ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় দাবি জানালেন এমপি মিসবাহ
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করলেনসুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বুধবার বিকাল ৩ টায় সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি সুনামগঞ্জ জেলাকে সেই সাথে দুর্গত এলাকা ঘোষণারও দাবী জানান তিনি। এমপি মিসবাহ হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যেসকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদার আর যেসব দুর্নীতিবাজ পিআইসির কর্মকার্তার দুর্নীতির কারণে হাওরের কৃষক তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তোলতে পারেনি সেইসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করারও দাবী জানান। তিনি সেই সাথে সকল দূর্ণীতিবাজদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করারও দাবী জানান। পীর মিসবাহ হুসিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, এই তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ফঁসলরক্ষা বাধের কোন বিল দেওয়া যাবে না, দিতে দেওয়া হবে না। সুনামগঞ্জে ব্যাপক ফসলহানীর পর কৃষকে বাঁচিয়ে রাখতে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে ১০ টাকা কেজি ধরে চাল বিক্রির সরকারি কার্যক্রম অব্যাহত রেখে এর আওতা দ্বিগুণ করতে হবে। কৃষকের পুর্নবাসনের জন্য কৃষি ঋণ মওকুফ করে নতুন করে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি জলমহালে ভাসানপানিতে কৃষকের মাছ ধরার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে পাঁ” বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে জেলা জাতীয় পার্টি। দুপুরের পর থেকে বোরো ফসল হারানো বিক্ষোব্ধ কৃষাণ-কৃষাণীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিক্ষোব্ধ মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকা। সমাবেশে পীর মিসবাহ আরও বলেন, বছরের একটি মাত্র ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর সুনামগঞ্জের কৃষকরা আজ দিশেহারা। মানুষ প্রতি বছর এই বোরো ফসলের পেছেনে তাদের সর্বস্ব বাজি ধরে আশায় বসে থাকে এই ফসল ঘরে তোলে তার যাবতীয় চাহিদা মেটাবে। তিনি বলেন, গত বছরও বাঁধ ভেঙে মানুষের ফসল তলিয়েছে। এবারও আশায় বুক বেধে কৃষকেরা বসেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, একদিকে প্রকৃতি আমাদের প্রতি বিমুখ হয়েছে, অন্যদিকে কিছু দুর্নীতিবাজ আমাদের কৃষকের আহারে হাত দিয়েছে। পীর মিসবাহ বলেন, অনেক জায়গায় সময়মত বাঁধ নির্মাণ হয়নি। ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শুরু করা হয়েছে বৃষ্টি আসার পরে। যে কারণ পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধগুলো ভাঙতে শুরু করেছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি।
জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে ও সাজ্জাদুর রহমান সাজুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা জাতীয় পার্টি নেতা সাইফুর রহমান সমছু, আব্দুর রহমান মাস্টার, মোহাম্মদ আলী খোশনূর, আব্দুর রশিদ, মনির উদ্দিন মনির, ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক, এরশাদ আহমদ, ফারুক আহমদ মেনর, জসিম উদ্দিন, আব্দুল কাদির প্রমুখ। এদিকে, বুধবার দুপুরে পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে সংবাদ সম্মেলেন করেছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল। জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই দুই নেতাও দাবি করেন, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির যে অভিযোগ ওঠেছে তার যেন সুষ্ঠু তদন্ত হয়। তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত যাতে কোন কাজের বিল দেয়া না হয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতি বোরো ধান আবাদ হয়েছে। গত কয়েক দিনের অকাল বন্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ও জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে আবাদকৃত ফসলের চার তৃতীয়াংশ। জেলার ৪০ টি ধানী বড় হাওরের মধ্যে এই মুহূর্তে মাত্র ৪ টি হাওরের ফসল বাদে বাকি সবগুলোর ফসল এখন পানির নিচে।