পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পরিবর্তন আসছে
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বন্ধে গুচ্ছ পদ্ধতি বা মেডিকেলের আলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সুপারিশ করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এদিকে, বর্তমান পদ্ধতি পরবর্তন করে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে প্রতি বছর ইউজিসি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে। সেই আলোকে তারা রাষ্ট্রপতি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ পেশ করে। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক প্রতিবেদনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করতে যাচ্ছে ইউজিসি। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে চরম ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এতে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বর্তমান এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিল করার সুপারিশ তৈরি করেছে ইউজিসি। এতে মেডিকেলের আদলে বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে অথবা লিখিত পরীক্ষা আয়োজনের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার সুপারিশ থাকছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সুপারিশমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির হাতে তা তুলে দেয়া হবে। রাষ্ট্রপতি সুপারিশগুলো বিবেচনা করে পরবর্তীতে তা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেবেন। সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট অন্যতম প্রধান অন্তরায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংকট চরম পর্যায়ে। তাই ইউজিসি এ সংকট নিরসনে জোর সুপারিশ করছে। এ বিষয়ে তাদের সুপারিশ হচ্ছে- সিনিয়র শিক্ষকদের ছুটিকালীন অবকাশে সংকটপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে নিয়োজিত করা। দেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অপ্রতুল। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষক স্বল্পতা প্রধান সমস্যা। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারী বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক বা দেশের শিক্ষাবিদদের লেকচার বা ক্লাসের পাঠদান মাল্টিসিস্টেমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচারের ব্যবস্থা, ইউডিএলের (ইউনিভার্সিটি ডিজিটাল লাইব্রেরি) মাধ্যমে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা, ই-জার্নাল ও ই-বুক প্রযুক্তি সহজকরণের সুপারিশ থাকছে। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় নানা অনিয়ম ও জালিয়াতি বন্ধে এর পরিবর্তন প্রয়োজন। এটি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। সকলে একমত না হওয়ায় চলতি বছর থেকে তা পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি।
চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি বন্ধ করতে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা একমত হয়েছেন। এমসিকিউ পদ্ধতি পরিবর্তন করে গুচ্ছ পদ্ধতি বা মেডিকেলের আলোকে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিসত্ত্বর উপাচার্যদের নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে উচ্চপর্যায়ে সভা করে আবারও সবার মতামত চাওয়া হবে। সবাই একমত হলেও পরবর্তী বছর থেকেই কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষার আয়োজন করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বন্ধে ওপেন বুক পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানেও তা অনুসরণ করা যেতে পারে। এছাড়া সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে। ঢাবি উপাচার্য বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় ত্রুটির কারণে ইচ্ছার বাইরে ভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ওই শিক্ষার্থীকে জোর করে সেই বিষয় পড়িয়ে তার কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না।
‘ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিকারীদের উপযুক্ত শাস্তির মাধ্যমে অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করলে জালিয়াতি কমবে না বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষায় নম্বর কম-বেশি দেয়ার অভিযোগ ওঠায় এমসিকিউ পদ্ধতি চালু করা হয়। তবে বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিও ত্রুটিপূর্ণ। এভাবে পরীক্ষা নেয়ার কোনো মানে নেই। তিনি বলেন, মেডিকেলের আলোকে পরীক্ষা পদ্ধতি না করে তা গুচ্ছ পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যেমন- সাধারণ পাবলিক, প্রযুক্তি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা আলাদা আলাদাভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে আয়োজন করা যেতে পারে। এতে পুরোপুরি জালিয়াতি বন্ধ না হলেও কিছুটা অনিয়ম কমবে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে। তই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা একই নিয়মে হতে পারে না। প্রতি বছর এর কিছুটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তবেই অনিয়ম রোধ করা সম্ভব। পুরোপুরি অনিয়ম বন্ধে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, চলতি বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে শিক্ষকদের সমন্বয়ে ১২ সদস্যর একটি কমিটি করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভর্তি পদ্ধতির পরিবর্তন আনা জরুরি। এটি গুচ্ছ বা এ-বি-সি আকারে ভিন্ন ক্যাটাগরির মাধ্যমে পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে। সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতি বন্ধ করা সম্ভব উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা দরকার। তবে বর্তমান পদ্ধতিতে মনিটরিং বৃদ্ধি এবং ভিজিল্যান্স টিম গঠন করে এর মানোন্নয়ন সম্ভব।সূত্র : জাগো নিউজ