নিমর আন-নিমর ও তার ৪৬ জন সমর্থকের শিরশ্ছেদ করে সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকার। এই প্রখ্যাত আলেমসহ দেশটির সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে মুক্তি দেয়ার আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে ওই দণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০১৫ সালে ৭১ জন বিদেশি নাগরিকসহ ১৫৮ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল সৌদি আরব। ১৯৯৫ সালের পর দেশটিতে এক বছরে এত বেশি সংখ্যক মানুষের শিরশ্ছেদ করা হয়নি। অ্যামনেস্টি বলেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দেশগুলোর তালিকায় সৌদি আরব প্রথম স্থানে রয়েছে। সংস্থাটি তার ভাষায় ‘ভয়ঙ্কর’ শিরোশ্ছেদের দণ্ড তুলে দেয়ার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।