পীর হাবিবুর রহমান
আমাদের একাত্তরের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ছাত্রজনতা স্বাধীনতা ও তার নায়ক বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য যে সংগ্রাম করেছেন, বর্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও গণধর্ষণের বিরুদ্ধে যে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন তা ইতিহাসে স্মরণীয়। বিশ্বজনমত গড়তে তাদের অবদান অবিস্মরণীয়। লন্ডন শহরের বাঙালিরাই নন, গোটা ব্রিটেনপ্রবাসী বাঙালিই সে সংগ্রামের অসীম সাহসী যোদ্ধা। ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, লুটন থেকে শুরু করে এমন কোনো শহরের প্রবাসী বাঙালি নেই যারা সে সংগ্রামে শামিল হননি। ছাত্ররা যেমন রাতদিন সংগঠকের ভূমিকায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তেমনি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও প্রবাসীরা অর্থ ব্যয়সহ তাদের শ্রম সে সংগ্রামে উজাড় করে দিয়েছেন মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য।
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ’৭১-এর গণহত্যার সময় তিনি মানবাধিকার সম্মেলনে যোগ দিতে জেনেভায় গিয়েছিলেন। তার এক বছর আগে বড় ছেলে আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। ’৭১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি করাচি হয়ে রওনা দিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি আবু সাঈদ চৌধুরী জেনেভায় পৌঁছেন। বড় ছেলেকে ফেরার পথে লন্ডনে দেখে আসতে তাঁর স্ত্রী, ছোট ছেলে ও মেয়ে সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে জেনেভার একটি পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রকে গুলি করে হত্যার খবরে বিচারপতি চৌধুরী বিচলিত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি প্রাদেশিক শিক্ষা সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমার নিরস্ত্র ছাত্রদের গুলি চালানোর পর আমার আর উপাচার্য পদে থাকার কোনো যুক্তি নেই।’
২৬ মার্চ সকাল থেকে বিবিসির খবরে বলা হচ্ছিল, ঢাকা বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গুরুতর কিছু ঘটেছে। কতটা গুরুতর তা বলা যাচ্ছে না। এ খবরে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল জেনেভা শহর কাঁপছে। বরফে ঢাকা পাহাড় আর সূর্যের কিরণমাখা লেকের দৃশ্য চোখে পড়ছে না। মর্মামত হৃদয়ে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের কথাই মনে পড়ছে। আর অস্থিরতায় ভুগছেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের হৃদয় থেকে হীরের টুকরো লক্ষীসন্তান হিসেবে জানতেন। সকাল সাড়ে ১০টায় জেনেভায় জাতিসংঘ ভবনে মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশন শুরু হয়। মানবাধিকার সম্মেলনের চেয়ারম্যান ছিলেন ভেনেজুয়েলার বিশিষ্ট কূটনীতিক মিস্টার এগিলার। অধিবেশনে চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে শুরুতেই বিবিসির খবরের কথা উল্লেখ করে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এখনই আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। আজকেই লন্ডনে ফিরে যাব, সম্ভব হলে ঢাকায়। অধিবেশনে শেষ পর্যন্ত থাকা হচ্ছে না।’ সেদিন বিকালেই তিনি লন্ডনের উদ্দেশে আকাশে উড়লেন আর বিমানবন্দরে তাঁকে বড় ছেলে কায়সার প্রবাসী হাবিবুর রহমানকে নিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন। লন্ডনে নেমেই তিনি জানতে পারলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে বেআইনি সংগঠন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করেছেন। লন্ডনে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিন সপ্তাহ থাকার জন্য যে ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন তিনি সেখানেই উঠলেন।
২৭ মার্চ শনিবার সকালে ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের বিবরণী এবং ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার খবর বিভিন্ন সংবাদপত্র পড়ে বিস্তারিত জানতে পারলেন। কেনেথ ক্লার্কের করাচি থেকে পাঠানো এক রিপোর্টে বলা হয়, ‘জিন্নাহর একতার স্বপ্ন রক্তে ধুয়েমুছে গেছে।’ সেদিনের লন্ডন টাইমসের খবরে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।’ সব সংবাদপত্রেই বঙ্গবন্ধুর ছবি, ইয়াহিয়ার দেশদ্রোহী ঘোষণা ও তার অশুভ পরিণতি সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়। বিচলিত ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এ গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং বিশ্বজনমত গড়ায় ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বর্বর গণহত্যা বন্ধ, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি চান।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৬৯-এর গণঅভুত্থানের পর লন্ডন সফরকালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করলেও তারা নানা কোন্দলে জর্জরিত ছিল। আওয়ামী লীগসহ প্রবাসী বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিবর্গ এবং টগবগে তারুণ্যের ছাত্রসমাজ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তিনি সবাইকে একটি কথাই বলেলন, এই সময়ে কোনো বিভক্তি নয়। সবার ঐক্য এবং একটি মাত্র কমিটি গঠন করতে হবে। সে আলোকে ছাত্ররা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ, আর সিনিয়ররা পাঁচ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেন। সে আলোকে গোটা ইংল্যান্ডজুড়ে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর অভিভাবকত্বে বাঙালি প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নামেন। তারা প্রচার চালান। প্রচারপত্র, ব্যানার, ফেস্টুন, সমাবেশ চালিয়ে যেতে থাকেন। পাকিস্তান-প্রবাসী অধ্যুষিত বার্মিংহামে বাঙালি প্রবাসীদের সঙ্গে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রজারগুইন নামের একজন আইরিশ ইংরেজ শিক্ষক যিনি বাংলায় অসাধারণ পারদর্শী ছিলেন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তিনিও সেই সংগ্রামে শরিক হয়েছিলেন। ক্লারিজ হোটেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। যাক, সেই সংগ্রামে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে মধ্যমণি করে লন্ডনের ট্রাফেলগার স্কয়ারে যে সমাবেশ তারা করেছিলেন, পুলিশ বলেছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই অভূতপূর্ব বৃহত্তম সমাবেশ।
সম্প্রতি সরকারের ২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসে বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখায় দেশের বিশিষ্ট ১২ ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিগগিরই তাদের নামে গেজেট জারি করা হবে। গেজেট জারির পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকার-নির্ধারিত প্রাপ্য সম্মানী ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পাবেন তারা। এ খবর প্রকাশের পর যুক্তরাজ্য-প্রবাসীদের মধ্যে নানা মত ও অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যে ১২ জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা ছিলেন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা। তারা হলেন- বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি বরিশাল সদরের সুলতান মাহমুদ শরীফ, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সন্তান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক, দৈনিক মানবকণ্ঠের সাবেক সম্পাদক সদ্যপ্রয়াত জাকারিয়া চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত রাজিউল হাসান, বিশিষ্ট গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের অন্যতম সহসভাপতি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সন্তান সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, পাট ও পাটজাত দ্রব্য ব্যবসায়ী আবুল খায়ের নজরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্যের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যাট সিলেটের অম্বরখানার সন্তান মাহমুদ আবদুর রউফ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার ও হবিগঞ্জ জেলা আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর আফরাজ আফগান চৌধুরী। তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং পাকিস্তানি গণহত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন।
সেখানে সুলতান শরীফ মূল উদ্যোক্তা হলেও আজকের বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অন্যতম আহ্বায়ক ছিলেন। যাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এটা তাদের বীরত্বের পাওনা। এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে হয়। জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের হাতে জীবিত ও মৃত ৫৭ জনের তালিকা আটজন স্বাধীনতা সংগ্রামী দিয়ে বলেছিলেন, এ ছাড়াও লন্ডনের বাইরে বিভিন্ন শহরে আরও অনেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা হলেন- এনামুল হক, সুলতান মাহমুদ শরীফ, জাকারিয়া চৌধুরী, এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আফরোজ আফগান চৌধুরী, এ বি এম খায়রুল হক, আবদুল মজিদ চৌধুরী মঞ্জু, ডা. আবদুল হাফিজ. ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লুৎফুর মতিন, মাহমুদ এ রউফ, রাজিউল হাসান রঞ্জু, শফিউদ্দিন মাহমুদ বুলবুল, আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার, ফাহমিদা মঞ্জু মজিদ, রুনী সুলতানা, মিসেস খয়ের, নিখিলেশ চক্রবর্তী, বেণু চক্রবর্তী, শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ, ব্যারিস্টার সাখাওয়াত হোসেন, আবুল হাসেম, সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, ডা. হালিমা আলম, শেলি খায়ের, আফরিন, আনিস রহমান, হাবিবুর রহমান ভূইয়া, হাবিবুর রহমান, জাকির আহমেদ, নজরুল ইসলাম, প্রয়াতদের মধ্যে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গউস খান, আজিজুল হক ভূইয়া, শেখ আবদুল মান্নান, ফজলে হাসান আবেদ, বি এইচ তালুকদার, আবদুল মতিন, লুলু বিলকিস বানু, ওয়ালী আশরাফ, আনোয়ারা জাহান, ব্যারিস্টার শামসুল মোর্শেদ, মুন্নি রহমান, সুরাইয়া খানম, ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাহজাহান, জেবুন্নেসা বখত, হাবিবুর রহমান, তোসাদ্দেক আহমেদ, ডা. মনজুর মোর্শেদ তালুকদার, আমির আলী, ড. নোয়াজেশ, সৈয়দ মোবাশ্বের চৌধুরী, ডা. নূরুল আলম, ডা. আলম ও মতিউর রহমান চৌধুরী।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা প্রবাসীদের মধ্যে আরও অনেকের নাম পাওয়া গেছে। এটি দিয়েছেন যুক্তরাজ্য-প্রবাসী লেখক সাংবাদিক গবেষক সুজাত মনসুর। সেখান থেকে কিছু নাম দেওয়া গেল। নেসার আলী, হাজী সুরতুর রহমান, মিম্বর আলী, আবদুল মতলিব চৌধুরী, বি এইচ তালুকদার, মিনহাজ উদ্দিন, আবদুল মান্নান ছানু মিয়া ’৭৩ সালের নির্বাচিত এমপি, আলহাজ এম ইসমাইল, আবদুর রউফ খান, মাহমুদ শরীফ, আবদুল হামিদ, তৈয়বুর রহমান, সৈয়দ আলী, আবু তাহির, আবদুর রকীব, মইনুদ্দিন আহমদ, বশীর উদ্দিন আহমদ, সিফত উল্লাহ, রমজান আলী, রউফ খান, রিয়াজুল হক, ছমরু মিয়া, নাজির উদ্দিন আহমদ, শফিকুর রহমান, নজব মিয়া, আবদুল হামিদ, আবদুল হক, এম এ হাশেম, এ কে এম হক, আব্বাস আলী, সৈয়দ নূরুল হক, সৈয়দ আবদুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, মহিবুর রহমান, এ গফুর, এ আজিজ চৌধুরী, আবদুল আজিজ, এ গণি, এ বি এম ইসহাক, সিরাজুল হক, আবুল বশর আনসারী, জিল্লুল হক, বেগম হেলেন তালুকদার, এ হাকিম, হাফিজ মজির উদ্দিন, জেবুন্নেসা বক্স, শেফালি হক প্রমুখ।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, কেবল নামের তালিকা পাওয়া গেছে কিন্তু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়নি। যাবতীয় তথ্যসহ একটি ফরম পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়। যে ১২ জনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার তারা ফরম পূরণ করে দিয়েছেন। জানা যায়, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকিরা এ ফরম পূরণ করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিলাভের আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মৃতদের পক্ষে তাদের পরিবার বা সন্তানরা এ আবেদন করার যোগ্যতা রাখেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও এ বিষয়ে আরও তৎপর ও আন্তরিক হওয়া দরকার। একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে সে সময় যারা অবদান রেখেছেন তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিদানের। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, যুক্তরাজ্যস্থ ঢাকার হাইকমিশন এবং জীবিত প্রবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সহযোগিতা নিতে পারেন। বিষয়টি সংসদেও আলোচনা হয়েছে। এটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ নিয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সে সময় ব্রিটেনপ্রবাসী বলতে ৯০ ভাগই ছিলেন সিলেট অঞ্চলের অধিবাসী। তারা সে সময় ঐতিহাসিক ভূমিকাই পালন করেননি, তার আগে পরে সব বিপদে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে যে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন সেখান থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে ৩ লাখ ৯২ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন। সে আন্দোলন ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত হয়েছিল বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্ববান সবার শ্রদ্ধার আসনে থাকা মানুষটি নেতৃত্বে থাকায়। বঙ্গবন্ধুর আগরতলার মামলায় তারা খরচ দিয়ে ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামকে পাঠিয়েছিলেন। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁর জীবিত দুই কন্যার পাশে দাঁড়াতে ভোলেননি। সামরিক শাসনমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য তারা সংগ্রাম করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুক্তরাজ্য-প্রবাসীদের স্বীকৃতিদান সরকারের এক শুভ উদ্যোগ। এখানে বিতর্ক সৃষ্টি কারও জন্য শুভ নয়। যুক্তরাজ্য-প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধারা আইন, বিধিবিধান অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য মর্যাদা আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। এটি যেমন আমাদের প্রত্যাশা তেমনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও আন্তরিকতার সঙ্গে সুন্দরভাবে এটি সম্পন্ন করবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের যেসব প্রবাসী সেদিন সংগ্রামে শামিল ছিলেন তাদেরও স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আমরা সব প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই। লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২৩ বার