বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের ছেলেদেরকে নিয়ে দল করেছে: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা: বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের ছেলেপেলেদের নিয়ে দল গঠন করে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার প্রশ্ন এখানে, স্বাধীনতার কথাও বলবেন, আবার যুদ্ধাপরাধীদের যারা মদদদানকারী, যুদ্ধাপরাধীদের যারা প্রশ্রয় দিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছে এবং যাদের ফাঁসি হয়ে গেছে তাদের ছেলেপেলেদের নিয়ে দল গঠন করে, তাদের দলকে সমর্থন করেন কীভাবে? সেই দলের প্রতি অনুগত থাকেন কীভাবে?। রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিজয় দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আলোচনায় বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতন, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা, গণহত্যা, এ দেশীয় দালাল, রাজাকাদের ভূমিকা, আলবদরদের বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদেরকে এখন মদদ দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের ফাঁসি হয়েছে, তাদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া। আর এখন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্তদের ছেলেপুলেদের নিয়ে দল করছেন। তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানের কথিত ভাঙা সুটকেস থেকে এখন শপিং মল বেরুচ্ছে। খালেদা জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগও করেন প্রধানমন্ত্রী। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর টেলিভিশনে তার ভাঙা স্যুটকেস ও ছেড়া গেঞ্জি দেখানোর বিষয়ে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় ভাঙা সুটকেস খেকে জাহাজ বেরিয়েছে কোকো-১, কোকো-২, ইন্ডাস্ট্রি বেরিয়েছে, এখন আবার দেখি শপিং মল বেরুচ্ছে, ফ্লাট বেরুচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বেরুচ্ছে।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সৌদি আরব ও কাতারে বিপুল সম্পদ থাকার বিষয়ে একটি ভিডিও ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গত ৭ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে কথা বলেন। আর এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এই হুমকির বিষয়ে কিছু না বললেও তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর কোর্ট ও আমেরিকার ফেডারেল কোর্টই তো বলেছে খালেদা জিয়ার ছেলেরা মানি লন্ডারিং করেছে। এটা তাদের কাছেই ধরা পড়েছে, যে টাকা আমরা উদ্ধার করেছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ‘কুলাঙ্গার ছেলে’ বলেও সম্বোধন করেন শেখ হাসিনা। তার অভিযোগ, আন্দোলনের নামে নাশকতায় তারেকই পরামর্শ দিয়েছেন খালেদা জিয়াকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানিলন্ডারিং কেসে তার (তারেক রহমান) সাত বছরের সাজা হয়েছে, ১০ ট্রাক অস্ত্র, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে এ দেশে যত অপকর্ম আছ, দুর্নীতির সাথে তারা জড়িত..। সোনালী ব্যাংকে কোকোর নামে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে ৯৫০ কোটি টাকা যারা লুটে নিয়ে গেছে, তারা আবার স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় যাবার, তারা আবার স্বপ্ন দেখে রাজনীতি করার।
তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না প্রথমে জিয়াউর রহমান এবং পরে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দিয়েছেন অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এই স্বাধীনতাবিরোধী, দুর্নীতিবাজ এবং যুদ্ধাপরাধীদের মদদদাতাদেরকে এ দেশের জনগণ কখনও ভোটও দেবে না, তারা আর কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারের মুখোমুখি সব আসামিকে ছেড়ে দেন জিয়াউর রহমান। যে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার বা ভোটাধিকার ছিল না, তাদেরকে সে অধিকারও দিয়েছেন জিয়া। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে তারা মন্ত্রী বানায়, রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর নেতাদের। কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ উপদেষ্টা, কেউ মন্ত্রী।…যারা রক্ত দিল, যারা যুদ্ধ করল তারাই যেন অপরাধী হয়ে গেল আর যারা হানাদার বাহিনীর দালালি করল, যারা গণহত্যা চালাল, যারা মা বোনদের পাকিস্তানের হাতে তুলে দিল তাদেরকেই ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হলো। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আরও এক ধাপ ওপরে উঠল। এদেরকে নিয়েই তাদের দহরম মহরম। এদের হাতে তুলে দিল লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা, তাদেরকে বানাল মন্ত্রী। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা কী করে এটা মেনে নিতে পারে-জনগণের কাছে সে প্রশ্নও রাখেন শেখ হাসিনা।
আমার প্রশ্ন এখানে, স্বাধীনতার কথাও বলবেন, আবার যুদ্ধাপরাধীদের যারা মদদদানকারী, যুদ্ধাপরাধীদের যারা প্রশ্রয় দিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছে এবং যাদের ফাঁসি হয়ে গেছে তাদের ছেলেপেলেদের নিয়ে দল গঠন করে, তাদের দলকে সমর্থন করেন কীভাবে? সেই দলের প্রতি অনুগত থাকেন কীভাবে?। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে খালেদা জিয়ার নির্দেশই আন্দোলনের নামে নাশকতা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, গাছ, কেটে ফেলা, রাস্তা কেটে ফেলা, কী না করেছে দেশকে ধ্বংস করার জন্য। আমরা গড়ে তুলি, ওরা ধ্বংস করে। এই দেশের আর্থ সামাজিক উন্নতি চাইলে, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন চাইলে যুদ্ধাপরাধীদের লালন পালনকারী, তাদেরকে মন্ত্রী বানানোদেরকে ভোট না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বানও জানান প্রথানমন্ত্রী। এরা তো লুটেরা। এরা একদিকে যেমন যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসীদের লালন পালন করেছে, দেশের শান্তি বিনষ্ট করেছে, তেমনি দেশকে উন্নয়নের পথ থেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশ আজ উন্নতির দিকে যাচ্ছে দাবি করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যারা সৃষ্টি করে, ত্যাগ স্বীকার করে তাদের যে দরদ থাকে, তাদের যে আন্তরিকতা থাকে, সেটা কিন্তু উড়ে এসে যারা ক্ষমতায় জুড়ে বসে, আর ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে তাদের তা থাকে না। তারা ভোগ বিলাসে জীবন কাটায়, তারা দেশের অর্থ বিদেশ পাচার করে।