দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসন সিলেট-১। এই আসনে সব রাজনৈতিক দলই হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ের অনেককেও প্রার্থী হতে দেখা যায় সিলেটে। তাদের নিঃসঙ্গ ও ব্যতিক্রমী প্রচারণাও নজরকাড়ে ভোটারদের। ছয়ফুর রহমান নামে সিলেটের সাধারণ এক রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। একবার সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গত জুলাইয়ে সিলেট সিটি নির্বাচনেই শাহজাহান মিয়া ওরফে শাহজাহান মাস্টার নামের এক অপরিচিত শ্রমজীবী মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে ৩০ হাজার ভোট পেয়ে চমকে দিয়েছিলেন।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন এরকম একজন প্রান্তিক মানুষ। ইউসুফ আহমদ নামের ওই যুবক পেশায় একটি সাবান কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। মোটর সাইাকেলে করে দোকানে দোকানে সাবান বিক্রি করেন তিনি। এবার সিলেট-১ আসনে ন্যাশন্যাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। আম প্রতীকের এই প্রার্থী ব্যতিক্রমী প্রচারের কারণে ইতোমধ্যে ভোটারদের নজর কেড়েছেন।
মোটর সাইকেলে করে সাবান বিক্রির সাথেসাথে নিজের নির্বাচনী প্রচারপত্র পত্র বিলি করেন ইউসুফ। নিজেই পোস্টারিং করেন। তার নেই কোন কর্মী বাহিনী। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সাধুরবাজার এলাকার ইউসুফ আহমদ এইচএসসি পাস করার পরই জীবিকার টানে কসকো কোম্পানির সাবান বিক্রি শুরু করেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সবকিছুই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। সিন্ডিকেটের কারণে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অবৈধ এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া ও সাধারন মানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতেই আমি প্রার্থী হয়েছি।
বুধবার বিকেলে নগরের রিকাবি বাজার এলাকায় একা একাই সাবান বিক্রি ও লিফলেট বিতরণ করছিলেন ইউসুফ আহমদ। এ সময় কথা হয় তার সাথে। ইউসুফ আলী বলেন, বিক্রয় প্রতিনিধি তো জনপ্রতিনিধির মতোই। আমি সব সময়ই জনগনের দোড়গোড়ায় যাই। ব্যবসায়ীরাও তো জনগনই। তাদের সাথে সবসময়ই মিশি। এবার বিক্রয় প্রতিনিধি থেকে জনপ্রতিনিধি হতে চাই। ইউসুফ। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তার চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে বিরোধীতা করা হয়েছে কী না জানতে চাইলে ইউসুফ বলেন, আমার কোম্পানি বলেছে, ‘সেলস ঠিক করে তুমি যা খুশি তাই কর, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়’। ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর এখন আমার সেলস আরো বেড়ে গেছে। সবাই খুশি মনে আমার কাছ থেকে সাবান কিনে নিচ্ছে।
বিএনপি বর্জন করায় এবারের নির্বাচনী আমেজে কতোটা প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা দল যদি নির্বাচন বয়কট করে তাহলে নির্বাচনী আমেজ তো কিছু নষ্ট হয়ই, তবে পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে এমনটি বলবো না। কারণ বয়কট করেছে বিএনপির নেতারা, সাধারণ মানুষ যারা বিএনপিকে ভোট দেয়, তারা বয়কট করে নি। কারণ তারা বিএনপির কর্মী নয়, তারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দেয়, নৌকার বিরুদ্ধে অন্য কোন শক্তিশালী প্রার্থী পেলে তাকেও ভোট দেবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এইবার যেহেতু বিএনপি নাই, তাই এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী এবার আশা করি আম মার্কাকে বেছে নেবে, ওলরেডি নিয়েছেও। যেখানেই যাচ্ছি সবাই আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় ইউসুফ নিজের বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন দুই লাখ টাকা। আর তার অস্থাবর সম্পদ আছে প্রায় ১ লাখ ৬০ টাকা মূল্যমানের।
এতো স্বল্প আয়ে নির্বাচনী খরচের উৎস সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেকে আমাকে পোস্টার ও লিফলেট দিয়ে সহায়তা করছে। অনেকেই সহযোগিতা করছে। এই যে আমি লিফলেট বিতরণ করি, এগুলো আমার টাকায় করা নয়, মানুষ আমাকে উপহার দিয়েছে। মানুষের টাকায়ই আমি ভোটের প্রচার চালাচ্ছি। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশা ব্যক্ত করে ইউসুফ বলেন, কিছুদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিলেট এসেছিলেন। সেদিন তিনি যে আশ্বাস দিয়েছেন, তার ৮০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারলে এইবার ভালো একটি নির্বাচন হবে এবং আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো। ৩০/৩৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হলেই পাশ করবো।
এবার সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ছাড়া মোট ৫ জন প্রার্থী হয়েছেন। ইউসুফ আহমদ ছাড়া অন্য তিন প্রার্থী হলেন সম্মিলিত মুক্তিজোটের প্রার্থী আব্দুল বাসিত, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফয়জুল হক এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. সোহেল আহমদ চৌধুরী।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৩৪৭ বার