প্রশ্নফাঁসঃবাতিল হতে পারে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা
২ এপ্রিল থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হতে যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ ও পরীক্ষার শৃঙ্খলতা বজায় রাখতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এরইমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো, ভাইবারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সম্ভাব্য সকল শাখায় প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত তৎপরতা নজরদারী অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানা গেছে, এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তৎপরতা চালিয়ে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের বেশ কিছু সদস্যকে আইনের আওতায় এনেছে। পাশাপাশি কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চিহ্নিত শিক্ষার্থীদের যাচাই-বাছাইয়ের পর মিডিয়ার সামনে তাদের পরিচয় তুলে ধরার পাশপাশি পরীক্ষা বাতিল করাসহ তাদের অভিভাবকদেরও সাজার আওতায় আনা হবে বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁসকারী গ্রুপগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় থেকে গ্রুপ এডমিন ও সক্রিয় শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে, HSC All Exam 100% Out Question & suggestion 2018, গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজারেরও অধিক। এছাড়া, `সকল বোর্ড পরীক্ষার আগের রাতের ফাঁসকৃত সাজেশন ২০১৬ নেট২৪.কম` নামের একটি ফেসবুক পেজ, যার ফলোয়ার সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজারেরও বেশি , প্রায় ৭০ হাজার ফলোয়ার সংখ্যার `ফাঁস হওয়া প্রকৃত প্রশ্ন পত্র ব্যাংক` নামের ফেসবুক পেজসহ একাধিক পেজ- এ তদারকি করে সক্রিয়দের চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার অংশ হিসেবে প্রতারক চক্রকে ধরতে তারা বেশ কিছু প্রকৃত পরীক্ষার্থীর সহযোগিতা নিচ্ছে। কেননা প্রতারক চক্র তাদের নিরাপত্তার খাতিরে স্বয়ং পরীক্ষার্থী ছাড়া কারো সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে না এবং তারা নিজেরা নিরাপদ অবস্থানে থাকতে আরো নানান কৌশল অবলম্বন করে।এরইমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃক অনুসন্ধানের একটি অডিওক্লিপ এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যেখানে একজন শিক্ষার্থী একটি গ্রুপের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসকারীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দেন। প্রশ্ন কিনতে ওই শিক্ষার্থী কিভাবে অর্থ লেনদেন করবে তা জানতে চাইলে তাকে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়। প্রশ্ন পাওয়া যা বে কিনা জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি শিক্ষার্থীকে শতভাগ নিশ্চয়তা দেন। অর্থ লেনদেনের পর প্রশ্নপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানাবেন কিনা তা জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি জানান, টাকা পাওয়ার পরে ওই ফাঁসকারী শিক্ষার্থীকে গ্রুপে জয়েন করাবেন এবং গ্রুপে প্রশ্নপত্র শেয়ার করলে শিক্ষার্থী তা পেয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় একাধিক প্রশ্নপত্র ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে কোনভাবেই পরীক্ষা শুরুর পূর্ব মুহূর্তেও সঠিক প্রশ্নপত্র নির্ধারণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাপ্ত প্রশ্নপত্র অবশ্যই প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। যার মাধ্যমে প্রতারক চক্রের সদস্যরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় তৎপরতা চালাচ্ছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত তৎপরতা থেকে বিরত থাকতে অভিভাবকদেরও সাবধান করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজের সন্তান যাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী গ্রুপ/পেজের সঙ্গে জড়িত থেকে শাস্তির আওতায় না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে। কেননা প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত তৎপরতায় যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্তানের সংশ্লিষ্টতা পায় তবে সন্তানের পাশাপাশি ওই অভিভাবকেও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গেছে।