বিএনপির কমিটিতে আসছে বড় পরিবর্তন
বার্তা ডেস্ক:: সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে সম্মেলন করার বিষয়ে দলের একটি বড় অংশের আপত্তি থাকলেও এ বছরের শেষ দিকে হতে পারে এই কাউন্সিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘অবিশ্বাস্য পরাজয়ের’ পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের অংশ হিসেবে এই কাউন্সিলকে গুরুত্ব দিচ্ছে রাজপথের এই বিরোধী দল। তবে এবারের কাউন্সিলে শীর্ষ পদগুলোতে বড় চমকের সম্ভাবনা কম। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ পদেও পরিবর্তন হচ্ছে না। স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তন আসবে। অসুস্থদের বাদ দেয়া হবে, শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পদগুলোতে বড় রকমের পরিবর্তন আসার আভাস পাওয়া গেছে। এসব পদে পদে আসতে পারে নতুন মুখ। যোগ্য, ত্যাগী, তরুণ ও মেধাবীদের নেতৃত্বে আনা হবে। গত কাউন্সিলে বিএনপির শীর্ষ দুই পদে রাখা হয় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের দুই উত্তরসূরি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। এবারের কাউন্সিলেও দলটির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানই থাকছেন এটি নিশ্চিত। খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তাকে (তারেক রহমান) আরও ক্ষমতা দেয়া হতে পারে।
দলের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ মহাসচিব পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। সবকিছু ঠিক থাকলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই থাকছেন এ পদে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসবে পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচজন নতুন মুখ আসতে পারে। বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম-মহাসচিবদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে পদোন্নতি দিয়ে কাউকে কাউকে এ পদে আনা হতে পারে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকীয় পদগুলোতে বড় রকমের পরিবর্তন আসবে। যোগ্য, ত্যাগী এবং তরুণদের এসব পদে পদায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে হাইকমান্ডের। আগামী কাউন্সিলের আগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। এমনটা ধরে নিয়ে ডিসেম্বরে দলের ৭ম জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তা করছে বিএনপি। সেজন্য দ্রুত সাংগঠনিক জেলা শাখা পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ইতিমধ্যে ৩৩ জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। যেসব জেলায় কোন্দল রয়েছে সেগুলো নিরসনেও চেষ্টা চলছে। মূল দলের পাশাপাশি কাউন্সিলের আগে ছাত্রদলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৩ বছরের মেয়াদ ১৯ মার্চ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে এবার কাউন্সিল করার পরিকল্পনা থাকলেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে তৃণমূলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দলের জাতীয় কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ লক্ষ্যে আমাদের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে কাউন্সিলের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচন হবে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে। তারা যাকে নেতৃত্বে চাইবেন এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে যারা যোগ্য এবং বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে অবদান রয়েছে তারাই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন বলে আশা করি। সূত্র জানায়, সপ্তম কাউন্সিলে শীর্ষ পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। নিয়মমাফিক আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিলে খালেদা জিয়াই ফের দলের চেয়ারপারসন হচ্ছেন এটা নিশ্চিত। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। লন্ডনে অবস্থানরত বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই আসছেন এ পদে। দলের তৃতীয় শীর্ষ পদেও নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা নেই। মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুনরায় এ পদে আসছেন এখন পর্যন্ত হাইকমান্ডের ভাবনা এমনই।
তবে দলের একটি অংশ তার মহাসচিব পদ আটকাতে এখন থেকেই মাঠে সক্রিয়। দল পরিচালনায় ব্যর্থসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। হাইকমান্ডের কান ভারি করার চেষ্টা চলছে। তবে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর হাইকমান্ডের নির্দেশে শপথ না নেয়াসহ সাম্প্রতিক সময়ে দলের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনায় হাইকমান্ড তার ওপর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে তারেক রহমানেরও খুব আস্থাভাজন মির্জা ফখরুল। দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারেক রহমান সব সময় মহাসচিবের পরামর্শ নিচ্ছেন। তাই সবকিছু ঠিক থাকলে মহাসচিব পদে ফখরুলই আসছেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। সূত্র জানায়, ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটি পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। গতবার কাউন্সিলের পর দলের স্থায়ী কমিটি করা হয় তাতে দুটি পদ খালি রাখা হয়। এর মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্রি. জে. (অব.) আসম হান্নান শাহ ও এমকে আনোয়ার মারা গেছেন। ফলে পাঁচটি পদ শূন্য হয়।
সম্প্রতি স্থায়ী কমিটিতে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরও তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এদিকে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান দলীয় কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত। প্রবীণ নেতা ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারও শারীরিকভাবে ততটা ফিট নন। অসুস্থতার কারণে তাদের বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনটি পদ ফাঁকা ও আরও কমপক্ষে দু’জনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মোট পাঁচ পদে নতুন মুখ আসবে। এসব পদে তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ জায়গা পেতে পারেন। স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেতে সিনিয়র নেতারা যার যার মতো করে সক্রিয় হয়েছেন। দলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকতউল্লা বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দীন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মধ্য থেকে কয়েকজন এ পদে আসতে পারেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদেও নতুন মুখ আসবে। স্থায়ী কমিটিতে পদোন্নতি হওয়ায় কয়েকটি পদ ফাঁকা হওয়ার পাশাপাশি বিগত সময়ে কয়েকজন মারাও গেছেন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে বাদ পড়বেন কয়েকজন।
কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। এ অবস্থায় একমাত্র রাস্তা গণআন্দোলন। সেই গণআন্দোলন করতে হলে দরকার শক্তিশালী সংগঠন। এজন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সব পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্ব তুলে আনা হবে। সেই প্রস্তুতি আমরা শুরু করেছি।