বৃটিশ ভিসা জালিয়াতিতে ফেসে গেলেন ২ বাঙ্গালী
কাজ করতেন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (হোম অফিস) অভিবাসন বিভাগে। এই সুবাদে জালিয়াতি করে ৪৩৭ জনকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামসু ইকবাল (৬১)। সহযোগী ছিলেন আরও তিনজন, যাদের একজন বাংলাদেশি এবং অপর দুজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। গত বুধবার যুক্তরাজ্যের ক্রয়ডন ক্রাউন কোর্ট চারজনকেই জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। আগামী সপ্তাহে এদের সাজা ঘোষণা হবে। আদালতের শুনানিতে বলা হয়, শামসু ইকবাল তাঁর কাজের সুবাদে অভিবাসীদের তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করতে পারতেন। স্থায়ী বাসের অনুমোদন আছে এমন ব্যক্তিদের তথ্য ব্যবহার করে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের ভুয়া ভিসা বানিয়ে দিতেন। এতে সংশ্লিষ্ট অবৈধ অভিবাসী একটি নতুন পরিচয়ে হোম অফিসের কাছে চিহ্নিত হতেন। প্রায় তিন বছরের তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট ৪৩৭টি জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করেছে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সালে এপ্রিলের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটেছে। শুনানিতে বলা হয়, ডাকাতির অভিযোগে ঘানা থেকে আসা এক বৈধ অভিবাসী জেলে আছেন। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই ব্যক্তির হোম অফিসে সংরক্ষিত তথ্য পাল্টে দিতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় জালিয়াত চক্র। শামসু ইকবালের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী (৪৮) এবং দুই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত শেখ মোহাম্মদ ওসমান (৪৫) ও মোহাম্মদ খাওয়ার আফতাব হোসেন (৪৯)। এরা তিনজনই অভিবাসনবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। এই তিনজন গ্রাহক সংগ্রহ করত আর শামুস ইকবাল তথ্য বদলে দেওয়ার কাজটি করতেন। শামুস ইসলামের বেতন ছিল বছরে ২৩ হাজার পাউন্ড। কিন্তু তাঁর ব্যাংক হিসাবে পাওয়া যায় নগদ ১০ লাখ পাউন্ডের বেশি। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁরা গ্রাহক প্রতি ১৪ হাজার পাউন্ড নিতেন। এই অর্থ তাঁদের চারজনে মধ্যে ভাগ বাঁটোয়ারা হতো। চক্রটি এ পর্যন্ত ৬০ লাখ পাউন্ডের বেশি হাতিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা। যার বেশির ভাগ অংশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও দুবাইতে পাচার হয়ে গেছে বলে মনে করছে তদন্তকারীরা। হোম অফিসের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, এই চক্র হয়তো আরও অনেককেই স্থায়ী বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা কখনো জানা সম্ভব হবে না। হোম অফিসের পরিসংখ্যানবিদরা বলছেন, জালিয়াতির মাধ্যমে বৈধ বাসিন্দা হিসেবে অবস্থান করা অভিবাসীরা যদি গত ছয় বছর বেনিফিট (সরকারি কল্যাণ সুবিধা) নিয়ে থাকেন, তবে এতে করদাতাদের সম্ভাব্য ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ পাউন্ড।