বাঁচার সুযোগ পেয়েও বাবা-মায়ের সঙ্গেই পুড়ে মরল তিন সন্তান
লন্ডনের বহুতল ভবন গ্রিনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত বাঙালি পরিবারের তিন সন্তান বাঁচার সুযোগ পেয়েও বৃদ্ধ বাবা-মাকে ছেড়ে যাননি, সবাই একসঙ্গে পুড়ে মরেছেন। জানা গেছে, আগুন লাগার পর ওই বাবা কমরু মিয়া (৯০), মা রাজিয়া বেগমের (৬৫) সাথে তিন সন্তানের মেয়ে হুসনা বেগম তানিমা (২২), হানিফ (২৬) ও হামিদ (২৯) ওই ভবনে আটকে পরেন। তবে ছেলে-মেয়েরা এক সময় ওই ভবন থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেলেও তিন সন্তান সিদ্ধান্ত নিলেন, মরলে মরবেন; কিন্তু বাবা-মাকে ছাড়বেন না তারা। ফলে শেষ পর্যন্ত বাবা-মাসহ পাঁচজনেরই মৃত্যু হয় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে। গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগে রাত ১২টা ৫০ মিনিটে। এরপর তাদের হাতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় ছিল ভবনটি ত্যাগ করার। কিন্তু তারা ভবনেই থেকে যান। রাত ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত তারা টেলিফোনে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এ সময় তারা ফোনে জ্বলন্ত ভবনে বাবা-মার সঙ্গে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
কমরু মিয়ার সাথে মেয়ে তানিমা এবং কমরু মিয়ার তিন সন্তান। ছবি: সংগৃহীত
সামির আহমেদ নামে ওই পরিবারের এক আত্মীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস-কে জানান, কমরু মিয়া বলতে গেলে হাঁটতে পারতেন না। তিনি বলেন, এ অবস্থায় কী করতেন তারা? তাকে ছেড়ে চলে যেতেন? বাবা-মাকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে তারা রাত ১টা ৪৫ মিনিটের আগেই ভবন ত্যাগ করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। সামির আরও বলেন, ‘আমার চাচির সঙ্গে হানিফের কথা হয়। তিনি খুব শান্ত ছিলেন। তিনি বলেন, তার সময় চলে এসেছে। তিনি তার জন্য শোক করতে নিষেধ করে এবং খুশি থাকতে বলেন। কারণ তারা আরও ভালো স্থানে যাচ্ছেন।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালের ২৭ তলা গ্রেনফেল টাওয়ার তৈরি হয়। এর মধ্যে ২০ তলা আবাসিক আর চার তলা বাণিজ্যিক। এখানে ১২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০১৬ সালেই এর সংস্কারকাজ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ভবনটিতে যখন আগুন লাগে সেখানে কয়েকশো মানুষ ছিলেন, যাদের বেশিরভাগ সেসময় ঘুমিয়ে ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডে ৭৯ জন নিহত হবার দাবি করেছে পুলিশ। তবে স্থানীয় ওই ভবনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, চাপ এড়াতে পুলিশ এই সংখ্যাকে অনেক কমিয়ে বলেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত কমরু মিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার একাটুনার ইউনিয়নের বিরইমাবাদ গ্রামে। তিনি বছরখানেক আগে গ্রিনফেল টাওয়ারে উঠেছিলেন। নিহত কমরু মিয়া ও তার পরিবার ওই ভবনের ১৭ তলার ১৪২ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন। ২৯ জুলাই ব্রিটিশ যুবক লেস্টারের সাথে কমরু মিয়া মেয়ে হুসনা বেগম তানিমার বিয়ের তারিখ নির্ধারিত ছিল।