এ এইচ এম ফারুক

লন্ডনে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ও ছবি সংবলিত ফেসবুক আইডির মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের সদস্যদের ছবি ব্যবহার করে একাধিক ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছে টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটছে। মুলত বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে টাকা চাওয়া হচ্ছে। একাধিক অভিযোগের পর এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে পরিবর্তন ডটকম। অনুসন্ধানে জানা যায়,  তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী সেজে পিএস আলম নামে একজন তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ফোনও দিচ্ছেন। এ ছাড়া মো. আনোয়ার হোসেন নামে একজনের নামও উঠে এসেছে। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মোতালেব পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বেশ কিছুদিন যাবৎ ফেসবুকে আমার সাথে তারেক রহমানের আইডির বন্ধুত্ব আছে। আমার সাথে চেটিংও হয়। আমি কৌতুহল বশত একদিন জানতে চাই এটা ভূয়া আইডি নয় তো? জনাব তারেক রহমান নামে শত শত আইডি আছে। এ জন্য জানতে চাইলাম এটা সত্যিকার আইডি কি না? অপরপ্রান্ত থেকে আমাকে জানানো হয় ‘রিয়েল আইডি।’ তারপর একদিন আমাকে নক করে দলের এক ছেলেকে হেল্প করতে বলা হয়। যে ছেলেটি এখন ক্রসফায়ারের মুখে আছে। মোতালেব জানান, আমি যেহেতু সক্রিয় রাজনীতি করি সেহেতু তারেক রহমানের সাথে ফেসবুকে অ্যাড থাকা মর্যাদার ব্যপার। কিন্তু হঠাৎ আমার মতো একজন সাধারণ নেতার কাছে টাকা চাওয়ায় আমি সন্দেহ করতে থাকি। একদিকে অবিশ্বাস-সন্দেহের দ্বন্দ্ব, আবার অন্যদিকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।

আমি বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। তাই সময়ক্ষেপণ করতে লাগলাম। ১১ মার্চ তিনি চেটিঙে আমাকে তিনি জিজ্ঞেস করেন ‘আছ কোথায় এখন।’ আমি আমার অবস্থান বলার পর তিনি আমাকে বলেন ‘একটা ছেলেকে হেল্প করতে পারবে’। আমি বলি আমার সাধ্যের মধ্যে হলে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই করব। তখন আবার বলেন, ‘আর্থিক কিছু সহায়তা করতে পারবে তাকে।’ আমি বলি জ্বী বলেন, আমাকে তার ঠিকানা দিন। তখন আমাকে বলা হয়, ‘ঠিকানা দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ ছেলেটা এখন ক্রসফায়ারের মুখে আছে তাই।’ তখন আমি আমার জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার মাধ্যমে টাকা দিতে চাইলে তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘কারো মাধ্যমে নয়, ওই ছেলেকে দিতে হবে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে, প্রয়োজনে লন্ডন থেকে আমার পি এস কল করে বলবে তোমাকে।’ আমি ব্যাংক একাউন্ট চাইলাম। কিন্তু তখন বলেন, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার না। অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তাকে পাঠাবে। নাম আনোয়ার হোসেন। ওয়েটার্ন ইউনিয়ন। শুধু তার নাম দিবে আর কিছু লাগবে না। তারপর আমার নাম্বারটি চাওয়া হয়। তখন তিনি পূর্বপরিচয়ের সূত্রধরে নিজর নাম্বার বলে এই প্রতিবেদকের নাম্বার দেন। সেই নাম্বারে ০০৪৪০৭৫৫০৪১৮৫৫৩ এই নাম্বারে মিস্টার আলম পরিচয়ে একজন ফোন দিয়ে কথা বলেন। তিনি নিজেকে তারেক রহমানের পিএস পরিচয় দিয়ে বলেন, জনাব তারেক রহমান আমাকে আপনার সাথে কথা বলতে বলেছেন। তখন এই প্রতিবেদক নিজেকে মোতালেব পরিচয় দিয়ে তিনি যে সঠিক ব্যক্তি তা কী করে বিশ্বাস করবো এমন প্রশ্ন করা হলে, তিনি তারেক রহমানকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিশ্বাস করতে না পারার বিষয়টি জানাতে বলেন এবং বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দেন।

পরে ম্যাসেঞ্জারে তারেক রহমানকে একটা ভিডিও কল দিতে বললে তারেক রহমান নামের আইডিধারী ওই ব্যক্তি রাগ করেন। তিনি বলেন, কল দিয়ে টাকা নিলে তো এমপি মন্ত্রীদেরকেই দিতেন। তোমাকে এক টাকাও দেওয়া লাগবে না, থাক। যুবদল নেতা বলেন, পরে আমি বুঝতে পেরেছি অবিকল তারেক রহমানের নাম ঠিকানা ব্যবহার করে, ধান্দাবাজি করছে কেউ। গুমের শিকার বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র সদস্য ও ঢাকার বাসিন্দা রেহানা বানু মুন্নি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, আমার কাছেও তারেক রহমান পিনু নামের একটি ফেসবুক আইডির মাধ্যমে টাকা চাওয়া হয়েছে। আমার ভাই রাজধানীতেই ছাত্রদলের রাজনীতি করে। দীর্ঘ ৩ বছর ৩ মাস আগে তাকে গুম করা হয়। আমরা তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। আমার সাথে তারেক রহমান পিনু নামে একটি আইডির সাথে বন্ধুত্ব আছে। গত ৯ ফ্রেব্রুয়ারি তিনি হঠাৎ আমার কাছে ২০ হাজার টাকা চান। আমি তাকে বিশ্বার করিনি এবং টাকা দিতে রাজি হইনি। পরে তিনি রাগ করে আমাকে বলেন, আপনার একাউন্ট নাম্বার দেন আমি আপনাকে টাকা পাঠাচ্ছি। আমি তার টাকা নেওয়ার জন্য রাজি হইনি। পরে আমাকে তিনি ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছেন।

একই কথা জানালেন রাশেদ খান (এটি তার ছদ্মনাম, তিনি তার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি নয়) বলেন, আমার কাছেও তারেক রহমান নামের ফেসবুক আইডি থেকে একজন দলীয় কর্মীকে সহায়তা করার জন্য বলা হয়। কিন্তু আমি তাকে নানা প্রশ্ন করে সত্যতা জানতে চাইলে তিনি একপর্যায়ে আমাকে বলেন, তোমার টাকা লাগবে না। এরপর তিনি আমাকে ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এটা ধান্দাবাজদের কাজ। এক ধরনের ধান্দাবাজ আছে, যাদের কাজই হল এরকম ধান্দাবাজি করে টাকা পয়সা নেওয়া। কার নাম ব্যবহার করেছে এটা তাদের কাছে ফ্যাক্টর নয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর নামও ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু যার নাম ব্যবহার করে তার তো কোনো দোষ না। তিনি তো এর সাথে কোনোভাবেই জড়িত নয়। যারা ধান্দাবাজ, ফোর টুয়েন্টি তারাই এই কাজগুলো করে।’ তিনি এমন প্রতারণার ফাদে পা না দিতে নেতাকর্মীদের অনুরোধ করেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ফেসবুকে কেউ যদি এরকম করে থাকে সেটা অবশ্যই অপরাধযোগ্য। কারা এমন প্রতারণা করছে আমরা এ ব্যাপারে জানি না। খোঁজ নিতে হবে, তদন্ত করে দেখতে হবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn