বাহুবলের ত্রাস তারা ও সাহেদে’র নেতৃত্বে এমপি কেয়ার ওপর হামলা
সিলেটঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে নারী সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলাকারী তারা ও সাহেদ এ অঞ্চলের ত্রাস। এদের মধ্যে তারা জুয়া ও মাদক ব্যবসা করে এখন কোটিপতি। অন্যদিকে সামান্য ট্রাকচালক থেকে কোটিপতি বনে গেছেন সাহেদও। শুক্রবার সন্ধ্যায় হামলার ঘটনার পর প্রতিবাদ সমাবেশে এমপি কেয়া চৌধুরী নিজেই বলেন, ‘জুয়াড়ি তারা মিয়া ও সাহেদের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা আমার ওপর হামলা করে, আমার মঞ্চ থেকে মাইক খুলে নিয়ে যায়।’ এদিকে কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে বাহুবল। প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করে নিন্দা জানাচ্ছেন উপজেলাবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শনিবার বেলা ১টায় মিরপুর বাজারে আলিফ সোবহান চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করে।
বিকাল ৩টায় বাহুবলের আপামর জনতা উপজেলা সদরে প্রতিবাদ সভা ও জুতা মিছিল বের করে। শুধু বাহুবলেই নয়, জেলার অন্যান্য স্থানেও শুরু হয়েছে প্রতিবাদের ঝড়। এসব কর্মসূচি থেকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধের মাধ্যমে সিলেট বিভাগ অচল করে দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি করা হয়। সরেজমিন বাহুবল ঘুরে জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা তারা মিয়া। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা। কিশোর বয়স থেকেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে শুরু করে ভিডিও ভাড়া দেয়ার ব্যবসা। ভিডিও ব্যবসার পাশাপশি গড়ে তোলে ক্যারম বোর্ড বসিয়ে মিনি জুয়ার ব্যবসা। ধীরে ধীরে সে হয়ে ওঠে জেলার জুয়ার বোর্ডের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক। এরপর শুরু করে মাদক ব্যবসাও। আর এ থেকে সে খুব দ্রুত হয়ে ওঠে কোটিপতি। তার রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, মিরপুর বাজারে ঢাকা-মৌলভীবাজার-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন চায়েরা ম্যানশন নামের তিন তলা ভবন। যেখানে এক শতাংশ জমির মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ ছাড়া রয়েছে নামে-বেনামে অনেক সম্পত্তি।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে সে। টাকা আর আধিপত্যের জোরে দীর্ঘদিন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে। এসব অপকর্মের অভিযোগে চলতি বছর তারা মিয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারায়। তবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে নতুন করে চাঙ্গা হয়ে ওঠে সে। ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার ৬ দিনের মাথায়ই তার নেতৃত্বে নারী সংসদ সদস্যের ওপর হামলা হল। আধিপত্য, ঠিকাদারি ও অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে একসময় তার চরম প্রতিপক্ষ ছিল আলাউর রহমান সাহেদ। সম্প্রতি তারা উভয়ে মিলে শক্তিশালী একটি গ্রুপ তৈরি করে। উভয় পক্ষ মিলে যাওয়ায় তারা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।
শুক্রবার তারা মিয়া তার ফেসবুকে লেখে- ‘আবু জাহির ভাই (এমপি মো. আবু জাহির) চাইলে আমরা সব পারি। আর ৩য় ধাপের একধাপ দেখালাম।’ একটু পর আকেটি স্ট্যাটাসে একটি মেয়ের ছবি দিয়ে লেখে- ‘ফলে বেশ আনন্দ করলাম আজ।’ এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তারা মিয়া জানান, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। সাজানো নাটক করছেন কেয়া চৌধুরী। তার কোনো লোক হামলা করেনি এবং সেখানে কোনো হামলার ঘটনাও ঘটেনি। ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে তিনি বলেন, তার মোবাইল নিয়ে গেছে কেয়া চৌধুরীর লোকজন, তারাই তার আইডি থেকে এসব পোস্ট দিচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির জানান, সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরী তার ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন তিনি তা শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা মিয়া আমার লোক এটা ঠিক না। আমি যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি দলের সব স্তরের নেতাকর্মীই আমার লোক।’
এলাকাবাসী জানান, ট্রাকচালক থেকে এখন কোটিপতি সাহেদ। সে এখন জেলা পরিষদের সদস্যও। অবৈধ বালু ব্যবসা, আর সুদের ব্যবসাই তার জীবন পাল্টে দিয়েছে। এলাকায় সুদখোর মহাজন হিসেবেই তার পরিচিতি। আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ভাদেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব বাগিয়ে নেয় সে। এরপরই ট্রাক চালানো ছেড়ে দিয়ে অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় গড়ে তোলে একচ্ছত্র আধিপত্য। বিগত ৭-৮ বছরে বনে যায় কোটিপতি। এখন সে এলাকায় অপ্রতিরোধ্য। আর জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার ক্ষমতার দাপট আরও বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে ভাদেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলাউর রহমান সাহেদ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি যদি চা বিক্রেতা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে আমি হলে দোষ কি?’ সুদের ব্যবসার কথা তুললে তিনি বলেন, ‘সব মিথ্যা।’ আর কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও জানান তিনি। তবে তিনি ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন বলে স্বীকার করেন। বাহুবল উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অলিউর রহমান অলি জানান, তারা মিয়ার নানা অপকর্মের জন্য দলের সুনাম ক্ষুণ হয়েছে। তার মাদক ব্যবসা, জুয়ার ব্যবসা এবং চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ এলাকার লোকজন। এসব অভিযোগের কারণেই তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই তারা মিয়া এখন যুবলীগের কেউ না। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কিন্তু এক বছর আগেই সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।