প্রথম বাংলা অনলাইন পত্রিকা ও কিছু কথা
bartaadmin
মে ১৭, ২০১৮
প্রথম বাংলা অনলাইন পত্রিকা ও কিছু কথা২০১৮-০৫-১৭T২৩:৫৭:৩০+০০:০০
মুক্তমত, শিরোনাম, সর্বশেষ, সর্বাধিক পঠিত
স্বদেশ রায়-
আজ বারবার মনে পড়ছে, একটি বাংলা পোর্টালের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। ১৯৯৬ সালের কথা। এম আর আখতার মুকুল ভাই কলকাতা থেকে এসে আমাকে বললেন, ভারতের একটি বড় গ্রুপ একটা বাংলা অনলাইন পত্রিকা করতে চায়, তারা তাদের ঢাকা এডিটর খুঁজছে। আমি তাদের বলেছি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তাদের বলে এসেছি, ছেলেটির সব মাধ্যমে সাংবাদিকতার ও প্রোডাকশনের অভিজ্ঞতা আছে। খুবই পড়ুয়া। ভারতের ওরা যোগাযোগ করবে কিনা তার থেকে অনেক গুণীজনের সামনে মুকুল ভাইয়ের কাছ থেকে এমন একটি প্রশংসা শুনে একটু লজ্জা পেলেও ভালো লাগলো। তখন বয়সও কম।
এর সপ্তাহ খানেকের ভেতর দেখি, হোটেল ঈশা খাঁ থেকে আমাকে সুব্রত সেন নামে একজন ফোন করছেন। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা এসেছেন। কখন কীভাবে দেখা করতে পারেন। তখনও সম্ভবত গ্রামীণফোন চালু হয়নি বা কেবল হয়েছে, যাই হোক আমার খুব বড় সেটের একটা সিটিসেল মোবাইল ছিল। তাকে নম্বরটি দিয়ে বললাম, এই আমার সেল নম্বরও, আপনি কখন কমফোর্ট ফিল করেন, সেটা আমাকে জানাবেন। রাত ১২টার দিকে সুব্রত জানালেন, কাল একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করলে ভালো হয়। যাই হোক ওই ব্রেকফাস্ট মিটিংয়ে সুব্রত আমাকে জানালেন, তার সাংবাদিকতা ইংরেজিতে। স্টেটসম্যানের সাংবাদিকতা ছেড়ে তিনি এই বাংলা পোর্টালটির দায়িত্ব নিয়েছেন। এটাই হবে বাংলা ভাষায় প্রথম পোর্টাল আর সুব্রত’র ভাষায় অন্তর্জাল পত্রিকা। আমি পত্রিকাটির ঢাকার দায়িত্ব নিলে সুব্রত খুব খুশি হবেন। স্যালারি ও অন্যান্য সুবিধা ঠিক হয়ে গেলো খুব তাড়াতাড়িই। কারণ, তাদের বাজেট ভালো ছিল। কোম্পানিও চ্যাটার্জি গ্রুপ অর্থাৎ হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসহ বিশাল গ্রুপের মালিক। এরপরে সুব্রত’র সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ এই অন্তর্জাল পত্রিকা ও তার নিজের ফিল্ম নিয়ে কথা হয়। আমরা দুজনেই সমবয়সী। সুব্রত আমার দুই বছরের ছোট। তাই বন্ধুত্বও হয়ে যায় দ্রুত। সুব্রত কলকাতা গিয়েই আমার নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দিলেন। কাজ শুরু করি। একেবারে অজানা একটা জগৎ। কারণ, বাংলা ভাষার প্রথম অনলাইন পোর্টাল। নাম বাংলালাইভডটকম। লোগোটা খুবই সুন্দর করেছে। যাই হোক, ঢাকায় সর্বাধিক প্রচারের সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের দায়িত্বে, অন্যদিকে নতুন একটা জগতের কাজ। তবে প্রথমত অসুবিধা হলো না, যেহেতু আমার ঘুম খুবই কম, সাংসারিক দায়িত্ব আরও কম। তাই ষোলো-সতের ঘণ্টা কাজ ও পড়াশোনার মধ্যে থাকলে কোনও অসুবিধা নেই।
আমাদের পাঠক-টার্গেট ছিল ঢাকা, কলকাতা, ও প্রবাসী সব বাঙালি। তাই খবর ও সাহিত্য- দুটোই ছিল সমানতালে। এছাড়া কলকাতার বাঙালিরা খবরের চেয়ে সাহিত্য ও বিনোদন পছন্দ করেন বেশি। অন্যদিকে ঢাকার পাঠক রাজনৈতিক খবর পছন্দ করেন। এসব চিন্তা করেই এগুতে থাকলাম। আমার পথচলা শুরু সন্ধানী গ্রুপ থেকে। সবাই ভালোবাসে আমাকে। তাদের সহযোগিতা পেতে কোনও অসুবিধা হলো না। প্রথম অসুবিধা হলো, তখনও নব্বইভাগ লেখক হাতে লেখেন। তাদের লেখা এখান থেকে কম্পোজ করে পাঠাতে হলে এখানেও একটা কম্পোজ সেকশন খুলতে হয়। তার চেয়ে হিসাব করে দেখা গেলো ফেডেক্স বা ডিএসএলের মাধ্যমে পাঠালে খরচ কম হয়। সেভাবেই চলতে থাকে। নিউজের ফরম্যাট নিয়ে কোনও অসুবিধা হলো না। কারণ, সামাদ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার কারণে বিবিসির ফরম্যাটটি জানা ছিল। বেতার সাংবাদিকতার ওই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগলো। সর্বোচ্চ ২৪০ শব্দের মধ্যে নিউজ শেষ করার অভিজ্ঞতা ছিল। সেটাই কাজে লাগলো। সুব্রতও খুশি হলেন নিউজের লেনথ দেখে। এরপর এলো সাহিত্যের প্রবন্ধ। এখানে সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হলো, সৈয়দ আলী আহসান স্যারের লেখায়। রেডিও সাংবাদিকতার দিকপাল ছিলেন তিনি। ৬৪০ শব্দ বললে ঠিক ৬৪০ শব্দে তিনি লেখা শেষ করে দিতেন। আর সেভাবেই লেখার গাঁথুনি। সব দেখে মনে হলো, নিউজ, সাহিত্য বিভাগের জন্যে রেডিও সাংবাদিকতাটা ফলো করা যেতে পারে। সময়টা তখন বড় বেশি চ্যালেঞ্জের ছিল, কারণ তখনও স্ক্রিনে পড়ার অভ্যাসটি গড়ে ওঠেনি। খুবই কম লোক স্ক্রিনে পড়তো। এছাড়া স্মার্ট ফোন আসেনি। তখন ছিল পিসির যুগ। এখন বাস্তবতা হলো ট্যাব ও স্মার্ট ফোনই জনপ্রিয় করেছে পোর্টাল সাংবাদিকতা। এছাড়া এরপরে বেশ কয়েকটি জেনারেশন চলে গেছে। এখন অন্তত দুটো জেনারেশন হয়েছে যারা স্ক্রিনে পড়তে অভ্যস্ত। সব মিলিয়ে এখন ধীরে ধীরে পোর্টালের যুগ শুরু হচ্ছে। এখন আর পোর্টালে শব্দ নিয়ে ভাবতে হয় না। কারণ, অনেক দীর্ঘ লেখাও পাঠক স্বাচ্ছন্দ্যে স্ক্রিনে পড়ে। আমরা সেদিন সত্যিকার অর্থে বাংলালাইভ ডটকমে সফল হইনি। এর তিনটি কারণ ছিল। এক. তখন শুধু পিসির যুগ, দুই. চ্যাটার্জি গ্রুপের বড় ধরনের একটা বিপর্যয়, তিন. সুব্রত পুরোপুরি ফিল্মে চলে গিয়ে বিখ্যাত পরিচালক সুব্রত সেন হওয়া। আজ যখন ২২ বছর পরে এসে দেখছি, এখন যাদের বয়স ২২ থেকে ২৪ তারা দাপটের সঙ্গে অনলাইন সাংবাদিকতা করছে, তখন সত্যি মন ভরে যায়। যখন অনলাইনে লিখি, ফেসবুকে সেসব লেখার হাজার হাজার শেয়ার হয়, তখন এই তরুণদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বেড়ে যায়। দুঃখ ভুলে যাই প্রথম বাংলা পোর্টালের একজন প্রতিষ্ঠাতা হয়ে সেদিন সত্যিকার অর্থে সফল হতে পারেনি, সে ব্যথাটুকু। আবার মনে মনে ভাবি, কিছু যে করিনি, তা নয়। অন্তত শুরু তো করেছিলাম। তাই এই সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হয়ে আজ লিখতে পারছি। আশা করি এই প্রজন্মের হাত ধরে বাংলা পোর্টাল সাংবাদিকতা এগিয়ে যাবে অনেক দূর। আমরা যে ফরম্যাটটি তৈরি করার চেষ্টা করেছিলাম, তারা তাতে আরও অনেক কিছু যোগ বিয়োগ করে এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারবে।লেখক: সাংবাদিকতায় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত।
এর সপ্তাহ খানেকের ভেতর দেখি, হোটেল ঈশা খাঁ থেকে আমাকে সুব্রত সেন নামে একজন ফোন করছেন। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা এসেছেন। কখন কীভাবে দেখা করতে পারেন। তখনও সম্ভবত গ্রামীণফোন চালু হয়নি বা কেবল হয়েছে, যাই হোক আমার খুব বড় সেটের একটা সিটিসেল মোবাইল ছিল। তাকে নম্বরটি দিয়ে বললাম, এই আমার সেল নম্বরও, আপনি কখন কমফোর্ট ফিল করেন, সেটা আমাকে জানাবেন। রাত ১২টার দিকে সুব্রত জানালেন, কাল একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করলে ভালো হয়। যাই হোক ওই ব্রেকফাস্ট মিটিংয়ে সুব্রত আমাকে জানালেন, তার সাংবাদিকতা ইংরেজিতে। স্টেটসম্যানের সাংবাদিকতা ছেড়ে তিনি এই বাংলা পোর্টালটির দায়িত্ব নিয়েছেন। এটাই হবে বাংলা ভাষায় প্রথম পোর্টাল আর সুব্রত’র ভাষায় অন্তর্জাল পত্রিকা। আমি পত্রিকাটির ঢাকার দায়িত্ব নিলে সুব্রত খুব খুশি হবেন। স্যালারি ও অন্যান্য সুবিধা ঠিক হয়ে গেলো খুব তাড়াতাড়িই। কারণ, তাদের বাজেট ভালো ছিল। কোম্পানিও চ্যাটার্জি গ্রুপ অর্থাৎ হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসহ বিশাল গ্রুপের মালিক। এরপরে সুব্রত’র সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ এই অন্তর্জাল পত্রিকা ও তার নিজের ফিল্ম নিয়ে কথা হয়। আমরা দুজনেই সমবয়সী। সুব্রত আমার দুই বছরের ছোট। তাই বন্ধুত্বও হয়ে যায় দ্রুত। সুব্রত কলকাতা গিয়েই আমার নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দিলেন। কাজ শুরু করি। একেবারে অজানা একটা জগৎ। কারণ, বাংলা ভাষার প্রথম অনলাইন পোর্টাল। নাম বাংলালাইভডটকম। লোগোটা খুবই সুন্দর করেছে। যাই হোক, ঢাকায় সর্বাধিক প্রচারের সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের দায়িত্বে, অন্যদিকে নতুন একটা জগতের কাজ। তবে প্রথমত অসুবিধা হলো না, যেহেতু আমার ঘুম খুবই কম, সাংসারিক দায়িত্ব আরও কম। তাই ষোলো-সতের ঘণ্টা কাজ ও পড়াশোনার মধ্যে থাকলে কোনও অসুবিধা নেই।
আমাদের পাঠক-টার্গেট ছিল ঢাকা, কলকাতা, ও প্রবাসী সব বাঙালি। তাই খবর ও সাহিত্য- দুটোই ছিল সমানতালে। এছাড়া কলকাতার বাঙালিরা খবরের চেয়ে সাহিত্য ও বিনোদন পছন্দ করেন বেশি। অন্যদিকে ঢাকার পাঠক রাজনৈতিক খবর পছন্দ করেন। এসব চিন্তা করেই এগুতে থাকলাম। আমার পথচলা শুরু সন্ধানী গ্রুপ থেকে। সবাই ভালোবাসে আমাকে। তাদের সহযোগিতা পেতে কোনও অসুবিধা হলো না। প্রথম অসুবিধা হলো, তখনও নব্বইভাগ লেখক হাতে লেখেন। তাদের লেখা এখান থেকে কম্পোজ করে পাঠাতে হলে এখানেও একটা কম্পোজ সেকশন খুলতে হয়। তার চেয়ে হিসাব করে দেখা গেলো ফেডেক্স বা ডিএসএলের মাধ্যমে পাঠালে খরচ কম হয়। সেভাবেই চলতে থাকে। নিউজের ফরম্যাট নিয়ে কোনও অসুবিধা হলো না। কারণ, সামাদ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার কারণে বিবিসির ফরম্যাটটি জানা ছিল। বেতার সাংবাদিকতার ওই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগলো। সর্বোচ্চ ২৪০ শব্দের মধ্যে নিউজ শেষ করার অভিজ্ঞতা ছিল। সেটাই কাজে লাগলো। সুব্রতও খুশি হলেন নিউজের লেনথ দেখে। এরপর এলো সাহিত্যের প্রবন্ধ। এখানে সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হলো, সৈয়দ আলী আহসান স্যারের লেখায়। রেডিও সাংবাদিকতার দিকপাল ছিলেন তিনি। ৬৪০ শব্দ বললে ঠিক ৬৪০ শব্দে তিনি লেখা শেষ করে দিতেন। আর সেভাবেই লেখার গাঁথুনি। সব দেখে মনে হলো, নিউজ, সাহিত্য বিভাগের জন্যে রেডিও সাংবাদিকতাটা ফলো করা যেতে পারে। সময়টা তখন বড় বেশি চ্যালেঞ্জের ছিল, কারণ তখনও স্ক্রিনে পড়ার অভ্যাসটি গড়ে ওঠেনি। খুবই কম লোক স্ক্রিনে পড়তো। এছাড়া স্মার্ট ফোন আসেনি। তখন ছিল পিসির যুগ। এখন বাস্তবতা হলো ট্যাব ও স্মার্ট ফোনই জনপ্রিয় করেছে পোর্টাল সাংবাদিকতা। এছাড়া এরপরে বেশ কয়েকটি জেনারেশন চলে গেছে। এখন অন্তত দুটো জেনারেশন হয়েছে যারা স্ক্রিনে পড়তে অভ্যস্ত। সব মিলিয়ে এখন ধীরে ধীরে পোর্টালের যুগ শুরু হচ্ছে। এখন আর পোর্টালে শব্দ নিয়ে ভাবতে হয় না। কারণ, অনেক দীর্ঘ লেখাও পাঠক স্বাচ্ছন্দ্যে স্ক্রিনে পড়ে। আমরা সেদিন সত্যিকার অর্থে বাংলালাইভ ডটকমে সফল হইনি। এর তিনটি কারণ ছিল। এক. তখন শুধু পিসির যুগ, দুই. চ্যাটার্জি গ্রুপের বড় ধরনের একটা বিপর্যয়, তিন. সুব্রত পুরোপুরি ফিল্মে চলে গিয়ে বিখ্যাত পরিচালক সুব্রত সেন হওয়া। আজ যখন ২২ বছর পরে এসে দেখছি, এখন যাদের বয়স ২২ থেকে ২৪ তারা দাপটের সঙ্গে অনলাইন সাংবাদিকতা করছে, তখন সত্যি মন ভরে যায়। যখন অনলাইনে লিখি, ফেসবুকে সেসব লেখার হাজার হাজার শেয়ার হয়, তখন এই তরুণদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বেড়ে যায়। দুঃখ ভুলে যাই প্রথম বাংলা পোর্টালের একজন প্রতিষ্ঠাতা হয়ে সেদিন সত্যিকার অর্থে সফল হতে পারেনি, সে ব্যথাটুকু। আবার মনে মনে ভাবি, কিছু যে করিনি, তা নয়। অন্তত শুরু তো করেছিলাম। তাই এই সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হয়ে আজ লিখতে পারছি। আশা করি এই প্রজন্মের হাত ধরে বাংলা পোর্টাল সাংবাদিকতা এগিয়ে যাবে অনেক দূর। আমরা যে ফরম্যাটটি তৈরি করার চেষ্টা করেছিলাম, তারা তাতে আরও অনেক কিছু যোগ বিয়োগ করে এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারবে।লেখক: সাংবাদিকতায় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২৭৪ বার