বিএনপি এখনো আওয়ামী লীগের জন্য থ্রেট
একান্ত আলাপচারিতায় এইচ এম এরশাদ
পীর হাবিবুর রহমান-
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে এককভাবে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রার্থীও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। যদি নির্বাচনে জোটে যেতে হয়, তবে ৮০-১০০ টি আসন চায় তার পার্টি। সম্প্রতি ভারত সফর করে ফিরে আসার পর এরশাদের জাতীয় পার্টি নতুন করে আলোচনায়ই আসেনি, পূর্ণ উদ্যমে মাঠে নেমেছে। শনিবার রাতে এরশাদের বারিধারার বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথা বলেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে যে রায় দিয়েছে তার জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘যতবার এটি বাতিল হবে ততবার সংসদ সেই আইন প্রণয়ন করবে।’ এই প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী দায়িত্বশীল কথা বলেননি। তার মন্তব্যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। কারণ এমন সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে এইচ এম এরশাদ বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় আছে। এদেশের সংস্কৃতি হলো সরকার বিরোধী জনমত গড়ে উঠা। এক্ষেত্রে সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। তাই বলে কেউ যদি মনে করেন, বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাহলে ভুল করবেন। পুরোনো ভোটাররা বিএনপির অপশাসন ভুলে না গেলেও নতুন ভোটাররা অনেকটাই ভুলে গেছেন। তারা সরকারের কর্মকাণ্ডই বিশ্লেষণ করে সমালোচনামুখর। শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছেন, কিন্তু দলের কর্মীদের একটি অংশ সেই অর্জনকে ধূসর করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগকে উপলব্ধি করতে হবে ক্ষমতার রাজনীতিতে এখনো বিএনপি আওয়ামী লীগের জন্য থ্রেট। এইজন্য এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীসহ দলের নেতাদের নজর দেয়া জরুরি। বিএনপি ক্ষমতায় এলে কি পরিণতি হবে তা আওয়ামী লীগই নয়, দেশের জনগণ ও বন্ধুরা সব জানেন। বিএনপি অনেকবার ক্ষমতায় এলেও কি দিয়েছে তার চিত্র মানুষের সামনে আছে।
এরশাদ বলেন, মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে সরকার ও আওয়ামী লীগের ইমেজ যারা ক্ষুণ্ন করছে তাদেরকে কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? সবাই নারীর ক্ষমতায়নের জিগির তুলছেন। নারীর ক্ষমতায়ন নগর ও শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু একটি উন্মাসিকতা নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন এমন হারে বাড়ছে যেন মনে হয়, নারী হয়ে জন্ম নেয়াই অভিশাপ। একটি সভ্য, অগ্রসর সামাজিক ব্যবস্থায় এটি কারো কাম্য হতে পারে না। নৈরাজ্য, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহারকে রুখেই সরকারকে ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে হবে।
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বাতিল হওয়া নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির লিখিত চুক্তি হয়েছিল। ক্ষমতায় এলে এরশাদ হবেন রাষ্ট্রপতি, ৬০ টি আসন পাবে জাতীয় পার্টি, আনুপাতিক হারে মন্ত্রিত্ব। কিন্তু ওয়ান ইলেভেন আসার মধ্য দিয়ে সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগও সেই চুক্তি বাতিল করে দেয়। এরশাদ এখন জোটের ঐক্যে গেলে রাষ্ট্রপতি হতে আর চাইবেন না। শ’খানেক আসন ও আনুপাতিক হারে মন্ত্রিত্বই চাইবেন। বললেন, বর্তমান শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির জীবন বন্দি জীবন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি বারবার তার দম বন্ধ অবস্থার বর্ণনা করছেন। এই অবস্থায় তার পক্ষে এই রাষ্ট্রপতির জীবন বহন করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এখনো গানম্যান বা নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে পথ চলেন না।
জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করে লাভবান হবে সেই পরিস্থিতি তো দেখা যাচ্ছে না? স্মিত হেসে এরশাদ জবাবে বললেন, অপেক্ষা করুন; সেই সুযোগও আসবে। শেখ হাসিনার সরকার থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগের যে প্রশ্ন উঠেছে এ নিয়ে জানতে চাইলে এরশাদ বললেন, তার পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ নিজেদের মধ্যেও আলোচনা চলছে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অচিরেই হতে পারে।
বিকল্প জোট গঠন প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও তার ভাই জিএম কাদেরের অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসভবনে হাজির হওয়া প্রসঙ্গে এরশাদ বললেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর দাওয়াতে জিএম কাদের যোগ দিলেও এর সঙ্গে তার পার্টির বা তার কোনো সম্পর্ক নেই। জাতীয় পার্টি আর যাই হোক বিকল্প জোটে যাচ্ছে না। বিকল্প জোট গঠনে যারা উদ্যোগী হয়েছেন তারা সম্মানিত রাজনীতিবিদ হিসাবে দেশ ও সমাজে গুরুত্ববহন করলেও তাদের সংগঠন যেমন দুর্বল তেমনি জনগণের মধ্যে সমর্থনও নেই। বিকল্প জোট হবে নেতৃত্ব নির্ভর, কর্মী বা জনগণ নির্ভর নয়। নির্বাচনে তাদের জয়ী হতে হলে বড় কোনো দলের সঙ্গে জোটে যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত তারা কাদের সঙ্গে জোট বাঁধেন তা দেখতে হবে।
আগামী নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ বলেছেন, আমরা বরাবর সংবিধান ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কখনোই ছিলাম না। তিনি বলেন, গভীর বেদনার সঙ্গে বলতে হয়, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্বাবধায়ক সরকার থেকে প্রতিটি তত্বাবধায়ক সরকার আমার ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে অবিচার করেছে। আমাদেরকে নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড দিতে পারেনি, নির্যাতন দিয়েছে, বৈশষ্যমূলক আচরণ করেছে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তত্বাবধায়ক সরকার আমলেও চরম মাসুল দিয়েছেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কতটা শক্তিশালী, কতটা শক্তভাবে একটি নির্বাচন দিতে পারবে এ নিয়ে এরশাদের প্রশ্ন রয়েছে। তবে তিনি মনে করেন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে অন্তর্বতী সরকারের আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় বড় হয়ে উঠবে।