বিএনপির ঢাকা ও লন্ডনে অবস্থানরত প্রভাবশালী অন্তত পাঁচ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের বিশ্ব-পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে লন্ডনের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। চিকিৎসার জন্য সেখানে খালেদা জিয়াকে নিতে হলে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া, তার ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়েও কিছু প্রক্রিয়া এখনও বাকি। ফলে সরকারিভাবে অনুমতি পাওয়ার পরই এ কাজগুলো সম্পন্ন হবে।
দায়িত্বশীলরা জানাচ্ছেন, ইতোমধ্যে গত মঙ্গলবার (৪ মে) বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেনের আলোচনায় যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে আসার পর পুরো ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। এই দলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করও রয়েছেন। এছাড়া, ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত চারটি দেশ থেকে যাত্রী পরিবহনেও অচলাবস্থা রয়েছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ফরেন রিলেশন্স কমিটির অন্যতম সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার এখনও পারমিশন দেয়নি। সরকার পারমিশন দেওয়ার পরই আমাদের যা যা করণীয় তা করতে পারবো। হাইকমিশনে যাওয়া, যে দেশে যাবেন, সে দেশে যোগাযোগ করা ইত্যাদি কার্যক্রম আমরা শুরু করতে পারবো। তবে আগে সরকারের পারমিশন লাগবে। এটার ওপর সবকিছু ডিপেন্ডস করছে।’ ইতোমধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে বিএনপির জোটসঙ্গী আসম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাও আহ্বান জানিয়েছেন। দলের আরেক নেতা বলেন, লন্ডনে যেতে হলে ওই দেশের সব রকম প্রসিডিউর মেনটেইন করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাভেল রুলস, হেলথ রুলসসহ যত নিয়ম আছে, ফলো করতে হবে। ফলে সরকার অনুমতি দিলেও সেটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
তবে ফরেন রিলেশন্স কমিটির এক সদস্য বলেন, লন্ডনে যেভাবে যোগাযোগ হয়েছে, তাতে দেশটির সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানা গেছে। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া হচ্ছে না। পুরো প্রক্রিয়াটি লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ত্বরান্বিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দলীয় কোনও কোনও নেতা বিষয়টিতে সরাসরি যুক্ত থাকলেও উদ্ধৃত হতে অনিচ্ছুক।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেও ২৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়। পরদিন তার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। গত সোমবার (৩ মে) বিকালে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তাকে নিয়মিত অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৬ মে) সকালে জানা যায়, খালেদা জিয়া করোনা নেগেটিভ হয়েছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, ম্যাডামকে লন্ডন নেওয়া হলে পুরো যাত্রা অনেক দীর্ঘ। সেক্ষেত্রে তার অক্সিজেন দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। আর এই যাত্রা তার শরীরের জন্য কতটা নিরাপদ হবে, তাও বিবেচনায় রয়েছে।
বুধবার (৫ মে) রাতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার তার বোনের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি নিয়ে যান। সাংবাদিকদের মন্ত্রী জানান, সরকার ইতিবাচকভাবেই বিষয়টি বিবেচনা করছে। পরে রাতেই চিঠিটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় মতামতের জন্য। বৃহস্পতিবার বিকালে সে চিঠি আইনমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব। মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রক্রিয়াটি যাচাই করা হবে। আজ কোনও সিদ্ধান্ত হবে না।
মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে বৃহস্পতিবার বিকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি এখনও বলছি, আন্তরিক হই আর যা-ই হই প্রথম হচ্ছে—মানবিক কারণে সরকার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই আন্তরিক। কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে তো আমরা যেতে পারি না। আইন বিবেচনা করে করতে হবে।’ সেক্ষেত্রে কেমন সময় লাগতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘যথাশিগগির এটা আমরা করবো।’
লন্ডন থেকে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনে আসার প্রক্রিয়াটি একটু সময় লাগছে। আপাতত এটা বলা যায়—প্রক্রিয়াটি শেষ করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এখানে কিছু ব্যাপার আছে, যেগুলো ঠিক হতে একটু সময় লাগছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখান থেকে এক মাসের মধ্যেই ফেরার কথা থাকলেও চিকিৎসার জন্য বেশি সময় লাগায় তার দেশে ফিরতে দেরি হয়। পরে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি।