বিশ্বাস হারিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী
গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভ চলছে। এরই মধ্যে সেখানকার সাংবাদিকরা বলছেন, ইসরাইলি বাহিনী তাদের টার্গেট করে গুলি করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ছয়শ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে ৩০ জন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে ইয়াসির মুরতাজা নামের একজন ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিকও রয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, আরো নয়জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।এই নয়জনই বিক্ষোভের সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সে কারণে তাদের অভিযোগ, ইসরাইলি সেনারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকে ইসরাইলের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ চিকিৎসাকর্মী।ইসরাইলের পতাকা জ্বালিয়ে দিয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়ানোর মধ্য দিয়ে ভূমি দিবস উপলক্ষে টানা বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি ছোঁড়েই চলছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। আহত বিক্ষোভকারীদের শুশ্রুষার জন্য খান ইউনিস সীমান্তের কাছে একটি ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে ইসরাইলি সেনারা। তাতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ চিকিৎসাকর্মী। গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া টানা ৬ সপ্তাগের কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত ও অন্তত ২ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ৩০ মার্চ ছিল ভূমি দিবস উপলক্ষে ফিলিস্তিনিদের টানা ৬ সপ্তাহের বিক্ষোভের প্রথম দিন। এদিন গাজার ইসরাইল সীমান্তের ছয়টি স্থানের বিক্ষোভে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর গুলিতে ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামের এ বিক্ষোভ চলাকালে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আরও ১৫০০ মানুষ আহত হন। জাতিসঙ্ঘের হুশিয়ারি উপেক্ষা করে পরের সপ্তাহেও গুলি চালানো অব্যাহত রাখে ইসরাইল। সেদিন নিহত হয় সাংবাদিকসহ নয় ফিলিস্তিনি। এছাড়া শুক্রবারের আগেও ইসরাইলের গুলিতে দু’জন ও পরে পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
শুক্রবারের বিক্ষোভের থিম নির্ধারণ করা হয়, ইসরাইলের পতাকা জ্বালিয়ে দিয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা তুলে ধরা। বিক্ষোভ দেখানোর পাঁচটি স্থানের প্রত্যেক স্থানেই জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য ২৫ মিটার দীর্ঘ ইসরাইলের পতাকা বানানো হয়। ইসরাইলের সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বিগত ঘণ্টায় ইসরাইলের সীমান্ত বেড়ায় বেশ কয়েকবার হামলার চেষ্টা চালিয়েছে ফিলিস্তিনিরা। প্রতিরক্ষা অবকাঠামো রক্ষার নীতি অনুযায়ী তাদের ওপর গুলি ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অভিযোগ, তারা সহিংসতাকে আড়াল করতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। ২০০৮ সালের পর হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। সীমান্ত বেড়ার ক্ষতি কিংবা অনুপ্রবেশ সহ্য করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইল দাবি করেছে, বিক্ষোভকারীরা বেড়া ভেঙে অনুপ্রবেশ করতে চাইছে। ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের জবাবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বিমান ব্যাপক হামলা ও গোলাবর্ষণ করছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করে স্নাইপাররা তাজা গুলি ব্যবহার করে যাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যেটার ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিক্ষোভ চলাকালে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বসতভিটা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন তারা পূর্বপুরুষদের সেই ভিটামাটিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবি করছেন।