বাংলাদেশি তরুণ হাসানের পাশে ব্রিটিশ বন্ধুরা
বৈধ কাগজপত্রের অভাবে যুক্তরাজ্য থেকে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ আবদুল হাসান। তবে হাসানের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তার ব্রিটিশ বন্ধুরা। পূর্ব লন্ডনে বসবাসকারী ওই তরুণের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে পাশাপাশি গণস্বাক্ষরও সংগ্রহ করেছেন তারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এরইমধ্যে ১৮ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশির জন্যে হাজারো স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। জন্মভূমি থেকে লাখো মাইল দূরে ‘বিপর্যস্ত’ বাংলাদেশি তরুণের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে পাশে থেকে সাহস দিয়েছেন পূর্ব লন্ডনের মানুষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসান এরইমধ্যে ভালো ফল নিয়ে ‘এ’ লেভেল সম্পন্ন করেছেন। লন্ডনের কেপিএমজি নামে একটি মেজর অ্যাকাউন্ট্যাসি ফার্মে চাকরি পান। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ভিসা বাতিল করে দেয়। তিনি বলেন, ‘আমি সত্য-সত্যিই ওই ঘটনার সময় খুবই মর্মাহত হই। আমার যদি এখানে (লন্ডন) থাকার কোনো অধিকার না থাকে তাহলে কী করা উচিৎ তাই বুঝতে পারছিলাম না।’ ‘আমি এটা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। কী ঘটতে যাচ্ছে এ নিয়ে দিন কাটছিল বেশ ভয়েও।’ নিজের দুরাবস্থার বর্ণনায় আবদুল হাসান বলেন, ‘কেপিএমজি ফার্মে আমাকে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়। বেশ আনন্দেই যাচ্ছিল দিনগুলো। সবাই খুশি, বন্ধুরাও আমাকে নিয়ে গর্বিত ছিল।’ কিন্তু এর দুই সপ্তাহ ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার মুখোমুখি হন তিনি।
৫ বছর বয়সে, হাসান তার খালার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের স্টোক নিউইংটনে চলে যান। কারণ তার বাবা খুবই অসুস্থ ছিলেন এবং মা ভুগছিলেন সিজোফ্রেনিয়ায়। ওই সময় তার মা-বাবা চেয়েছিলেন- হাসান বাংলাদেশে ফিরে যাক। এরমধ্যে তার বাবা মারা যান এবং মায়ের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। তবে তিনি যুক্তরাজ্যেই থেকে যান। ১৬ বছর বয়সে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনআই (ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স) নম্বর দেয়নি ব্রিটিশ সরকার। এমনকি তার কাছে কোনো আইডি কার্ড (পরিচয়পত্র) কিংবা ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র ছিল না। অর্থাৎ বৈধভাবে বিদেশ ভ্রমণের উপায় তার ছিল না। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসানকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানিয়েছেন তার মা; যিনি এখনও বাংলাদেশে থাকেন। এ ঘটনায় হাসানের বন্ধু হেক্টর ও’শিয়া তার হয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি পিটিশন দায়ের করেন; যা আগামী ৮ জুন ট্রাইব্যুনালে শুনানি হওয়ার কথা। যদি আদালতে তা খারিজ হয়ে যায় তাহলে হাসানকে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।
এদিকে এ কঠিন সময়ে হাসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার ব্রিটিশ বন্ধুরা। ওই পিটিশনের পক্ষে লন্ডনের ১৮ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তারা। সবাই তাকে সাহস দিয়েছেন, আশ্বাস দিয়েছেন পাশে থাকার। হাসানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ব্রিটিশ নাগরিক ও’শিয়া। তিনি বলেন, ‘সে খুব পরিশ্রমী। অন্যের উপকার ও দেখভালের জন্যে তার জুরি মেলা ভার।’ ‘এ’ লেভেলে এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হাসান বলেন, ‘আমি তাদের সমর্থন পেয়ে সাহস পেয়েছি, তাদের সমর্থন আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে।’ ‘আশা করছি আমার আবেদন সফল হবে। তবেই এখানে আমি আমার জীবন ফিরে পাব এবং কেপিএমজিতে কাজ শুরু করতে পারবো।’ বন্ধুদের সমর্থন প্রসঙ্গে বাংলাদেশি এ তরুণ বলেন, ‘আমি আমার এই অবস্থা নিয়ে কাউকে কিছু বলিনি। কারণ এটা কিছুই না, প্রথমে আমি এ নিয়ে খুবই বিব্রত ছিলাম কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি যে এটা আসলে কিছুই নয়।’
চলতি বছরের সেপ্টম্বর থেকে হাসানের ছয় বছরের জন্য সিএ কোর্সের শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ শুরুর কথা। কিন্তু পিটিশন শুনানির জন্যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন তিনি। হাসান বলেন, ‘আমি তরুণ বয়স পার করছি। আমি সব সময়ই একজন উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলাম। কেপিএমজি আমায় বেশ ভালো আইডিয়া দেবে কীভাবে ভালো প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সম্পন্ন করা যায়।’ ‘শেষ পর্যন্ত আমি একজন চ্যারিটি ওয়ার্কারই হবো। আমি সিরিয়ায় এতিম অনাথদের সহযোগিতা ও সাহায্য করতে চাই। তবে প্রথমে আমি সক্ষমতা ও যোগ্যতা অর্জন করতে চাই, এরপরই চ্যারিটি ওয়ার্কে নামবো।’ এদিকে কেপিএমজির এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় সহানুভূতি প্রকাশ করছি। কিন্তু বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারের অভিবাসনের সংক্রান্ত হওয়ায় আমরা কোনো মন্তব্য করতে চায় না কেপিএমজি।’ ‘যাই হোক আমরা আবদুল হাসানের বিষয়ে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি অচিরেই এ অবস্থা থেকে তার উত্তরণ ঘটবে।’