বিশ্বব্যাংকের টাকা ফেরতের চাপঃ পাঁচ প্রকল্পে কেনাকাটায় অনিয়ম
জানতে চাইলে মাহমুদা বেগম বলেন, শুধু কেনাকাটায় অনিয়ম হলেই যে বিশ্বব্যাংক টাকা ফেরত চায় সেটি বলা যায় না। কেননা অনেক সময় দেখা গেছে প্রকল্পে টাকা খরচ হয়নি। বেঁচে যাওয়া টাকাও তারা ফেরত চায়। তাছাড়া সরকারের ক্রয় গাইডলাইন ও বিশ্বব্যাংকের প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলেও মিসপ্রকিউরমেন্ট ঘোষণা করা হয়। তবে এসব টাকা যেহেতু বাধ্যতামূলক ফেরত দিতেই হবে সে ক্ষেত্রে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের উচিত দ্রুত ফিরিয়ে দেয়া। আমরা চেষ্টা করছি, এসব টাকা যাতে তাড়াতাড়ি ফেরত দেয়া যায়।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয় সূত্র জানায়, ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রজেক্ট থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি ইনইলিজেবল ঘোষিত এক হাজার ১২৫ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে) প্রায় ১ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর ইনইলিজেবল ঘোষিত ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ৮৮ লাখ টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রিপার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রকল্প থেকে ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি ফেরত চাওয়া হয় ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৯১৯ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ডিজঅ্যাবেলিটি অ্যান্ড চিলড্রেন অ্যাট রিস্ক প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ২০১৪ সালে ফেরত চাওয়া হয় ১৭ হাজার ৯৬০ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১৩ লাখ ৪০০ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ফেরত চাওয়া হয় ৩০ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ফেরত চাওয়া হয় ১৭ হাজার ৪৫০ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৫ সালে ফেরত চাওয়া হয় ৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৯০ টাকা। এ ছাড়া উইল্ড লাইফ প্রটেকশন প্রকল্প থেকে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ফেরত চাওয়া হয় ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৯৭৫ টাকা।
ইআরডির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, অনিয়ম তো অনিয়মই। এ ক্ষেত্রে ছোট বা বড় বলে কিছু নেই। সরকারি তহবিলের অর্থে বাস্তবায়িত প্রকল্প হলে কর্মকর্তারা নানাভাবে ফাঁকফোকর গলিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন। মনে করা হয়, অল্প টাকার বিষয় তাই অনেক কিছুই ছাড় দেয়া হয়। কিন্তু উন্নয়নসহযোগীদের টাকার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হলেই আর ছাড় দেয়া হয় না। কেননা তাদের মতে, অল্প টাকা হলেও তা জনগণের করের টাকায় সরকারকে পরিশোধ করতে হয়।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কেননা প্রকল্পে অনিয়ম হলে যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয় তার কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না। যত কম টাকাই হোক এরকম ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটতে থাকলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পলিসি গ্রহণে নতুন করে ভাবতে পারে। এর আগে দুর্নীতির কারণে পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। সেরকম পরিস্থিতি কারও কাম্য নয়।’
প্রসঙ্গত, এর আগেও বেশকিছু প্রকল্প থেকে টাকা ফেরত চেয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইমপ্র“ভমেন্ট প্রজেক্ট, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রজেক্ট-২, ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রকল্প, হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি ইমপ্র“ভমেন্ট প্রজেক্ট, সেকেন্ড রুরাল ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট এবং রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রজেক্ট। এসব প্রকল্পে টাকা ফেরত দিতে দেরি হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে অর্থ প্রক্রিয়াকরণ বাধাগ্রস্ত করার হুমকিও দেয়া হয়।