হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ–সুনামগঞ্জের শনির হাওরে বাঁধের উচ্চতা গতবারের চেয়ে এবার দুই ফুট কম করার অভিযোগ করেছেন জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অবহেলা করেছে। এজন্যই পানি বাঁধ উপচে হাওরে ঢুকেছে।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা পাল বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণে কারও অবহেলা  প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রহমতপুর গ্রামের বাসিন্দা সবর আলী বলেন,  ‘গত বছরের চেয়ে এবার দু’ফুট নিচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তাই হঠাৎ করে নদীর পানি উপচে হাওরে প্রবেশ করেছে। গতবছর পানির চাপ আরও বেশি ছিল। কিন্তু বাঁধ ভাঙেনি। এবার সামান্য পানিতে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে।’ একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন,  ‘কতো বার কইছি বান্দের (বাঁধের) বালু মাটি সরাই ভালা মাটি দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা গ্রামবাসীর কথা শুনেনি। তার ফল ভোগ করা লাগছে কৃষকের।’ একই গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘রাইতে যখন বান্দের ওপর দিয়া পানি গেছে তখন ইচ্ছে করলেই পানি আটকানো যেত। বান্দের পাশেই বাঁশ ছিল। বাঁশ দিয়ে আড় বেঁধে কিছু মাটির বস্তা ফেলে দিলে পানি আটকানো যেতো। কিন্তু শনির হাওরের অন্য এলাকায় বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকায় কেউ সে চেষ্টা করেনি।’ বেহেলী গ্রামের নৃপেন্দ্র পাল বলেন, ‘হাওরের নিচু এলাকার জমির ধান কাটা হয়েছে। কিছু জমির ধান মানুষ কাটতে পারেনি। পানি ঢোকার পর খলার ধান ও গরুর খড় রক্ষা করতে মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে।’ বাঁধের পাশে বসে কথা হয় বেহেলী গ্রামের রিপন পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তার ৫ কেয়ার (দেড় একর) জমির ধান নষ্ট হয়েছে। আর দুই একটা দিন সময় পেলে ধান কেটে ঘরে তোলা যেত।

একই গ্রামের সুনীল পাল বলেন,  তিনি ১৫ একর জমিতে ২৯ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে ৫ একর জমির ধান কাটতে পারলেও ১০ একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। যে ধান পেয়েছেন তাতে কোনও রকমে সারা বছরের খাদ্য সংস্থান হলেও অন্যান্য কাজ করতে তার হাতে কোনও টাকা নেই। ১০ একর জমির ধান কেটে তুলতে কমপক্ষে ২০০  মণ ধান পেতেন তিনি।  ইসলামপুর গ্রামের বাডু মিয়া বলেন, ‘হাওরের সব এলাকা আর সব জমিতে একই সময় চাষাবাদ করা যায় না। কেউ আগে জমিতে ধান লাগায়, কেউ পরে। তাই সবার জমির ধান একসঙ্গে পাকে না। পানি ঢোকার ফলে তার দুই একর জমির ধান তলিয়ে যায়। এখন সাহায্য ছাড়া কোনও উপায় নেই। বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে ইউএনও প্রিয়াংকা পাল বলেন, ‘বৌলাই নদীর পানি উপচে হাওরে পানি ঢুকেছে। হাওরের নিচু জমির ধান অনেক আগেই কাটা হয়ে গেছে। বাঁধ নির্মাণে কারও অবহেলার অভিযোগ প্রমাণ  পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সফিউল আলম এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, ‘অনেক আগেই হাওরের পাকা ধান কেটে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। যারা জমির পাকা ধান কাটেননি তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে যদি কারও এতোটুকু ত্রুটি পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নিরূপণ করে সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে নদীগুলো পানি দ্রুত বেড়ে বাঁধ উপচে পানি হাওরে প্রবেশ করেছে। বাঁধ নির্মাণে কোনও ধরনের অবহেলা পাওয়া গেলে তিল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না কাউকে।’ তিনি বলেন, হাওর এলাকার ফসল কাটা হয়ে গেছে। এখন যে পানি হাওরে প্রবেশ করেছে তাতে কোনও ক্ষতি হবে না। বাঁধ নির্মাণে অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে  প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মনেছা বেগমের ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn