বার্তা ডেস্ক :: রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় এমপি জি এম সিরাজ বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আট বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ জিয়ার নাম উল্লেখ না করায় তিনি ধন্যবাদ জানাতে পারছেন না। এসময় সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা সংসদে হৈ চৈ শুরু করেন। এরমধ্যে তিনি বক্তব্য অব্যাহত রেখে বলেন, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা, ধর্ষণ সমাজের স্তরে স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের মদদপুষ্টরা এসব করছে। তার বক্তব্যের পুরো সময় থেমে থেমে হৈ চৈ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে অধিবেশনের সভাপতি ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া সরদার দলীয় সদস্যদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জিএম সিরাজ যা বলছেন, তাকে বলতে দেন, প্রয়োজন হলে পরে আপনারাও বলবেন। এসময় বিএনপির এমপি স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান। জাতীয় সংসদের একাদশ তথা শীতকালীন অধিবেশনে আজ রবিবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে এ ঘটনা দৃশ্যমান হয়। জি এম সিরাজ অভিযোগ করে আরও বলেন, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা, ধর্ষণ সমাজের স্তরে স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে আসেনি। এ বিষয়ে তিনি কোন দিক-নির্দেশনাও দেননি। তাই আমি রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে ধন্যবাদ জানাতে পারছি না। এজন্য আমি দুঃখিত।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক মন্ত্রণালয় কোথায় নেই দুর্নীতি? শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতিবাজরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি তুলে ধরে তিনি বলেন, জি কে, সাহেদরা করোনার ভুয়া সনদ বিক্রি করে বিশ্বে বাংলাদেশকে হেয় করেছে। লুটপাটকারীরা বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করছে। বাচ্চু থেকে পিকে হালদার পর্যন্ত সবাই সরকারের মদদপুষ্ট।

তিনি অভিযোগ করেন, গত ১০ বছরে দেশের ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কুয়েতে কারাদণ্ড হয়েছে এই সংসদের সদস্যের (লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুল)। তিনি এই সংসদকে কলঙ্কিত করেছেন, দেশ কলঙ্কিত হয়েছে। এসময় তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে সরকারের শত শত কোটি টাকা ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরে বলেন, এখন নির্বাচন মানে মনোনয়ন পেলেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয়ের সার্টিফিকেট। তাহলে জনগণের অর্থ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এ নির্বাচন করে কি লাভ?

এসময় জি এম সিরাজ সরকারের প্রশংসা করে বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনে আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করবো। নারী উন্নয়ন, শিক্ষা খাতের উন্নয়নে আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছি, ধন্যবাদ দিতে চাই। রাষ্ট্রপতির ভাষণে গণতন্ত্র ও সুশান নিয়ে যা বলেছেন, সেখানেই আমার আপত্তি। দেশে গণতন্ত্র নেই। সু-শাসন নেই।  সরকার দলীয় সদস্যদের হৈ চৈ-এর জাবাবে তিনি বলেন, আমরা সংসদে কম সদস্য হলেও জনগণ আমাদের বক্তব্য শুনতে চায়, স্পিকার শুনতে চান, প্রধানমন্ত্রী শুনতে চান। কিন্তু আমার সহকর্মী সদস্যরা হৈ চৈ করছেন, এটা ব্যাড প্র্যাক্টিস। এ সংসদে আমি নতুন নই। আগেও এসেছি। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আমলেও সংসদে ছিলাম। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখনও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন এরকম দেখিনি, এখন বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়।

জি এম সিরাজ তার বক্তব্য শেষ করার পর ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে আপনার দুটি কথা আমি পরে শুনে দেখবো, এক্সপাঞ্চ করার প্রয়োজন হলে করবো। আপনি গণতন্ত্রের কথা বলছেন, এ সংসদে আমার গায়ে আপনাদের দলের সদস্যরা থুথু ছিটিয়েছিল। আমি তখন আওয়ামী লীগ করতাম না, আমি জাতীয় পার্টি করতাম। গণতন্ত্রের কথা বললে আপনাকেও গণতন্ত্রের ভাষায় কথা বলতে হবে। রাষ্ট্রপতির বিষয়ে সম্মান রেখে কথা বলতে হবে।  ডেপুটি স্পিকার সব সংসদ সদস্যের উদ্দেশ্যে বলেন, সংসদীয় রাজনীতি করতে হলে সহনশীল মনের হতে হবে।- বিডি-প্রতিদিন

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn