ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে রংপুরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
ফেসবুকে অবমাননাকর পোস্ট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন দুই জন। নিহতদের একজনের নাম হামিদুল ইসলাম। আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। সংষর্ষে ৫ পুলিশসহ আহত হয়েছে প্রায় ৬০ জন। পুলিশ ও জনতার সংঘর্ষ চলাকালীন শতাধিক রাবার বুলেট, টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়।জেলার চার উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ ৩ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল বিকালে রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার সলেয়াশাহ এলাকায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ২৮শে অক্টোবর টিটু রায় নামে এক যুবক ফেসবুকে অবমাননাকর স্ট্যাটাস দিলে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরবর্তীতে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। এ ঘটনায় দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ সলেয়াশাহ এলাকায় বিক্ষুব্ধ মুসল্লি ও এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছিল। গতকাল বাদজুমা এলাকাবাসী সলেয়াশাহ বাজার এলাকায় ফের বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। জুমার নামাজের পর শত শত মানুষ সলেয়াশাহ বাজার এলাকায় জমায়েত হয় এবং মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় ওই সড়কের দু’ধারে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে অবরোধকারীদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানায়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের কথাকাটাকাটি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেঁধে যায়। প্রায় ২ ঘণ্টা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক রাউন্ড টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে আহত হয় ৬০ জন। এদের মধ্যে হাবিব মিয়া, মাহবুব মিয়া, আলীম মিয়া, নাজির হোসেন, আলম ও জামিলকে তাৎক্ষণিকভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হামিদুল ইসলাম নামে একজন মারা যায়। এরপর আরো একজনের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মেডিকেল ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই গোলাম কিবরিয়া। আহতদের মধ্যে ৫ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে তিন জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন এসআই সেলিম মিয়া, কনস্টেবল নাসির হোসেন ও রফিকুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উত্তেজিত জনতা সলেয়াশাহ বাজার ব্রাহ্মণপাড়া, হিন্দুপাড়া ও ঠাকুরপাড়ায় লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে হিরেন বাবু, ধীরেন রায়, মন্টুর বাড়িসহ ২০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। হিরেন জানান, উচ্ছৃঙ্খল লোকজন এসে আমার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আগুনে আমার সবকিছু পুড়ে গেছে। মুসল্লি আলিফ মিয়া ও রায়হান কবির জানান, আমরা নবীজী সম্পর্কে কটূক্তিকারীর শাস্তির দাবিতে শান্তিপূর্র্ণ বিক্ষোভ করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত ) আজিজুল ইসলাম জানান, মহাসড়ক অবরোধ থেকে সরে যাবার আহ্বান জানালে জনতা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। তবে, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় অগ্নিসংযোগকারী ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বর্তমানে এলাকায় স্থানীয় ও হাইওয়ে পুলিশসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।