বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচন: নিরপেক্ষতা নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের আশঙ্কা
লন্ডন থেকে মোহাম্মদ বাবুল হোসেন:
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসী। গত ১০ এপ্রিল সোমবার পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সভায় বক্তারা বলেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ স্থানীয় আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের তোয়াক্কা না করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন আউটসাইডারকে ধরে নিয়ে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। অযোগ্য ওই ব্যক্তির নির্বাচিত হওয়া বিয়ানীবাজারবাসীর জন্য সুখকর হবে না বলে তারা মন্তব্য করেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, মন্ত্রী হওয়ার সুবাধে প্রভাব খাটিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ তাঁর নিজের গ্রামের এক বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে বিয়ানীবাজারের পরীক্ষিত নেতা বর্তমান পৌর প্রশাসক শহীদ সন্তান মোহাম্মদ তোফজ্জুল হোসেন নির্বাচিত হবেন। যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
মোহাম্মদ তোফজ্জুল হোসেন বিয়ানীবাজার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এলাকায় তিনি অত্যন্ত জিনপ্রিয় প্রতিনিধি হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। মোহাম্মদ তোফজ্জুল হোসেনের সমর্থনে সোমবারের ওই সভার আয়োজন করে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিয়ানীবাজার পৌরবাসী। ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা মাতাব চৌধুরী ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাবির আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন রাজনীতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার বিশিষ্টজনরা এতে উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলার মেয়র হিসেবে মোহাম্মদ তফজ্জুল হোসেনকেই দেখতে চান তারা। তফজ্জুল হোসেনের পক্ষে দেশের ন্যায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিয়ানীবাজার পৌরবাসীর মধ্যেও বেশ সাড়া পড়েছে।
বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় রাজাকারদের ইন্ধনে পাক বাহিনীর হাতে পিতা ও এক ভাইকে হারান তোফজ্জুল হোসেন। তাঁর পরিবার আজীবন আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর এই পরিবার আবারও নানা জুলুম অত্যাচারের শিকার হয়। ১৯৭০ এর দশকের স্মৃতিচারণ করে বক্তারা বলেন, তোফাজ্জল হোসেনের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহভাজন। ছিলেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। যেসব স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় তফজ্জুল হোসেনের বাবা ও এক ভাইকে হত্যা করিয়েছিলেন, তারাই ১৯৭৮ সালে আরেক ভাই মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনকে হত্যা করান। কাজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ তফজ্জুল হোসেন ও তাঁর পরিবার যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে সমাজ সেবায় কাজ করছেন- এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বক্তারা বলেন, বিয়ানীবাজার পৌরসভায় সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নেতা তফজ্জুল হোসেনই নির্বাচিত হবেন। তারা বলেন, নুরুল ইসলাম নাহিদের লোকজনের আচরণ ও অপকৌশলের কারণে ইতিমধ্যে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।নির্বাচনে যে কোনো প্রকারের প্রভাব খাটানো থেকে বিরত থাকার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের প্রতি আহবান জানানোর পাশাপাশি তাঁরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানান। বিগত উপজেলা নির্বাচনে নুরুল ইসলাম নাহিদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কেন্দ্র দখলেরে যে ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়- সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তারা।
উক্ত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম খান, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান, সাবেক ব্যাংকার আবদুল ওয়াদুদ খান, কমিউনিটি নেতা আশিক আহমদ পুতুল, আবদুর রউফ, আব্দুল খালিক, আব্দুল বারি তেরা, নিজাম উদ্দিন, জাসদ নেতা হাজি সমির উদ্দিন, শামীম আহমদ, হাজি ফখরুল ইসলাম, সাবেক প্রভাষক জয়নুল হক, খায়রুল আলম মজুমদার বকুল, হাজি আলাউদ্দিন, যুবনেতা রাহুল রহমান ও কয়সর আহমদ প্রমুখ।