পাঁচ বছর আগে ঢাকা এসেছিলেন ফিফার তৎকালীন সভাপতি সেপ ব্লাটার।  তার হাত দিয়েই সিলেট ফুটবল একাডেমির উদ্বোধন করিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সেই একাডেমি অবশ্য চালিয়ে যেতে পারেনি বাফুফে। সাম্প্রতিক সময়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে জাতীয় ফুটবল দলও। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে এখন বাংলাদেশ। এমন এক সময়ে ঢাকা সফরে এসেছেন এএফসি সভাপতি সালমান বিন ইব্রাহিম আল খলিফা। তার এ আগমনকে পুঁজি করেই দেশের ফুটবল এগিয়ে নিতে চায় বাফুফে।সালমানও মনে করেন এদেশের ফুটবল ঠিক পথেই আছে। এভাবে চললে খারাপ সময় কাটিয়ে ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।  ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কলকাতায় এসেছিলেন এএফসি সভাপতি। সেখান থেকেই তার বাংলাদেশ সফর। আগের দিন ঢাকায় পা রাখলেও গতকাল সকালে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ দিয়ে সফর শুরু করেন সালমান। এরপর বাফুফে ভবনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হন এএফসি বস। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সালমানের আগে এএফসি সভাপতি হিসেবে দুবার ঢাকা আসেন মোহাম্মদ বিন হাম্মাম। বছর পাঁচেক আগে ফিফা সভাপতির সেপ ব্লাটারের সঙ্গে ঢাকা এসেছিলেন জাং জিলং। তবে আগের দুই সভাপতির চেয়ে সালমানের ঢাকা সফর একটু ব্যতিক্রম। অনেকের মতে বাফুফে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এএফসি প্রধানকে ঢাকায় এনেছে।
বাফুফের বর্তমান কমিটির উপর পূর্ণ আস্থা রেখে সালমান বলেন, দেশের ফুটবলে উত্থান-পতন থাকবেই। কখনো ফুটবলে আপনি ভালো প্রজন্ম পাবেন, কখনো মন্দ প্রজন্ম পাবেন। বাংলাদেশ হয়তো উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি কিভাবে দুঃসময়ের বলয় থেকে নিজেকে তুলে আনবেন এবং পুনরায় নিজেকে তৈরি করবেন। যতদূর মনে হয়, বাংলাদেশ ফুটবলকে ট্র্যাকে আনার জন্য সবকিছুই করা হচ্ছে। ক্লাব ফুটবলের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ক্লাবগুলোকেও সহযোগিতা করা দরকার। ফুটবল ফেডারেশন এবং ক্লাবগুলোর কিছু দায়িত্ব আছে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার। আপনি কখনো আশা করতে পারেন না যে ফুটবল ফেডারেশন একাডেমি চালাবে। এটা ক্লাবের পক্ষ থেকে আসতে হবে। ক্লাবগুলোই তাদের নিজেদের মতো করে বয়সভিত্তিক লীগ চালু করতে পারে। মূল দলের চেয়ে ক্লাবগুলোর তৃণমূল পর্যায়ে দৃষ্টি দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের ফুটবল সঠিক পথে আছে উল্লেখ করে সালমান বলেন, এএফসির সব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ খেলছে। আমরা বাফুফের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা উন্নতি দেখছি কিন্তু সবসময় আরো উন্নতির সুযোগ থাকে। ফিফা এরই মধ্যে বাফুফেকে তিনটি টার্ফ বরাদ্দ দিয়েছে। নতুন প্রকল্প আসছে, যেখানে অবকাঠামোগত সুবিধা দেয়ার বিষয়টি থাকবে, যেটা থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন লাভবান হবে। বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের সফলতার কথা উল্লেখ করে সালমান বলেন, বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা দল বাছাই পেরিয়ে মূলপর্বে গেছে এবং বাংলাদেশের মতো দেশে, মহিলা ফুটবলে আরো ভালো করতে পারে। এটা ১৭ কোটি মানুষের দেশ, একটাই পথ এগিয়ে যাওয়া। ফিফা থেকে তিনটি টার্ফ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে মাত্র তিনটি টার্ফ বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন তিনি। ‘তিনটি টার্ফ খুব দ্রুতই চলে আসবে এবং আমি আশা করি, তারা আরো বেশি চাইবে। কেননা, বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়, এই ধরনের টার্ফ সারা বছরব্যাপী ফুটবল চালিয়ে নেয়ার সাহায্য করবে। যদি তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো অনুরোধ থাকে, তাহলে আমি তা পূরণের চেষ্টা করবো’- বলেন তিনি।
জাতীয় দলের সাফল্যের ব্যাপারে সালমান বলেন, ক্লাব পর্যায়ে দলগুলোর উন্নতি ছাড়া আপনি শক্তিশালী জাতীয় দল গঠন করতে পারবেন না। আমরা আশা করতে পারি না, একটা ফুটবল ফেডোরেশনের দায়িত্ব এ খাতের উন্নতি করার। এটা ক্লাবের ওপর নির্ভর করে। দিনশেষে তারাই আপনার দলের ভবিষ্যৎ। যখন আমি বাহরাইনের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ছিলাম, ১৯৯৬ সালে, অটো ফিস্টার ছিলেন বাংলাদেশের কোচ এবং তখন বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে আমাদের কষ্ট করতে হয়েছিল। আমি নিশ্চিত, সেটার পুনরাবৃত্তি হতে পারে (আগামীতে), কেননা বাংলাদেশের মেধা আছে। একদিনের এই সফর শেষে আজ সকালে নিজস্ব বিমানে নিজ দেশ বাহরাইনে চলে যাবেন তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn