করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কার এই দুঃসময়ে সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদেরও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা বিত্তশালী আছেন তাদের বলবো- জনগণের পাশে দাঁড়ান, জনগণকে সাহায্য দেন, জনগণের জন্য কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার হিসেবে এই কার্যক্রমের আওতায় করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশা ও ভ্যানচালক,  মোটর শ্রমিক, কর্মহীন বিভিন্ন পেশার ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবার আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা পাবেন। তিন দিনের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিউরক্যাশের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর মাধ্যমে জিটুপি (গভর্নমেন্ট টু পার্সন) ভিত্তিতে এ নগদ অর্থ সহায়তা পাবে এসব পরিবার। এই সহায়তার জন্য ৯১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উদ্বোধনের প্রথম দিনে ২২ হাজার ৮৯৫ পরিবার এই অর্থ সহায়তা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ভোলা, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রান্তে উপস্থিত জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কয়েকজন উপকারভোগীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

গণভবন থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অর্থ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যারা ভাসমান মানুষ, নির্মাণ শ্রমিক, গণপরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, দিনমজুর, ঘাট শ্রমিক, নরসুন্দরসহ যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করেন, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসহায় মানুষ, তাদের আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা দিচ্ছি। এটা অন্য কেউ টাকা পয়সা এদিক ওদিক করতে পারবে না। করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সর্বদা দেশের জনগণের পাশে থাকে। সেটা ক্ষমতায় বা বিরোধী দল যে অবস্থানেই থাকুক না কেন। তিনি বলেন, আমরা সব সময় চিন্তা করি কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবো, মানুষকে সহযোগিতা করবো। আওয়ামী লীগ তার (জাতির পিতার) পদাঙ্ক অনুসরণ করেই কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সব সময় দুর্গত মানুষের পাশে কিন্তু আওয়ামী লীগ আছে। আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ প্রত্যেকেই কিন্তু এই করোনা মহামারিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের জীবন সচল রাখতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে করোনায় সারা বিশ্ব আক্রান্ত। খুব স্বাভাবিক ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুতেই একটা ভাটা পড়ে গেছে। অর্থনৈতিক ভাবে অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। সেখানেও আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার প্রধান বলেন, আমাদের ছোট ভূখণ্ডে অধিক জনসংখ্যা। কীভাবে এই জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া যায়, অপরদিকে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা, তাদের জীবনটাকে সচল রাখার ব্যবস্থা, সেটা কীভাবে করা যায় আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি। সে কারণে এই অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এটা করেনি, ওটা করেনি বলে যারা সমালোচনা করছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- নিজে কয়টা লোককে সাহায্য করেছেন? তার একটা হিসাব পত্রিকায় দিয়ে দেন। তাহলে মানুষ আস্থা পাবে, বিশ্বাস পাবে। সেটা হচ্ছে বাস্তবতা। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। একটা মাত্র টেলিভিশন ছিল। আমি বেসরকারি খাতে প্রচুর টেলিভিশন, রেডিও করে দিয়েছি। কয়েকটা পত্রিকা ছিল, এখন অনেক পত্রিকা হয়েছে। এখন তারা বেশ ঘরে বসে বসেই বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাজ শেষ হলে বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধির দুয়ার খোলে মন্তব্য করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে তারা যখন পরামর্শ দেন তার আগেই কিন্তু আমাদের সরকার আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে নেয়। তিনি বলেন, মানুষের জন্য কী করতে হবে, করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে হবে কিনা, মানুষকে কীভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে হবে- এই সব কাজ যখন আমরা গুছিয়ে নিয়ে আসি, আমাদের বাজেট আমরা কীভাবে করবো, বাজেটে কোন কোন খাতকে আমরা বেশি গুরুত্ব দেবো এগুলো যখন আমাদের করা শেষ হয়ে যায় তখন তাদের বুদ্ধির দুয়ারটা খোলে। বিরোধী দলের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দল বা যারাই আছেন প্রতিদিন কীভাবে সরকার উৎখাত করবে সেই চিন্তা-ভাবনা করেন তাদের কিন্তু এটা করতে হলে বা শক্তিশালী বিরোধী দল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে, অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। টিকা নেয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn