প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল পেত সুনামগঞ্জের ৯১ হাজার ৫৯০টি পরিবার। কিন্তু সাম্প্রতিক বোরো ফসলহানির পর গত এপ্রিলে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উল্লেখিত পরিবারগুলো এখন আক্ষরিক অর্থেই বিপদের মধ্যে আছে। তারা ভিজিএফ কর্মসূচির আওতাভুক্ত নন। আবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তারা কোন সুরক্ষা কর্মসূচির মধ্যেই নেই। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বছরের দু’টি সময়ের প্যাকেজে পাঁচ মাস চলে। একটি প্যাকেজ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর তিন মাস ও অন্য প্যাকেজ মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস চলে। গত এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় প্যাকেজ শেষ হয়েছে, এখন আপাতত বন্ধ থাকবে। বিশেষ বিবেচনায় সুনামগঞ্জের জন্য এই কর্মসূচি নিয়মিত রাখতে আমরা এপ্রিল মাসেই খাদ্য অধিদপ্তরে চিঠি লিখেছি। তবে এটি নিয়মিত রাখা হবে কিনা তা জানা যায়নি।’
সুনামগঞ্জের বোরো ফসলহানির পর গত ১৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কাছে সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকসহ উপস্থিত সবাই দাবি জানিয়েছিলেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রেখে তাতে আরো ১ লাখ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করার। এরপর জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সুনামগঞ্জের জন্য নিয়মিত রাখা ও কার্ডের সংখ্যা আরো বৃদ্ধির জন্য পৃথকভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু গত এক মাসেও খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো সাড়া ও আশ্বাস পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে জেলায় ১ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৯১ হাজার ৫৯০টি পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছেন না।
ধর্মপাশার মধ্যনগর ইউনিয়নের খালিশাকান্দা গ্রামের কৃষক কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘বানে সব ধান তল অইয়া গেছে। হুনছিলাম ১০ টেকা কইরা হারা বছরই মাসে তিরিশ কেজি চাউল পাইমু। ইডাও অকন বন্ধ অইয়া গেছে। ১০ টেকার চাউল পাই কইরা আমারে আর কোনতা দেয়া অইছে না। আমরা বাঁচমু কেমনে ভাই?’ একই ইউনিয়নের জমসেরপুর গ্রামের কৃষক নান্টু সরকার বলেন, ‘আমরা হুনছি আরো ১ হাজার কাড বাড়ানি অইছে, ইতার লাগি দেরি অইতাছে। ১০ টেকার চাউল বন্ধ অই গেছে ইতা তো আমারারে কেউ কইছে না। ১০ টেকার চাউল পাই দেইক্কা আর কোনাতা পাইছিনা। ১১ কিয়ার খেত করছিলাম সব পানিত গেছে। সরকার থাইক্কা সায্য না করলেও চলমু কেমনে?’ ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমদ বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা জনপ্রতিনিধিরা খুব চাপের মুখে আছি। প্রতিদিনই লোকজন জানতে চান কবে আবার চালু হবে। আমাদের দাবি আবারো এই কর্মসূচি দ্রুত চালু করা হোক, না হয় ভিজিএফের সংখ্যা বাড়ানো হোক।’
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সুনামগঞ্জের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নিয়মিত রাখা ও কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমি খাদ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। এছাড়া আরো ১ লাখ ভিজিএফ কার্ড বাড়ানোর জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি।’
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৩১০ বার